প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৫ জুলাই ২০২০, বুধবার
করোনা ভাইরাস নাক, মুখ ও চোখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। তাই নাক ও মুখের পাশাপাশি নিতে হবে চোখের যত্ন।
করোনাভাইরাস আপনার চোখকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে?
১) যখন কারোনা ভাইরাসযুক্ত কারো কাছ থেকে হাঁচি, কাশির মাধ্যমে বা কথা বলার সময় ভাইরাসের কণা তাদের মুখ বা নাক থেকে আপনার মুখে চলে আসতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুখ বা নাক দিয়ে এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলি শরীরে প্রবেশ করে। তবে কণাগুলি চোখের মাধ্যমেও আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ভাইরাস রয়েছে এমন কোনও কিছু ছোঁয়ার পরে আপনি আপনার চোখ স্পর্শ করলে সংক্রামিত হতে পারেন।
২) করোনাভাইরাস দ্বারা চোখের সংক্রমণ (কনজাংক্টিভাইটিস) হতে পারে তবে এটি বিরল।
৩) চোখ লাল থাকলে আতঙ্কিত হবেন না, আপনার চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তাদের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। তবে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত চোখ থেকে নিঃসৃত পানি বা আঠালো পদার্থও রোগটি ছড়াতে পারে।
যেসব পরিস্থিতিতে আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেনঃ
১) আপনার ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি থাকলে এবং নিয়মিত চোখের ইনজেকশন দিলে।
২) আপনার দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন(যখন ঝাপসা দেখছেন বা কাছের কিছু দেখছেন না )
৩) আপনার চোখে আঘাত পেয়েছেন, এটি ছোট থেকে বড় যেকোনো আঘাত হতে পারে।
৪) আপনার চোখ লাল হয়ে গিয়েছে বা চোখের ব্যথা হচ্ছে বিশেষত মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় যেভাবে আপনার চোখ নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে পারেন তার কয়েকটি উপায়ঃ
১. আপনি যদি চশমা ব্যবহার করে থাকেন তাহলে চশমাটি জীবাণুমুক্ত রাখুন।
২. কন্টাক্ট লেন্স পরলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে এমন কোনো প্রমাণ নেই। তবে কন্টাক্ট লেন্স পরিধানকারীরা গড়পরতা ব্যক্তির চেয়ে বেশি তাদের চোখ স্পর্শ করেন।
৩. চশমা পরা সুরক্ষার একটি অংশ হতে পারে। লেন্স বা চশমা সংক্রামিত শ্বাস প্রশ্বাসের কণা থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করতে পারে।
৪. ভাইরাসটি চশমার উন্মুক্ত দিক, শীর্ষ এবং তলদেশগুলি থেকে আপনার চোখে পৌঁছতে পারে। আপনি যদি কোনো অসুস্থ রোগী বা করোনা সম্ভাব্য ব্যক্তির যত্ন নিচ্ছেন তবে সুরক্ষা গগলস ব্যবহার করুন। এটি আরও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা দিবে।
৫. বার বার চোখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। এই প্রাকৃতিক অভ্যাসটি ভাঙ্গা কঠিন হতে পারে তবে এটি করলে আপনার সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। আপনি যদি চুলকানি বা চোখ ঘষতে বা এমনকি আপনার চশমাটি সামঞ্জস্য করার তাগিদ অনুভব করেন তবে আপনার আঙ্গুলের পরিবর্তে একটি টিস্যু ব্যবহার করুন। শুকনো চোখে বেশি চুলকানির অনুভূতি হয় তাই চোখের যত্নে ময়েশ্চারাইজিং ড্রপ যুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করুন।
৬. যদি কোনও কারণে চোখে হাত লাগে বা চোখের ওষুধও ব্যবহার করার পর কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড আপনার হাত সাবান এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
করোনার সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক ব্যবহার করার বিকল্প নেই কিন্তু যারা মাস্কের সঙ্গে চশমা পরেন তারা একটা সমস্যায় প্রতিনিয়ত পড়ছেন তা হলো চশমার কাঁচ ঘোলাটে হয়ে যাওয়া। কেননা শ্বাস- প্রশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত বাতাস চশমার কাঁচে গিয়ে জমা হয়। এতে এক পর্যায়ে চশমা ঘোলাটে হয়ে যায়, আর কিছুক্ষণ পর পরই চশমার কাঁচ পরিষ্কার করতে হয় যা খুবই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে চোখে ভাইরাস যাওয়ার আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
তবে কিছু উপায় অবলম্বন করলে চশমা ঘোলাটে হওয়ার সমস্যা এড়ানো যাবে সহজেইঃ
১. সাবান পানি
মাস্ক পরার আগে চশমার কাঁচকে সাবান পানিতে ধুয়ে নিতে পারেন। দ্য রয়েল কলেজ অব সার্জন্স অব ইংল্যান্ডের একজন সার্জন বলেন, সাবান পানিতে চশমার কাঁচ ধুয়ে বাতাসে শুকিয়ে নিলে এতে ঘোলা হওয়া প্রতিরোধ করা যাবে। এর কারণ হলো, সাবান সারফেস অ্যাক্টিভ অ্যাজেন্ট (সারফেক্ট্যান্ট) হিসেবে কাজ করে ও চশমার কাঁচে একটি পাতলা আবরণ সৃষ্টি করে। যা চশমাকে ঘোলাটে হতে দেয় না।
২. শেভিং ক্রিমঃ আরেকটি সহজ উপায় হলো শেভিং ক্রিম। চশমার কাঁচে সামান্য শেভিং ক্রিম লাগাতে পারেন। এরপর শুষ্ক কাপড় দিয়ে আলতো করে ঘষে মুছে ফেলুন।
৩. বেবি শ্যাম্পুঃ ঘরে বেবি শ্যাম্পু থাকলে তো কোনো কথাই নাই। পানিতে কিছুটা শ্যাম্পু গুলিয়ে নিন। এবার এই পানিতে কাপড় ভিজিয়ে চশমার কাঁচ মুছে নিন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪. টুথপেস্টঃ ঘোলাটে চশমা পরিষ্কারের আরেকটি সহজ উপাদান হলো টুথপেস্ট। সামান্য পেস্ট চশমার কাঁচে লাগিয়ে টুথব্রাশ দিয়ে আলতো করে ঘষুন। চশমা পরিষ্কার এবং চকচকে হয়ে উঠবে।
৫. ক্লিনারঃ প্রয়োজনে অ্যান্টি-ফগ ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। চশমার দোকানে এই ক্লিনার পাওয়া যায়। এটির ব্যবহারে চশমা এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত ঘোলাটে হবে না।
তথ্যসূত্রঃ আমেরিকান একাডেমি অফ অপথ্যালমোলোজি
নিউজ ডেইলি বাংলাদেশ