প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ নভেম্বর, ২০২০, রবিবার
সারা দেশে যখন করোনা রোগী বেড়েই চলেছে, তখন করোনা মহামারিতে দেশজুড়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখতে নিজেদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে রেখেও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন সম্মুখ সারির যোদ্ধা চিকিৎসকরা।
ডা. নাঈমা সিফাত কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক। তিনি চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি একজন মা। কক্সবাজারের টেকনাফে করোনায় আক্রান্ত প্রথম নারী চিকিৎসক তিনি।
গত ২৫ এপ্রিল ডা. নাঈমা সিফাত প্রথমবারের মত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ সময়কালে তিনি তাঁর স্বামী ও সন্তান থেকে আলাদা ছিলেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত সকল প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ এবং নিয়মগুলো মেনে চললেও একপর্যায়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে, বাড়তে থাকে শ্বাসকষ্ট। শেষমেষ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকেন ডা. নাঈমা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধাপে ধাপে ৩ বার তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার নেগেটিভ ফলাফল আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৮ মে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেন তাঁকে।
কোভিডমুক্ত হয়ে ২১ মে থেকে ডা. নাঈমা পুনরায় সাহসিকতার সাথে তার কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন এবং রোগীদের চিকিৎসা দিতে থাকেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার ঠিক ৩৬ দিনের ব্যবধানে পুনরায় দ্বিতীয়বারের মতন সংক্রমিত হন তিনি। তবে, এত কিছুর পরেও ডা. নাঈমা পরাজিত হতে দেন নি নিজেকে। চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি পুনরায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং সাত দিনের মাথায় গত বুধবার থেকে পুনরায় সাহসিকতার সাথে এবং নতুন উদ্যোমে হাসপাতালে যোগদান করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছেন।
ডা. নাঈমা বলেন,
“চিকিৎসক হিসেবে কাজে যোগ দিতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, এ পেশার লক্ষ্য মানবসেবা। আমাকে দেখে আরও অনেকে সাহসী হোক।”
ডা. নাঈমার ধারণা তিনি দু’বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। টেকনাফে স্থানীয় মানুষ, বাইরের মানুষ, রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ নানান ধরনের মানুষের আনাগোনা রয়েছে। আবার রোগীদের অনেকের করোনার উপসর্গ থাকলেও চিকিৎসকের কাছে তা গোপন করেন, যা ঠিক নয়। তাই চিকিৎসকদের সংক্রমিত হবার সম্ভাব্য একটি বড় কারণ এটিও হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন,
“করোনায় আক্রান্ত হওয়া দোষের কিছু নয়। তবে ভয় পেলে ক্ষতি আরও বেশি।”
সাহসিকতার সাথে দুইবার করোনা মোকাবেলা করে ফের কর্মক্ষেত্রে যোগদানের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ডা. নাঈমা সিফাতের প্রশংসা ঝরে পড়ল টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র শীলের কণ্ঠে,
“চিকিৎসক নাঈমা অসাধারণ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি দুবার আক্রান্ত হওয়ার পরেও ছুটির কথা বলেননি। কাজে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে স্যালুট জানাই।”
উল্লেখ্য, ডা. নাঈমা সিফাত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের ছাত্রী। ৩৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন তিনি। করোনা মহামারিতে ডা. নাঈমার মতো নাম না জানা দেশের সকল সাহসী ও আত্মোৎসর্গকারী অজস্র চিকিৎসকদের প্রতি প্ল্যাটফর্মের বিনম্র শ্রদ্ধা।