বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০
ডা. রূসামা নুজহাত
রামেক ৫২
দুনিয়ার একগাদা ডিউটির সাথে আরও কি কি সব কাজ-কাম শেষ করে রিকশায় উঠলাম। উদ্দেশ্য বাসায় গিয়ে কোন-রকম ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়বো। তারপর আরাম করে মনোযোগ দিয়ে মোবাইল নিয়ে বসে পড়বো। করোনা-বন্দী জীবনে রিলাক্স করার মতো আর কিইবা আছে!
ইশ! রিকশায় বসেও শান্তি নেই, বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ব্যাগে আজকে ছাতাও নাই। রিকশাওলার পলিথিনটা কি নিব? নেয়াও কি ঠিক হবে? না জানি কতো জন এই একই পলিথিন বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে ব্যবহার করেছে! থাক, লাগবে না আমার পলিথিন! অগত্যা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চুপচুপা হয়েই যাত্রা করলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, গায়ের কাপড় ভিজে ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। বাসার মোটামুটি সামনে এসেই রিকশা থেকে নামলাম।
বৃষ্টির ছিটে দিয়ে চশমা ঘোলা হয়ে গেছে। একহাত দূরেও ঠিকমত দেখতে পাচ্ছি না। আমার কাপড়ের জুতায় পানি জমেছে। পারায় পারায় শব্দ হচ্ছে।
বাসায় ঢোকার মুখে চিপা গলিতে নিশ্চয়ই অল্প বিস্তর পানি জমেছে, বৃষ্টির সিজনে এই ঘটনা খুবই সাধারণ। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে, শব্দ তুলে আপাদমস্তক ভেজা আমি পা টিপে টিপে দেয়াল ঘেষে সামনে এগোচ্ছি। অইতো দুই গজ সামনেই বাসায় ঢোকার কেচি গেটটা দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যা বেলা, আলো-আঁধারির মধ্যেই কোনরকম গেইটের সামনে পৌঁছে গেছি।
গেইটের হাতলে ধাক্কা দিতেই ধরেছি, আচমকা কে জানি ভিতর থেকে গেইটটা খুলে আমার সামনে দাড়ালো।
একটু’র জন্য ধাক্কা লাগেনি, লোকটার সাথে। ভাবলাম মানুষটা কে, ভালো করে দেখি। কীসের কি, ঐ লোক শরীরের শক্তি দিয়ে চিল্লায় উঠছে,,,ভুত,,,ভুউত,,,আল্লাগো ভুউতত,,,!
ঘটনার আকস্মিকতায় নীচতলার ভাড়াটিয়া ভদ্রমহিলা হাজবেন্ডের চিতকার শুনে দৌড়ে এসে সিড়িকোঠার লাইটের সুইচ জ্বালিয়েছেন। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, আমার সামনে নীচতলার ভাড়াটিয়া ভদ্রলোক লুঙ্গি পরিহিত খালি গায়ে দাড়িয়ে থরথর করে কাঁপছেন! আমি কিছু বলার আগেই ভদ্রলোক খিলখিল করে হেসে হেসে বললেন,”অহ আপা আপনি আসছেন! অন্ধকার তো! আপনার গায়ের সাদা এপ্রোনটা কেমন জানি কাফনের কাপড় এর মত লাগতেছিলো। আমি ভাবছি ভুত,,,হা হা হা!”
মেজাজটা কেমন লাগে!
এই লোকের বউ আগে বেশ কয়েকদিন আমাকে এপ্রোন পরা দেখলেই বাচ্চা গুলি চিলের মত ছোবল দিয়ে উঠায় নিয়ে মুখের উপর ঘরের দরজা লাগায় দিতো। আর আজকে এই লোক আমারে ভুত ভুত কইরা ডাকতেছে!
মনে হচ্ছে কসাই থেকে ভুত পজিশনে প্রমোশন পাইছি!