০৭ এপ্রিল ২০২০: মানবসভ্যতা এক অদ্ভুত ক্রান্তিলগ্নে উপস্থিত। উন্নত, উন্নয়নশীল আর অনুন্নত দেশ সব আজ একই কাতারে। যদিও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সামাল দেয়ার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সকালেই দৈনিক পত্রিকায় পড়লাম, এই মহাদুর্যোগের ঘনঘটা আগে থেকেই উপলব্ধি করা যাচ্ছিল। উন্নত দেশগুলো ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাস থেকেই এর পূর্বাভাস পেয়েছিল, কিন্তু তারা এর যথাযথ ব্যাবস্থা নেয়নি। এখন চলছে পারষ্পরিক দোষারোপ আর ষড়যন্ত্রের নানা থিওরি।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের প্রস্তুতি উন্নত দেশের তুলনায় খারাপ নয়। আমাদের সমন্বয়ে ঘাটতি আছে। যারা দায়িত্বশীল ভূমিকায় আছেন, তারা অনেকেই নিজের ক্রেডিট নেয়ার জন্য সঠিক দায়িত্ব যথাযথ পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তারপরও বলব, দেরিতে হলেও সরকার কিছু উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেমনঃ ঢাকাতে ঢোকা ও বের হওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখা এবং সাধারণ ছুটির সময় দীর্ঘায়িত করা। এবং সর্বোপরি মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে উপস্থিতি সীমিত রাখা। সময়োপযোগী একক সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা। আমাদের আশা থাকবে, সমন্বয়হীনতার রাজনীতি থেকে তিনি আমাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিবেন।
যেভাবে প্রতিদিন কেস বাড়ছে, জনস্বাস্থ্য কর্মী হিসাবে আমার পর্যবেক্ষণ আমরা মহামারীর কার্ভের উপরের দিকে যাচ্ছি, যা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাড়তেই থাকবে। অতি আশাবাদী হিসাবে আশা থাকবে, সে বৃদ্ধি যেন দীর্ঘায়িত না হয়।
এখনো সময় আছে, শুধু রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল না থেকে আমরা যেন যে যার জায়গা থেকে নিজস্ব দায়িত্ব পালন করি। যেমনঃ ধৈর্য্য ধরে ঘরেই আবদ্ধ থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি-কাশির শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া। এবং জনসমাগম হয় এমন জায়গা যেমনঃ ধর্মীয় উপাসনালয়, বাজার, চায়ের দোকান ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। এই ভাইরাসটি অতি সংক্রমণশীল এবং এটা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। সুতরাং আমরা যদি পারষ্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারি, সেটাই হবে এই ভাইরাসকে হারানোর একমাত্র উপায়।
আমরা তিনটি প্রজন্ম একটি অভূতপূর্ব সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যারা জীবনের প্রথম মহামারীর ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন। যারা এর থেকে উত্তরন পাবে, তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলবে কি ঘটেছিলো। আমি আশাবাদী, জয় মানুষেরই হবে।
লেখকঃ
ডা. ফারহানা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
কমিউনিটি মেডিসিন,
শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ