প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৫ জুলাই ২০২০, রবিবার
ডা. কিশোর কুমার চক্রবর্তী
এসিস্ট্যান্ট সার্জন
রেসিডেন্ট (ইএনটি এন্ড এইচএনএস)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি
হ্যাঁ, ঠিকই তো, ডাক্তাররা সত্যিই কসাই। তবে রোগীর প্রতি না, নিজেদের পরিবারের প্রতি।
তাই তো নিজের ছোট মেয়েকে (বয়স চার মাস উর্ধ্ব) জন্মের পর শুধু একবারই কোলে নিতে পেরেছি। তারপর থেকে আর দেখতেও যেতে পারি নি, চার মাসের উপর হলো সে ধীরে ধীরে বড় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাবা কি জিনিস, সেটা হয়তো বেচারী এখন পর্যন্ত বুঝে উঠতেই পারল না কারণ বাবার দেখা পাওয়াটা যে অনিশ্চিত। জন্মের পরের টিকাগুলিও দেয়া হয়ে উঠে নি সঠিক সময়ে।
বড় মেয়েটা (বয়স আড়াই বছর) কথা বলা শিখলো সেই বাবাকে না শুনিয়েই। কিন্তু “বাবা-বাবা” বলে অস্থির হয়ে ছুটে যায়। যখনই মোবাইলে রিং বেজে উঠে কিভাবে যেন সে বুঝে যায় ওটা তার বাবার ফোন। একেই হয়তো বলে বাবা-মেয়ের আত্মার টান। সেও ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, বাবার আদর, বাবার ভালবাসার স্পর্শ না পেয়েই।
বাবা যে ‘ডাক্তার’ এটাই হয়তো তাদের জন্য অভিশাপ৷ অন্যের অসুস্থতার সময় বাবা ঠিকই ছুটে যায়, কিন্তু নিজেদের অসুস্থতায় বাবার আদর মাখানো পরশটিও যে পায় না ওরা। হয়তো সব বাবা এমনই, নাকি ডাক্তার বাবারাই শুধু এমন?
এই তো গত রাতে ব্লেড দিয়ে অনেকটা গভীরভাবে হাত কেটে ফেলে বড় মেয়ে। অঝরে রক্ত পড়েছে। ভীষণ কান্না করে বারবার মা কে বলছিল “আমাকে বাবার কাছে পাঠিয়ে দাও, আমি বাবার কাছে যাবো”। একটু কথা বলার জন্য বাবাকে ফোন করেও পেলো না সে। এই দোষগুলো কার? অবশ্যই “ডাক্তার বাবার”। কারণ বাবা তো ওদের এটাও শিখিয়ে দিয়ে আসতে পারে নি কোনটা খেলার জিনিস আর কোনটা বিপদজনক (ব্লেড), তাই না?
আর ডাক্তারদের নিজের বাবা, মা আর স্ত্রী -এর জীবনের গল্পটা আশা করি অনুমেয় এবং আরো করুণ।
চারমাস ধরেই তো কোয়ারেন্টিনে আছি পরিবার ছাড়া, স্ত্রী সন্তান ছাড়া। এইটুকুন বাচ্চাটার হাত কেটে যাওয়ার কষ্টটুকুও বাবা হয়ে নীরবে দেখে যাচ্ছি, কিভাবে ভাল থাকা যায়? কিভাবে সন্তানের কষ্টটা বুকে ধরে আবার পরেরদিন হাসিমুখে দায়িত্বে যেতে হয়?
পাগল হয়ে যাবার মত অবস্থা।
এটা কেবল মাত্র আমার গল্প না। প্রতিটি ডাক্তার বাবার গল্পই এই রকম বা তার চেয়েও বেদনাময়। ভাল থাকুক কসাইরা যারাও একজন বাবা…
(ঈষৎ পরিবর্তীত)