প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ ই আগস্ট, মঙ্গলবার, ২০২০
ডা. আফরোজা আকবর সুইটি
সহকারী অধ্যাপক
ভাইরোলজি বিভাগ,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
করোনায় বৃদ্ধ বাবা-মা যাতে আক্রান্ত না হন, তাই সতর্কতা হিসাবে ডাক্তার সন্তানটি গত চার মাসেরও বেশি তাদের থেকে দূরে অবস্থান করছেন। ফোন এ কথা বলাই একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। এভাবে চলাই যেন স্বাভাবিক, সময়ের সাথে জীবন বয়ে যায় নিরন্তর!
করোনা প্রকোপ একটু কমেছে হয়তোবা। ঈদ সামনে সেজন্য কি সবাই অন্তর্মুখী! কেউ কেউ নানাবিধ খবরের খপ্পরে পরে টেস্ট করতে আগ্রহী নন। যাই হোক না কেন! ডাক্তারের তো ডিউটি মুক্তি নেই। এত্তো রিস্ক নিয়ে কাজ করতে হয়। বাবা-মায়ের সাথে একবেলা একসাথে খাওয়া দাওয়া করতে ইচ্ছে হয় ভীষণ! এবার ঈদটা একসাথে করার সব চিন্তা করাই যায়। কি পোড়া কপাল! এক সপ্তাহ আগেই মায়ের হঠাৎ কাশি অল্প জ্বর। কিছু হয় নি বলে এড়িয়ে তো যাওয়া যায় না এই করোনা সময়ে! একসাথে ঈদ করা ক্যান্সেল হয়ে গেল।
ডাক্তার হওয়ার সাথে সাথে কিংবা সময়ের কঠিন বাস্তবতায় অবচেতনভাবে অভিনয় রপ্ত করা হয়েছে বেশ। নিজের এত্তোগুলা কো-মরবিডিটি নিয়ে টেনেটুনে বেঁচে থাকার চিন্তার সাথে নতুন চিন্তা। অসুস্থ মায়ের ২য় সপ্তাহটা কেমন কাটে দূরে থেকেও সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণ! সুস্থ আছেন তবুও সাবধানতা অবলম্বন, কোয়ারেন্টাইন পালন। ঈদ পার হলো কিন্তু সামনাসামনি দেখা হয় না। আর নিজেকে ধরে রাখা যায় কি!
হঠাৎ করেই বেরিয়ে পরা। আজ বাবা-মা কে দেখতেই হবে। ওহ্! সময়ের কি কঠিন বাস্তবতা! বাসার সামনে গিয়ে ফোন করা, যেন মা বারান্দায় এসে একটু দাঁড়ান। তাকে দেখতে নিচে দাঁড়িয়ে থাকে তার অকর্মা ডাক্তার সন্তান। মা তো এর মধ্যেই একটা সুন্দর শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন। এমন দেখাদেখি বাবা-মা আর সন্তান এর! কি রকম একটা হিসাব নিকাশ! যদি মা আক্রান্ত না হন আর ডাক্তার নিজেই যদি আ্যসিম্পটোমেটিক ক্যারিয়ার হন – সন্তান থেকে মা আক্রান্ত হতে পারেন! আবার যদি মা আক্রান্ত হন তো তার থেকে ঐ ডাক্তার আক্রান্ত হতে পারেন! এমন সময় ও এলো যার কল্পনা করে নি কেউ।
করোনা নিয়ে যাদের কোন চাক্ষুষ জ্ঞান নেই, তারাই হু কেয়ারস! যাদের জ্ঞান আছে তারাই ভয়ে শেষ! কারণ তারাই করোনাতে উচ্চ পর্যায়ের থেকে নিম্ন পর্যায়ের বা ক্ষমতাশালী থেকে ক্ষমতাহীন মানুষের মৃত্যু দেখেছেন! স্বাক্ষী হয়েছেন শেষ সময়ের কষ্টগুলোর!
সমাজ, জাতি কিংবা দেশ কেউ মনে রাখবে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে সে আশায় নয় বরং নিজের পেশার প্রতি কতটা ডেডিকেশন, রেসপেক্ট এর জন্য করোনা কালে একেকজন ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এভাবে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সময় পার করছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই! স্যালুট জানাই তাদের সবাইকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, হেদায়েত দান করুন। অকল্যানকারী মানব-দানবের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন।