প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৯ই জুলাই, শুক্রবার, ২০২১
মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ব যখন নাজেহাল, তখন দিন দিন পাল্লা দিয়ে যেমন বাড়ছে শনাক্তের হার, তেমনি বাড়ছে মৃত্যু হার। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার এক তরুণ চিকিৎসকের দেওয়া স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলে, যেখানে লিখা ছিল ‘আই শেল নট কন্টিনিউ দিজ প্রফেশন এনিমোর’।
ডা. জাকি উদ্দিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করতেন। কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা না থাকায় কুমিল্লার রেসকোর্সের বাসা থেকে হাসপাতালে আসা-যাওয়া করতেন তিনি। প্রায় ছয় মাসে আগে তিনি, তার ছোট বোন ও বাবা-মা করোনায় আক্রান্ত হন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাদের চার জনকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ওইখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান তার মা গোবিন্দপুর গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহানারা নাসরিন (৫৬)। পরবর্তীতে ডা.জাকি করোনা থেকে সুস্থ হলেও তার প্যারালাইজড বাবা সালাউদ্দিনের (৬৬) বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। বুধবার রাতে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বোনের কাছে বাবার অসুস্থতার খবর শুনে ডা.জাকি দ্রুত হাসপাতাল থেকে বাসায় যান। এরপর কুমিল্লার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন তাঁর বাবা।
ডা. জাকির বাবা সালাউদ্দিনের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মূখীও মশাখালী গ্রামে। সালাউদ্দিন ১৯৮৭ সালে চান্দিনার সাদাত জুট মিলে চাকরির সুবাদে পরিবার নিয়ে কুমিল্লায় স্থায়ী হন। এরপর ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নেন। কিছুদিন ধরে প্যারালাইজড অবস্থায় কুমিল্লার রেসকোর্সের বাসায় ছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বাদ জোহর নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডা.জাকির স্ত্রী সালাউদ্দিন এর পুত্রবধূ ডা. শমরিতা অনন্যা।
ছয় মাসের ব্যবধানে বাবা-মা কে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ডা. জাকি উদ্দিন তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘কোভিড রোস্টারে নাইট ডিউটিতে ছিলাম। আব্বুর অবস্থা খারাপ শুনে আমি ডিউটি থেকে গিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। কিন্তু আটকাতে পারলাম না। জ্ঞান থাকা অবস্থায় বলেছিল, বড় বাবু ব্যবস্থা করবে। আমি আব্বু-আম্মুর খুব সুন্দর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। একদম এতিম হয়ে গেছি ছয় মাসের ভেতর। কোভিড দিয়ে ইনফেকটেড করে মেরে ফেলেছি।
No parents deserve a child like me who kills their parents within six months. I think I shall not continue this profession anymore.’
এ ঘটনায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রেজাউল করিম বলেন, “জাকির বাবা-মা হারানোর ঘটনা বেদনাদায়ক। এখানে কাজ করা সবাই বেশ ঝুঁকিতে আছেন। আমরা সরকারি চাকরিজীবী। মন্ত্রণালয় যেভাবে চাইছে, সেভাবে কাজ করছি। কিছু পরিবর্তনের সামর্থ্য তো আমাদের নেই। আশা করি মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে ভাববে।”