প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৮ মে, ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. মৃণাল সাহা
৩৮ তম ব্যাচ
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ
বাংলাদেশে প্রতিদিন বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা। এ দুর্যোগকালীন সময়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়ঃ
* বড় বড় হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড করতে পারলে লাভ হতো। যেসব হাসপাতালে সিট কম কিংবা লোকবল কম সেগুলোকে কোভিড ডেডিকেটেড করে লাভ নেই। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের বিকল্প কিছু নেই৷
* ডাক্তারদেরকে পিপিই পরা ও ডিসপোজ করায় আরো বেশী সচেতন হতে হবে। একা নয় পিপিই পরা এবং খোলার সময়ও একজন এটেনডেন্ট থাকা অবশ্যই উচিত৷ রি ইউজেবল পিপিই এর ব্যপারে একটা ভালো গাইড লাইন দরকার৷ মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই কথা৷ যে যার মতো ব্যবস্থা নিলে কিন্তু হবে না।
* সব খুলে দিলে কেইস বাড়বে এটাই নিয়ম। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এই দেশে অনেক কঠিন, তবুও এটাই একমাত্র নির্ভরযোগ্য সর্তকতামূলক ব্যবস্থা। সেই সাথে বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া৷ হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা এলকোহলসমৃদ্ধ কিছু কিছু প্রোডাক্ট এর কোয়ালিটি নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তাই ঝুঁকি না নিয়ে সময় সুযোগ থাকলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পরও হাত সাবান দিয়ে ধোয়াটা উপকারী হবে৷
* অযথা প্যানিক হওয়া যাবে না। যে কেউ আমরা যেকোন দিন অসুস্থ হতে পারি। নিজের প্ল্যানিং নিজেই করে রাখি৷ পরিবার নিয়ে অযথা শঙ্কিত না হই৷ স্রষ্টার উপর ভরসা রাখার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, আমাদের সবার জন্য উত্তম পন্থা প্রদানের মালিক একজনই। আর সেটা তখনই হবে যখন আমরা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করবো।
* করোনা মানেই মৃত্যু, এই ধারণা একদম ভুলে যেতে হবে। আবার করোনা একেবারেই সাধারণ কিছু, সেটাও ভাবা যাবে না৷ অনেক গুলো জার্নাল দেখে যতটুকু বুঝলাম, কম ঘুম, স্ট্রেস, প্যানিকড হওয়া- এইসব কারণে সিম্প্যাথেটিক এক্টিভিটি বাড়লে সাইটোকাইন স্ট্রমের সময় আরো বেশী ব্রংকোকনস্ট্রিকশান হয়। ফলে স্যাচুরেশান ফল করে এবং কার্ডিয়াক কো মরবিডিটির রিস্কও বেড়ে যায়৷ আমি অনেক কথাই বলতে পারি, কিন্তু আমার নিজের হলেও নার্ভ ধরে রাখতে পারবো কীনা আমার জানা নাই। কাজেই, বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখা এবং মনে সাহস রাখাও একটা অনুশীলনের ব্যাপার৷
* অক্সিজেন, অক্সিজেন, অক্সিজেন – যথাযথ অক্সিজেনের ব্যবহার আমরা অনেকেই জানি না৷ হাই ফ্লো অক্সিজেন দেওয়ার নিয়ম আছে, আর বিভিন্ন ইন্সট্রুম্যান্টও আছে৷ আমি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে এই বিষয়ে পারফেক্ট নই। কাজেই, অক্সিজেন এর যথাযথ ব্যবহারের জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শই এখানে চূড়ান্ত। টেলিমেডিসিন আর ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে ৪ লিটার এর বেশী অক্সিজেন দেওয়া কঠিন।
* পরিবারের বয়স্ক ও শিশুদের থেকে কিছুদিন দূরত্ব বজায় রেখে থাকলে, খারাপ কিছুর সম্ভাবনা কমবে।
* হাসপাতালে গ্রীন, ইয়েলো আর রেড জোন থাকা আবশ্যক। সেইভাবে, হাসপাতালের লোড কমাতে মৃদু উপসর্গের রোগীদের বাসায় চিকিৎসা (সুপারভাইজড) দেওয়া যেতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস৷ অহেতুক আই সি ইউ বেড দখল করে রাখা কোন ভাল কাজ নয়৷ টেস্ট করার জন্য লম্বা লাইন দিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে লাভ নেই। যদি আপনি নিশ্চিত হন, তবে ডাক্তার দেখিয়ে টেস্ট করান। চেক আপ ছাড়া অহেতুক টেস্ট এর দরকার নেই।