প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১ জুলাই ২০২০, বুধবার
লেখা: ডা. মেরী প্রিয়াংকা
মেডিকেল অফিসার, স্ক্রিনিং কর্নার
ডেলটা হসপিটাল লিমিটেড
ডিউটির সময়ের অভিজ্ঞতা গুলো বলে শেষ হবেনা। হাসপাতালের একেকটি করিডোরে একেক বর্ণের গল্প, হরেক রকমের আহাজারি শুনতে পাওয়া যায়। তেমনি আছে রোগীদের নানান রকমের কমপ্লেইন। কিছু ঘটনা এমন..
রোগী ১:
– ম্যাডাম কাশি হচ্ছে খুব। কিন্তু না ম্যাডাম, এটাতো করোনার কাশি না।
– (বলতে বাধ্য হলাম) ভাই এটা যে করোনার কাশি নয়, কেমন করে বুঝলেন? আমাকে একটু শিখিয়ে দিবেন প্লিজ? তাহলে রোগী দেখতে একটু সুবিধা হয়।
রোগী -২:
– ম্যাডাম এইতো চারদিন ধরে জ্বর।
– ফাইলটা দেখি মা। আপনার দেখি করোনা টেস্ট করতে বলা হয়েছে, করেছেন কি?
– হ্যাঁ করেছি, কিন্তু ধরা পড়ে নাই।
– কই দেখি রিপোর্টটা?
– রিপোর্ট বাসায়, আনতে ভুলে গিয়েছি।
– আচ্ছা, নিয়ে আসেন রিপোর্ট।
– না মানে আসলে রিপোর্টটা করা হয় নাই। সমস্যা নাই, ম্যাডাম বলেছে ওটা এখন না করলেও হবে। আগে রক্ত পরীক্ষাগুলো করতে।
– ম্যাডাম এই কথা বলেছেন?
– জি হ্যাঁ।
– ম্যাডাম এ কথা কোনভাবেই বলার কথা নয়।
(করোনা রিপোর্ট, যা অনেকের মনে অপরাধবোধ জন্মায় অথচ সুস্থ সবাই হতে চায়, তাহলে লুকিয়ে রাখলে কিভাবে সুস্থ করা যায়?)
রোগী-৩:
– থার্মোমিটার দেখলে আমার ভয় লাগে
– ভয় লাগে! আপনার তো জ্বর ১০১ ডিগ্রী!
– কই না আমার কোন জ্বর নাই। থার্মোমিটার দেখলে আমার হাত পা কাপে, গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
– আপনার জ্বর আপনি জানতেন না আগে?
– আমার তো কোন জ্বর নাই। আমার ভয় লাগে।
– কিসের ভয়?
– এই যে করোনা, জেনে যাবে সবাই
(করোনা কোনো অসুস্থতা নয়, একটি হুমকি! রোগীর কথা শুনে তাই মনে হল।)
ডিউটিরত অবস্থায় এরকম অভিজ্ঞতা কমবেশি সবাইকে পেতে হয়। কিন্তু করোনাকালের এই ভয় গুলো কি সমীচীন? প্রতিটা মুহূর্ত অসুস্থতার চেয়ে আতংক বেশি। অসুস্থতা এখন রোগীর কাছে অপরাধবোধে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কোন রোগীকে উপেক্ষা না করে, রিপোর্টের সত্যতা সম্পর্কে অনঅবগত থেকেই সেবা দিয়ে যাওয়া চিকিৎসকরাই আবার নাকি ‘কসাই’।
হয়তো পৃথিবী একদিন সুস্থ হয়ে উঠবে, কিন্তু মনের অসুখগুলো কবে সারবে?
(ঈষৎ পরিবর্তীত)