শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০
করোনা আক্রান্ত রোগীকে ঘৃণা করলে, ভয় পেলে, আতংকিত হয়ে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেস্টা করলে, তার মানবিক অধিকার নস্ট করলে, তার চিকিৎসা ও আইসোলেশনে অমানবিক আচরন করলে সে তথ্য লুকাবেই। তথ্য লুকিয়ে আপনার আসেপাশে আসবে, আপনাকে আক্রান্ত করবে।
করোনা আক্রান্ত রোগী কি অপরাধী?
যদি না হয় তাহলে তার বাড়িতে লাল পতাকা কেন? কেন বাশের বেড়া বা কেন লিখে রাখা এই বাড়িতে করোনা রোগী আছে, সাবধান? কেন তাকে ও তার পরিবারকে এমনভাবে আইসোলেশন করা যেন তারা মস্ত বড় অপরাধী? আইসোলেশনে তাদের প্রতিদিনের স্বাস্থ্যের অবস্থা, পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের অবস্থা, খাবার ও অন্যান্য নিত্য পণ্যের সরবরাহের অবস্থা ইত্যাদির খোজ নিচ্ছেন কেউ? এলাকাবাসী জানামাত্রই এমন আচরন করছে যেমনটা ব্রাহ্মণেরা আগে “অচ্ছুৎ” হিসেবে ক্লাসিফাই করাদের ব্যাপারে করত। এমনকি মরলে পরেও কবর পাবার নিশ্চয়তা নেই এলাকাবাসীর প্রতিবাদে। হটলাইনে মানুষ বলছে আমাদের তথ্য গোপন থাকবেতো, এলাকাবাদী জানবে না তো, জানলে ক্ষতি করবে, পুলিশ আটকে দেবে আমাদের আত্নীয়স্বজন সবাইকে। আক্রান্ত রোগীকে যে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয় সেটি ভিজিট করে দেখেছেন নীতিনির্ধারকদের কেউ? করোনা ল্যাব ভিজিট করে কিছু জিনিস দেখে সার্টিফাই করা হয় এতে পরীক্ষা চলবে কিনা, ভাইরাসটিকে সম্মান দেয়া হয় অথচ বহু আইসোলেশন সেন্টারে অভিযোগ উঠেছে সেখানে মানুষের থাকার মত পরিবেশ নেই। মানুষের সম্মান ভাইরাসের চেয়ে কম। উপর থেকে নির্দেশ এসেছে আইসোলেশন রুম বানাতে হবে, আমরা কোন মতে কোন একটি যায়গায় প্রিন্ট করা কাগজ লাগিয়ে বলছি আইসোলেশন রুম তৈরি হয়ে গেছে। অথচ কোথায় সেই নেগেটিভ প্রেশার রুম, কোথায় সেই রুমের সেবাদাতাদের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা, কোথায় সেই রুমে খাওয়া, বাথরুম সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আয়োজন? এগুলো কেউ ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে হিসাব মিলিয়ে দেখেছে? তাহলে মানুষ তথ্য লুকাবেনা কেন? হটলাইনে কল করা মানুষ এখন ঠিকানা বলতে চায়না ভয়ে, কারন টেস্ট করতে আসলে এরপর যে প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে তাকে যেতে হবে তা ভয়াবহ রকমের অমানবিক অধিকাংশ ক্ষেত্রে। তাই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষও পালিয়ে যায় কিংবা তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নিতে আসে। করোনা মানুষের শ্বাসতন্ত্রই শুধু আক্রমন করছেনা, মানসিক সুস্থতাকেও আক্রান্ত করছে। এটি নিরসনের ব্যবস্থা কোথায় আমাদের? আমাদের প্রশাসন কি পারেনা মানুষকে আরও বেশি স্টিগমাটাইজড না করে বরং আক্রান্ত রোগীকে ভিআইপি হিসেবে স্থানান্তর ও দেখভালের ব্যবস্থা করতে? রোগীর দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবুন। চিকিৎসকেরাও ভাবুন৷
আমরা যদি আক্রান্ত রোগীকে সাহায্য করি, দূর থেকেই, তার বাসার সদস্যদের খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌছে দেই, প্রতিবেশী হিসেবে মোবাইল ফোনে শারিরীক অবস্থার খোজ নেই, কোন সাহায্য লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করি, চিকিৎসার প্রয়োজনে সাহায্য করি, হাসপাতালে নিতে বা সেবা পেতে সাহায্য করি (এগুলো দূর থেকেও করা যায়) তাহলে সে আপনাকে তথ্য দেবে। নিজে থেকেই জানাবে আমি করোনা রোগী, আমি বাঁচতে চাই, আমার পরিবার বাঁচতে চায়, আমাদের সাহায্য করুন। লাঠির ভয়ে, সামাজিক অবমাননার ভয়ে, মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হবার ভয়ে আপনি আক্রান্ত হলেও হয়তো একই কাজ করবেন। যে হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ পজিটিভ কেস আইসোলেশন এর ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে রোগী কিভাবে আসবে, এম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা, চিকিৎসার সব ব্যবস্থার পাশাপাশি খাবার, টয়লেট, পানি ও অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র আছে কিনা, পরিচর্যাকারী আছে কিনা, প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বিনোদনমূলক উপকরন যেমন বই বা টিভি ইত্যাদি আছে কিনা এগুলাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দেখতে হবে, চিকিৎসকেরাও দেখতে পারেন, গ্যাপ পেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন।
মোটকথা রোগীর ভয় দূর করুতে হবে, সহায়তা করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
লেখাঃ মোঃ মারুফুর রাহমান অপু