রুদ্র মেহেরাব
সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ
৪র্থ বর্ষ
১৩ তম ব্যাচ
অ্যাসপিরিন । এই শব্দটির সাথে পরিচিতি নেই কিংবা এই ওষুধটির নাম শোনে নি – এমন মানুষ পাওয়া বোধহয় দুষ্কর । মাথা ব্যাথা কিংবা জ্বর হলে আমরা হর-হামেশাই ফার্মেসি থেকে খরিদ করে নিয়ে আসি। তো চলুন জেনে নেয়া যাক ব্যাপক জনপ্রিয় এই ড্রাগটির জন্মকথা ।
খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ এর আগেকার কথা । প্রসবকালীন মায়েদের ব্যাথা প্রাচীন হিপোক্রিসদের মনে দাগ কাটলো । মায়েরা সন্তান ভূমিষ্ঠ করতে গিয়ে কি কষ্ট ই না সহ্য করতেন ! অনেকে সেই ধাক্কা সামলাতে পারতেন না । পরপারে চলে যেতেন । হিপোক্রিসরা মায়েদের মুক্তি দেবার পথ খুজতে লাগলেন । অবশেষে সন্ধান মিললো এক আশ্চার্য গাছের । নাম Willow Tree। এই গাছের বাকল সেবনে একে একে সমাধান হতে লাগলো জ্বর থেকে শুরু করে যাবতীয় সকল রকমের ব্যাথা । এমনকি প্রসবকালীন ব্যাথাতেও বেশ কার্যকারী ভূমিকা পাওয়া গেলো এই গাছের । এই কারনেই সেই সময় willow গাছের বাকল দিয়ে এক বিশেষ ধরনের চা বানানো হতো । কারো ব্যাথা কিংবা জ্বর এলে খাইয়ে দেয়া হতো । বিশেষকরে প্রসূতি মায়েদের । Willow এর বাকলে রয়েছে Salicylic Acid – যেটা Pain Killer হিসেবে কাজ করতো । তবে হিপোক্রিসরা হয়তো জানতো না যে তাদের ও আগে মেসোপটেমীয় যুগে প্রাচীন মিশরীয়রা Willow গাছের বাকলকে ব্যাথানাশক হিসেবে ব্যাবহার করে গিয়েছেন।
‘The Ebers Papyrus’ নামক এক Egyptian Medical বইতে Willow এর Anti Inflamatory Action এবং Pain Relieving এর কথা স্পষ্ট লিখা রয়েছে । তারমানে – এসপিরিন কেবল আধুনিক সভ্যতার ড্রাগ নয় । পরোক্ষভাবে বহুকাল আগে থেকেই এটির ব্যাবহার ছিলো ।
১৭৬৩ সালে এডওয়ার্ড স্টোন লন্ডনের রয়েল সোসাইটি থেকে একখানা গবেষনা পত্র বের করেন । তিনি তার গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেন যে Willow বাকলের ড্রাই পাউডার Antiinflamatory Agent হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ Willow Bark জ্বর , ব্যাথা এমনকি Inflamation এর মেজর চারটি সাইনের( Redness, Swelling, Pain, Temperature) উপর ও কাজ করে। দীর্ঘ পাচ বছর হাজারখানেক মানুষের উপর পরিক্ষা চালিয়ে তিনি তার গবেষনা পত্র লিখেছিলেন ।
১৮২৮ সালে মিউনিখ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মিস্টার জোসেফ বাঙ্কার সর্বপ্রথম Willow Bark থেকে এর Active ingredient টা কে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছিলেন । তিনি এর নাম রাখেন স্যালিসিন ( Salicin) . এই স্যালিসিনকে প্রথমবারের মতো ক্লিনিকাল ট্রায়ালে আনা হয় ১৮৫৮ সালে । তবে তার আগে ছোট একটি কাজ করা হয়েছিলো নিরীহ স্যালিসিনের উপর । এটির ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর জন্য এর সাথে একটি অ্যাসিটাইল গ্রুপ এড করা হয়েছিলো। ফলে এর চূড়ান্ত রূপ দাড়ায় অ্যাসিটাইল স্যালিসাইলিক এসিড (AcetylSalicylic Acid ) । এই কাজটি প্রথমে করেন চার্লস ফ্রেডরিখ এবং পরবর্তীতে আরো একটু পরিশোধিত করেন “বেয়ার” নামক একটি জার্মান ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি।
১৮৯৯ সালে বেয়ার এক ঐতিহাসিক কাজ করে ফেলে । তারা অ্যাসিটাইল স্যালিসাইলিক এসিড কে- ‘এসপিরিন(Aspirin)’ নাম দিয়ে ফেলে । যেখানে A For Acetyl , ‘spir’ For ‘Spiraea ulmaria’ (স্যালিসিন পাওয়া যায় এমন এক গাছ) ‘in’ হচ্ছে সেই সময়ে ড্রাগের নামকরনে ব্যবহৃত হওয়া একটি Suffix .
১৯৫০ সালে এসপিরিন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পেইন কিলার হিসেবে গিনিজ বুকে নাম লিখায়।
১৯৭১ জন ভেইন এসপিরিনের Mechanism Action আবিস্কারের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন ।
সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি চিকিৎসা শাস্ত্রের এক নির্ভরতার নাম Aspirin .