প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ জুন, ২০২০, বৃহস্পতিবার
সুদীর্ঘ ৬ মাস ধরে গোটা বিশ্বে করোনার সাথে মানুষের বসবাস। সচেতনতা আর সাধারণ স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম কানুন এখন নখদর্পণে প্রায় সবারই। কিন্তু কোভিড-১৯ কে মেনে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে কিভাবে ফিরতে হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আছেন অনেকেই। সেসব নিয়েই এই লেখা।
করোনায় করনীয়:
১. আমাদের জীবন ও পরিবেশে কোভিড-১৯ রোগটি এবং এর কারনে সৃষ্ট পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় ধরে বিরাজ করবে ধরে নেয়া যায়। আমরা ভীত না হয়ে বাস্তবতা মেনে নেই। জীবনে অপ্রয়োজনীয়ভাবে জটিলতা সৃষ্টি না করে বরং কোভিড-১৯ কে সাথে নিয়েই আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে।
২. গ্রীষ্মকালে করোনাভাইরাসের তীব্রতা কমে আসবে না। ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনাতে এই গ্রীষ্মকালেই করোনাভাইরাস ভয়াবহভাবে ছড়িয়েছে।
৩. অনেক বেশি পানি গ্রহনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশকৃত ভাইরাসকে ধ্বংশ করা যাবেনা। পানি পান করা একটি ভাল অভ্যাস। কিন্তু এটা আপনাকে করোনা রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। এটা করে বড়জোর আপনাকে অধিকাংশ সময় বাথরুমেই পার করতে হতে পারে।
৪. বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং একে অপরের সাথে অন্তত পাঁচ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত সব চাইতে কার্যকরী পদ্ধতি। বাড়িতে কোভিড-১৯ রোগী না থাকলে বারবার মেঝে বা পৃষ্ঠতলে জীবানুনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই।
৫. কার্গো প্যাকেট, পেট্রল পাম্প, শপিং কার্ট বা এটিএম মেশিন সংক্রমণ ছড়ায় না। নিয়মিত ভাল ভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করে ফেলুন।
৬. কোভিড-১৯ খাবারবাহিত রোগ নয়। খাবারের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের কোন তথ্যভিত্তিক প্রমাণাদি নেই। এই জীবাণু ছড়ায় হাঁচি কাশির সাখে নির্গত অনুকণা বা ড্রপলেটের মাধ্যমে।
৭. সনা বা গরম পানির স্টিম বাথ নিলে শরীরে প্রবেশকৃত ভাইরাসকে ধ্বংশ করা যায়না।
৮. আ্যলার্জি বা বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমনজনিত কারণেই আপনার ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়া কোভিড-১৯ এর জন্য একক এবং নির্দিষ্ট কোন উপর্সগ নয়।
৯. ঘরে ফিরেই জরুরীভিত্তিতে পোশাক পরিবর্তন করা বা গোসল করার প্রয়োজন নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা একটি সদগুণ একে মানসিক ব্যাধি বানিয়ে ফেলা নিষ্প্রয়োজন।
১০. কোভিড-১৯ রোগের জীবাণুটি সব সময় বাতাসে আটকে থাকে না। হাঁচি কাশির সাথে নির্গত অনুকণা বা ড্রপলেটগুলো কোন হোস্টের সংস্পর্শে এলে তাদের আক্রান্ত করে নতুবা মাটিতে পরে যায়। তাই বাইরের বাতাস পরিষ্কার। সুতরাং ভিড় এড়িয়ে দুরত্ব বজায় রেখে পার্কে হাটতে যাওয়া যাবে।
১১. কোভিড-১৯ জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ, ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ সবার জন্য।
১২. করোনাভাইরাসটি একটি ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া নয় তাই এর প্রতিরোধে যেকোনো ধরনের সাবান-ই কার্যকর। বিশেষ কোন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
১৩. অর্ডারকৃত খাবারের মাধ্যমে সংক্রমণ হবে কিনা দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই তবে চাইলে খাবারটি গরম করে খেতে পারেন।
১৪. স্যান্ডাল বা জুতোর মাধ্যমে করোনাভাইরাস বাসায় নিয়ে আসা এবং সেখান থেকে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কে তুলনা করা যায় একই দিনে দুইবার বজ্রঘাত হওয়ার মতনই প্রায় অসম্ভব। নিশ্বাস বা হাঁচি কাশির সাথে নির্গত অনুকণা বা ড্রপলেট দ্বারা যে সকল রোগ সংক্রমন হয় তা সাধারণত এইভাবে ছড়ায় না।
১৫. আদা, সিরকা এসব পান করে নিজেকে ভাইরাস প্রতিরোধী করে তোলা সম্ভব নয়।
১৬. সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে গ্লাভস ব্যবহার একটি ভুল সিদ্ধান্ত কেননা গ্লাভস এর বাইরের অংশে জীবাণু জমা হয়ে থাকবে এবং সহজেই সেখান থেকে চোখে বা মুখে চলে যেতে পারে। সবচেয়ে ভাল উপায় হল বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করা।
মূলঃ ড. ফাহিম ইউনুস
ইউনির্ভাসিটি অব মেরিল্যান্ড
হেড অব ইনফেকশাস ডিজিজ ক্লিনিক, আমেরিকা
ভাবানুবাদঃ রাইয়ান আমজাদ (বিএইচবি, এমএসএইচ)