গতকাল ৯ এপ্রিল দুপুর ১২ টা নাগাদ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আবারো ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে এক রোগীর স্বজন।
৮ এপ্রিল রাত ৮টায় বিকেলে ভর্তিকৃত এক শিশু রোগীর স্বজন কর্তব্যরত নার্সের কাছে আসলেন। বাচ্চাটিকে একজন ইএনটি (নাক-কান-গলা) বিশেষজ্ঞের চেম্বারে দেখানো হয়েছিল, যিনি বর্তমানে সরকারি চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি রোগীটি দেখার পর প্রথমে প্রাইভেট হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে সদর হাসপাতালে ভর্তির জন্য পরামর্শ দেন। রোগীর স্বজন সেই ডাক্তার সম্বন্ধে নার্সের কাছে জানতে চাইলে নার্স কিছু জানাতে পারেন নি। কারণ তিনি এখানে নতুন নিযুক্ত এবং সেই ডাক্তারও এখন অবসরপ্রাপ্ত। এবারে রোগীর সেই স্বজন নার্সের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনভাবে বসে বসে টাকা খাওয়ার অভিযোগ করে। অবশ্য নার্স তার কোন প্রত্যুত্তর দিলেন না। বাচ্চাটির চিকিৎসা তার গতিতেই চলল।
পরদিন সকালে শিশুটির অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। এতেই রোগীর স্বজন ক্ষিপ্ত হয়ে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে দায়িত্বরত এক সহকারী অধ্যাপকের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করে। পাশে থাকা এক ইন্টার্ন ডাক্তার ওনাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে শিশুটির (২) কানের ভেতরের মধ্যাংশের পচনশীল সংক্রমণ হয়েছে সাথে কানের আশেপাশের চামড়ায় ‘সেলুলাইটিস’ এবং একই সাথে ‘নিউমোনিয়া’। বাচ্চাটির অপারেশন প্রয়োজন আর তাই উন্নত চিকিৎসার জন্যই তাকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু উত্তেজিত স্বজন কিছু বোঝার চেষ্টা না করেই ডাক্তারদের সাথে আঙুল তুলে কথা বলতে থাকে।
মহিলা ওয়ার্ডে বাইরের কোনো পুরুষ লোকের থাকার নিয়ম নেই বিধায় পাশের ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার এসে ওনাকে আলাদা কক্ষে নিয়ে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন যে শিশুটির চিকিৎসা প্রকৃতপক্ষেই কক্সবাজারে সম্ভব নয়। কিন্তু লোকটি বার বার এসে রাউন্ডে বাধা দিতে থাকে, কিছু অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে এবং নানারকম হুমকি ধামকি দেয়। ফলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলে সহকারী রেজিস্ট্রার ওয়ার্ড তালাবদ্ধ করে লোকটিকে আলাদা রুমে নিয়ে যান। এবং আইনী সহায়তা চান।
কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইল কোর্ট আসে। মাননীয় ম্যাজিস্ট্রেট সবকিছু শুনে বলেন, এটি ফৌজদারি অপরাধ এবং মোবাইল কোর্টের অপরাধের যে পরিধি, এটি তার চেয়েও বেশি। ফলে লোকটিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এত বিরুপ পরিস্থিতিতেও কোনো চিকিৎসক কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে। মাননীয় ওসি মহোদয় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা যোগ্য ব্যক্তিদের সম্মান দিতে জানিনা। কক্সবাজারবাসীর দুর্ভাগ্য তারা বারবার এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে।”
তথ্যসূত্র:
ডাঃ শাহেদুল ইসলাম শার্দুল
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার:
সামিউন ফাতীহা
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর