প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৬ ডিসেম্বর ২০২১, সোমবার
করোনা ভাইরাস ২০১৯ এর ডিসেম্বর থেকে এখন অবধি তার রুপ দেখিয়ে চলেছে। সময়ের সাথে সাথে অন্য সব ভাইরাসের মতো করোনা ভাইরাসের পরিবর্তন বা মিউটেশন হয়েছে।
WHO করোনার ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন (VOC) হিসেবে এখন পর্যন্ত ৫ টি ভ্যারিয়েন্টকে ঘোষণা দিয়েছে যেগুলো হলোঃ
আলফা
বিটা
গামা
ডেলটা
ওমিক্রন
ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন (VOC) ঘোষণা মুলত দেয়া হয় কয়েকটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রেখে। যেমন- তীব্র অসুস্থতার আশঙ্কা, পুনঃ সংক্রমণের সম্ভাবনা, বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা। এছাড়া কিছু ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট (VIC) ও আছে।
Alpha ভ্যারিয়েন্ট (B.1.1.7) নভেম্বর ২০২০ এ ১ম লন্ডনে পাওয়া যায়। স্পাইক রিজিয়নে বেশ ১/২ টি মিউটেশন আছে।
Beta ভ্যারিয়েন্ট (B.1.351) অক্টোবর ২০২০ এ ১ম দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া যায়। স্পাইক রিজিয়নে বেশ কয়টি মিউটেশন আছে। K417N, E484K, N501Y, L18F, D80A, D215G, R246I, A701V.
স্পাইক ছাড়াও আরও কিছু মিউটেশন যেমন K1655N, SGF 3675-3677 deletion, P71L, and T205I আছে।
Delta ভ্যারিয়েন্ট (B.1.617.2) প্রথম ভারতে পাওয়া যায়। স্পাইক রিজিয়নে D614G, T478K, P681R and L452R মিউটেশন আছে।
Delta Plus ভ্যারিয়েন্ট – K417N মিউটেশন ডেল্টার সাথে যুক্ত হয়ে এই ভেরিয়েন্টটির আবির্ভাব হয়েছে। বিটা ভেরিয়েন্ট-এ ও এই মিউটেশন পাওয়া যায়।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট B.1.1.529 বা ওমিক্রন। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট আগের থেকেও অনেক বেশি সংক্রামক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। এই ভ্যারিয়েন্টটিতে ৫০ টির মত মিউটেশন রয়েছে, যার ২০টিই আছে স্পাইক প্রোটিনে। স্পাইক প্রোটিনের যে অংশ মানব কোষের সাথে bind করে সে অংশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের রয়েছে ২ টি মিউটেশন কিন্তু ওমিক্রনে আছে ১০ টি মিউটেশন।
অনেকেই ভাবছিলেন আমাদের দেশে যে পিসিআর কিটগুলি ব্যবহৃত হয়, তা দিয়ে ওমিক্রন কে শনাক্ত করা যাবেনা। কিন্তু আমাদের দেশে কিছু কিট আছে যা দিয়া শনাক্ত করা সম্ভব। তার মধ্যে রয়েছে-
𝙏𝙖𝙧𝙜𝙚𝙩 𝙜𝙚𝙣𝙚 𝙖𝙣𝙙 𝙋𝘾𝙍 𝙠𝙞𝙩 𝙣𝙖𝙢𝙚
1. Rdrp,S,N,E- seegene Allplex™ SARS-CoV-2 Assay
2. Rdrp,N,S,MS2(ic)- TaqPath™ COVID-19 CE-IVD RT-PCR Kit
3. Rdrp,N,S,E-Molgen SARS CoV2 real time RT-PCR kit
এই তিনটি কিটই বাংলাদেশে পাওয়া যায় আরো আগে থেকেই। সুতরাং আমরা যদি এই কিটগুলি দিয়ে পিসিআর করি, এবং S gene কার্ভ undetectable থাকে, কিন্তু বাকি জিন এর কার্ভ detectable থাকে, তাহলে আমরা খুব সহজেই প্রাথমিক ধারনা পাবো সেই ব্যক্তি ওমিক্রন দিয়ে আক্রান্ত। পরবর্তী কনফার্মেশনের জন্য অবশ্যই আমরা সিকুয়েন্সিং করবো। যেহেতু সিকুয়েন্সিং একটি সময় সাপেক্ষ কাজ, সুতরাং পিসিআর দিয়ে যদি এটুকু বুঝা যায়, আমাদের দেশের জন্য এটাই অনেক।
বিমান বন্দরে এখন পিসিআর ল্যাব আছে, সেখানে যেকোন দেশ (অলরেডি অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে) থেকে আসলেই টেস্ট করলে আমরা দেশে ওমিক্রন ঢুকলেও খুব দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবো। সাউথ আফ্রিকাসহ সাত দেশ (বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, ঘানা, লেসোথো, নামিবিয়া, সাউথ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে) থেকে বাংলাদেশে আসলে ১৪ দিন হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ২ ডিসেম্বর রাতে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এই দেশগুলো থেকে আসলে ১৪ দিন নিজ খরচে হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সেখানে সাত দিন পর এক বার এবং ১৪ দিন পর আবার করোনা পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার খরচ যাত্রীকেই বহন করতে হবে। ফ্লাইটে উঠার আগেই সরকার নির্ধারিত হোটেল বুক করতে হবে। হোটেলে সপ্তম দিনে করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসলে আলাদা করে আইসোলেশনে পাঠানো হবে। নেগেটিভ রিপোর্ট আসলে হোটলে বাকি সাত দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। ১৪তম দিনে নেগেটিভ রিপোর্ট আসলে যাত্রী নিজের বাড়িতে যেতে পারবেন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নাই, সুতরাং এটা মেনে চলার পাশাপাশি যারা এখনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেনি, করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত জটিলতা থেকে বাঁচতে দ্রুততম সময়ে ভ্যাক্সিন নিয়ে নিন। সঠিক নিয়মে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ভ্যাক্সিনেশনের মাধ্যমে করোনার নতুন রুপ “ওমিক্রন’’ মোকাবেলা করা সম্ভব।
ডা. আরিফা আকরাম
সহকারী অধ্যাপক, ভাইরোলজি
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টার
সদস্য, মনিটরিং কমিটি
এয়ারপোর্ট পিসিআর ল্যাব