প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১০ আগস্ট, ২০২০, সোমবার
ডা. মো. আবু বকর সিদ্দিক
সহকারী অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগ,
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে– বেশি করে ভিটামিন-ডি গ্রহণ।
ভিটামিন-ডি আমাদের ত্বকে কোলেস্টেরেল থেকে তৈরি হয় যখন আমরা সূর্যের আলোতে যাই। যদি ভিটামিন-ডি এর পরিপূরক গ্রহণ না করা হয়, তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো প্রয়োজন হয়। আবার খুব বেশি সময় সূর্যের আলোতে থাকলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়।
কোন সময় রোদে থাকা সবচেয়ে ভালো?
সর্বাধিক ভিটামিন-ডি পেতে নিজেকে সূর্যের আলোতে রাখার সবচেয়ে সেরা সময় হলো সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা। এই সময়ে অতি বেগুনী রশ্মি-বি (আলট্রা ভায়োলেট-বি) রশ্মিগুলি তীব্র হয় এবং সূর্যের আলো আরও বেশি ভিটামিন-ডি তৈরি করতে সক্ষম। এছাড়া এই সময়ের সূর্যের আলো অন্য সময়ের চেয়ে নিরাপদ। কারণ বলা হয়ে থাকে, কিছু কিছু সময়ের সূর্যের আলো ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
শরীরের কোন অংশে রোদ লাগানো উচিত?
ভিটামিন-ডি ত্বকের কোলেস্টেরল থেকে তৈরি হয়। যার অর্থ হলো ভিটামিন-ডি পেতে আমাদের শরীরের অনেক বেশি ত্বক সূর্যের আলোতে প্রকাশ করতে হবে। ভিটামিন-ডি পেতে বাহু, পা, পিঠ এবং পেট সূর্যের আলোতে রাখা উচিত। তবে পিঠে রোদ লাগাতে ভুলবেন না। কারণ পিঠের ত্বক শরীরে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন-ডি তৈরি করতে পারে। তবে অবশ্যই মুখ ও চোখ রক্ষার জন্য টুপি এবং সানগ্লাস পরতে হবে।
পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি পেতে কতক্ষণ রোদে থাকা আবশ্যক?
হালকা রঙয়ের ত্বকের জন্য ১৫ মিনিট রোদে থাকলেই পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি পাওয়া সম্ভব। এছাড়া গাঢ় রঙয়ের ত্বকের জন্য এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় রোদে থাকতে হতে পারে।
ত্বকের রঙ দেহে ভিটামিন-ডি উৎপাদন যেভাবে প্রভাবিত করে:
আমাদের ত্বকের রঙ নির্ধারিত হয় মেলানিন নামক রঞ্জক দ্বারা। হালকা ত্বকের লোকের তুলনায় গাঢ় ত্বকের লোকেরা বেশি মেলানিন পান। মেলানিন এমন সুরক্ষক হিসাবে কাজ করে যা আপনার ত্বককে অতিরিক্ত সূর্যের আলো থেকে বাঁচায়। এটি প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে অনেকটাই কাজ করে, যা অতি বেগুনী রশ্মি রশ্মি শোষণ করে এবং ত্বককে সানবার্ন এবং ত্বকের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে। এই কারণে ত্বকের হালকা বর্ণের লোকদের কম সময়ে বেশি ভিটামিন-ডি উৎপাদিত হয় এবং গাঢ় বর্ণের লোকেদের বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। এজন্য গাঢ় ত্বকের লোকেদের ভিটামিন-ডি এর অভাব বেশি দেখা যায়।
সানস্ক্রিন ক্রিম কি ভিটামিন ডি’র স্তরকে প্রভাবিত করে?
আমরা ত্বকের ক্যান্সার এবং রোদে পোড়া থেকে আমাদের ত্বককে সুরক্ষিত করতে অনেক সময়ই সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করি। এই ক্রিমে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলিত করে বা শোষণ করে বা ছড়িয়ে দেয়। এটি যখন ঘটে তখন ত্বকটি ক্ষতিকারক অতি বেগুনী রশ্মি-বি এর নিম্ন স্তরের সংস্পর্শে আসে। তবে ভিটামিন-ডি তৈরির জন্য অতি বেগুনী রশ্মি গুরুত্বপূর্ণ এবং সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যের আলো হতে ভিটামিন-ডি উৎপাদন থেকে বিরত রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় যে, এসপিএফ-৩০ (সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর) বা ততোধিকের সাথে সানস্ক্রিন দেহে ভিটামিন-ডি উৎপাদন ৯৫-৯৮ শতাংশ হ্রাস করে। সুতরাং, আপনি যদি সানস্ক্রিন দিয়ে থাকেন, তবে আপনার ত্বকের পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি তৈরি করতে আপনাকে সূর্যের আলোতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হতে পারে।
যদিও সূর্যের আলো ভিটামিন-ডি এর একটি দুর্দান্ত উৎস, তবুও খুব বেশি রোদ আপনার ত্বকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যেমনঃ
- সানবার্ন (রোদে পোড়া)- এটি খুব বেশি সময় রোদে থাকার সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। রোদে পোড়া লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ত্বকে লালভাব, ফোলাভাব, ব্যথা বা ফোস্কা পড়া।
- চোখের ক্ষতি – ইউভি রশ্মির অত্যধিক এক্সপোজার রেটিনার ক্ষতি করতে পারে, যা ছানি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- বয়স্ক ত্বক – রোদে খুব বেশি সময় ব্যয় করলে আপনার ত্বকের দ্রুত বয়স বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিছু লোকের চুলকানি হয় এবং তাদের ত্বক আলগা এবং চামড়াযুক্ত হয়ে যায়।
- হিটস্ট্রোক – এটি এমন একটি অবস্থা, যা খুব বেশি রোদের সংস্পর্শের কারণে শরীরের মূল তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ঘটে।
- ত্বকের ক্যান্সার – অনেক বেশি অতি বেগুনী রশ্মি-বি আলো ত্বকের ক্যান্সারের একটি বড় কারণ।