বুধবার, ২ জুন, ২০২০
ডা. রোহান খান
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।
শেবাচিমের করোনা ইউনিটের টানা ১০ দিনের ডিউটি শেষ করলাম। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি দেখে অনেকটা হতবাক আমরা। মানুষের ভয় পাওয়া ভীষণ প্রয়োজন।
সিসিইউতে কাজ করার ফলে আকস্মিক মৃত্যু অপরিচিত না। কিন্তু করোনায় দীর্ঘ সময় ধরে তীব্র কষ্টের মৃত্যু প্রচন্ড যন্ত্রনার। শ্বাসের সাথে যুদ্ধ করতে করতে একসময় নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে শরীর। ডাক্তার হিসেবে করার মতো বেশি কিছু থাকছে না!
কিছু কিছু রোগী হাসপাতালে এসে অল্পসময়ের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন। ৩৫ বছরের এক পুলিশ এসে সাথে সাথেই শ্বাসকষ্টে মারা গেলেন। অক্সিজেনের মাত্রা ছিল মাত্র ৫০%।
আবার কিছু রোগীর সাথে কোনো আত্মীয় সাথে থাকতে চায় না, করোনার ভয়ে! কি করবে রোগী! কি করবো আমরা!
ডাক্তার হিসেবে রোগীর কাছে যেতে অস্থিরতা অনুভব হয়। এটা মহামারী, এখানে কেউ নির্ভয়ে থাকতে পারে না। মাস্ক, শিল্ড, পিপিই পরে ৮ ঘন্টা কাজ করা যে কতটা কষ্টকর, তা যারা করছে তারা জানে। আর অন্যরা কখনোই জানবে না। ঠিকমতো হাঁটা যায় না, সিড়ি থেকে পা ফসকে যাচ্ছে, ওয়ার্ডের ভ্যাপসা গরম, অন্যদের কথা কানে আসে না, দম বন্ধ করা মুখ, খাবার খাওয়া যায় না, পানিও না, মানসিক অবসাদ, পারিবারিক দূরত্ব, আক্রান্ত হওয়ার চিন্তা! এত কষ্ট হবে জানলে হয়তো ডাক্তারীই পড়তাম না!
হাসপাতাল ডিরেক্টর স্যার, অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সিনিয়র স্যাররা, নার্সবৃন্দ এবং অন্যান্য কর্মচারীদের এতটা কষ্ট করতে হচ্ছে, তা শুধু আমরাই জানি। এর থেকে বিভীষিকা আর সম্ভব না।
আর ডিউটি শেষে দেখি কেউ রাস্তায় আড্ডা দিচ্ছে, কারো কারো মাস্ক নাই, কেউ ধুমপান করছে। এদের যদি একটু ভেতরে নিয়ে কষ্টগুলা দেখানো যেতো! এরা যেন বেঁচে যায় এবারের মতো!
একটু ভয় পাওয়া দরকার, সবকিছু স্বাভাবিক আছে এই মনোভাব বাদ দিতে হবে। আপনি যে একটু অক্সিজেনের জন্য হাহাকার করবেন না কে জানে! আইসিইউতে গেলে বাঁঁচবেন? কোটিপতিরাও আইসিইউ পাচ্ছে না।
মুখে দাগ পড়া ডাক্তারদের ছবিগুলার পিছনে আছে অনেক কষ্টের গল্প। একটু কষ্ট করে ঘরে বসে থেকে বোর হোন, ব্যস এইটুকুই করেন। করোনার কোনো অব্যর্থ ওষুধ কিন্তু নাই। বিজ্ঞান এখানে অসহায়! সৃষ্টিকর্তাকে ডাকেন অন্তহীনভাবে।