প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ এপ্রিল, ২০২০, বুধবার:
এক অদ্ভুত ক্রান্তিলগ্নে উপস্থিত মানবজাতি। ক্ষুদ্র এক জীবাণুর আক্রমণে বিভ্রান্ত জনপদ। সংক্রামক রোগের আক্রান্তের হার যত বাড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপও তত বেড়ে যায়। প্রাইমারি, সেকেন্ডারি পেরিয়ে টারশিয়ারি লেভেলে রোগী সেবাদান প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যেকোন দেশের জন্য যা খুব কঠিন, বলা যায় অসম্ভব ব্যাপার। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর পরিস্থিতি দেখলে তা স্পষ্ট। আমাদের মত অসংখ্য সীমাবদ্ধতার দেশে এই সেবা শুধু ভাগ্যবানদের জন্য নির্দিষ্ট। এই পরিস্থিতিতে একটা ব্যাপার খুব উপলব্ধি হচ্ছে, শুধু আমাদের দেশে নয় সমগ্র বিশ্বে জনস্বাস্থ্য একটি উপেক্ষিত বিষয়।
“Prevention is better than cure.” জনস্বাস্থ্যের এই অমোঘ বাণী এখন খুবই প্রযোজ্য। রোগ হয়ে গেলে চিকিৎসার থেকে এর প্রতিরোধ সবক্ষেত্রেই কার্যকর ও বাস্তবসম্মত। সেক্ষেত্রে শুধু ব্যাক্তিগত নয়, জাতির আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। টারশিয়ারি লেভেল পর্যন্ত যাতে না যাওয়া লাগে সর্বোতভাবে সে চেষ্টাই এখন করতে হবে।
প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনো খুব দেরী হয়ে যায়নি। এই অদৃশ্য শত্রুকে মোকাবেলা আমরা করতে পারবো। কিন্তু সেক্ষেত্রে শারীরিক/সামাজিক দূরত্ব এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। যার যার অবস্থান থেকে অন্তত এই কাজটি করা এখন সবার ব্যক্তিগত দায়িত্ব। ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়, সুতরাং দূরত্ব বজায় রাখলে এটি সংক্রমিত হবে না। এবং এটি যেহেতু মানব শরীরের বাইরে থাকতে পারবেনা, একসময় তা অবলুপ্ত হবে। হতে পারে তা ১৫ দিন, এক মাস বা আরও বেশি। এই সময়টুকু আমাদের ধৈর্যধারণ করতেই হবে। আর কোনো উপায় নেই। সামনে ফণা তোলা সাপ দেখলে যেমন মানুষ ভয় পেয়ে সরে যায়, এখন আমাদের ভয় পেতে হবে এবং ভয় পেয়ে ঘরে থাকতে হবে।
এখনো যারা অহেতুক ঘরের বাইরে, তারা আইসোলেশনে না থাকলে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। প্রশাসনের এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কঠিন পন্থা অবলম্বন করা আবশ্যক।
এই ঘোর অমানিশা কাটবেই, আলো আসবেই। আমরা সবাই সেই নতুন ভোরের প্রত্যাশায়।
লেখক:
ডা. ফারহানা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
কমিউনিটি মেডিসিন,
শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ