১৭ এপ্রিল, ২০২০:
ডা. রেজাউল করিম কাজল
সহযোগী অধ্যাপক,
প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, বিএসএমএমইউ
১ম রোগী (দম্পতি): স্বামী-স্ত্রী খালাতো ভাই-বোন। বাড়ি বগুড়া। ১ম বাচ্চা জন্মের ৪ দিন পর, ২য় বাচ্চা জন্মের ১২ দিন পর মারা যায়। বলেছিলাম পরবর্তীতে বাচ্চা নেয়ার আগে টাকা পয়সা রেডি করতে। কারণ গর্ভাবস্থায় দম্পতি ও তাদের অনাগত সন্তানের জীন সিকোয়েন্সিং পরীক্ষা করতে হবে যা দেশে হয়না। নমুনা পাঠাতে হয় ইন্ডিয়ায়, টাকার পরিমাণ প্রায় ৯০ হাজার। প্রায় দুই বছর পর টাকা পয়সা রেডি হলো। গর্ভে ১১ সপ্তাহের সন্তানের অস্তিত্ব। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশের বাইরে নমুনা পাঠানো অসম্ভব। আগে দুইবার সিজারিয়ান অপারেশনের ইতিহাস আছে। অনাগত নবজাতকের পরিণতির অনিশ্চয়তা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল এই দম্পতি। সময়মত ঢাকায় এসে আমাদের হাসপাতালে সন্তান প্রসবের জন্য উপদেশ দিলাম।
২য় রোগী: আগে ২ বার গর্ভে সন্তান এসেছিল। প্রতিবারেই ২২-২৪ সপ্তাহে আলট্রাসাউন্ড এ বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ধরা পড়লে গর্ভাবস্থা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এই দম্পতিও খালাতো ভাই-বোন। জীন সিকোয়েন্সিং পরীক্ষার সময় হয়ে গেলেও এখন আর সম্ভব নয়। তাই আবারো আলট্রাসাউন্ড এর উপর ভরসা। আরো কয়েক সপ্তাহ অনিশ্চিত গর্ভযাত্রা।
৩য় রোগী: এই দম্পতির বাড়িও বগুড়া। আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বিয়ে হয়েছে এমন নয়। ৯ বছরের ছেলে ডিএমডি (DMD) রোগে ভুগছে। ডিএমডি শুধু ছেলেদের রোগ। পঙ্গুত্ব নিয়ে কয়েকবছর বেঁচে থাকা, বাবা মায়ের সামনেই সৃষ্টি কর্তার কাছে ফিরে যাওয়া। ১২ সপ্তাহে ভ্রুণের ডিএনএ পরীক্ষা করার কথা ছিল, কিন্তু তখনই করোনা লকডাউন শুরু হয়। এখন ভ্রুণের বয়স প্রায় ১৫ সপ্তাহ। আল্ট্রাসাউন্ড এ গর্ভে আবারও ছেলে সন্তানের অস্তিত্ব। মেয়ে হলে শুখবরটা এখনি দেয়া যেত। ছেলে বাচ্চার জন্য ৫০% অনিশ্চয়তা রয়ে গেল। মায়েরা ডিএমডি রোগের বাহক হয়। কিন্ত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানতে চাইলে বরাবর মিথ্যা কথা বলে পূণ্য কামাই করি।
৪র্থ রোগী: জীবন থেমে থাকেনা। দুই সন্তানের জননী এসেছেন অনেক আশা ভরসা নিয়ে। সন্তানদের বয়স ৮ ও ১২। দুজনেই শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। জানতে চান তিনি কখনো সুস্থ্য সন্তানের মা হতে পারবেন কিনা। স্বামী আপন মামাতো ভাই। দুই সন্তান জীবিত থাকায় সমস্যা খুঁজে বের করা অনেকটা সহজ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আসতে বললাম।
কারো কারো সংসার জীবন এমন যে, করোনা তাদের কোন নতুন অনিশ্চয়তার ভয় দেখাতে পারেনা।