প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২১ আগস্ট, ২০২০, শুক্রবার
ডা. মারুফুর রহমান অপু
ডিপিএম (মেডিকেল বায়োটেকনোলজি),
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
করোনাভাইরাস এর জিনোমে CG কনটেন্ট অন্যান্য ভাইরাস এর তুলনায় অনেক কম। এই CG কনটেন্ট এর ব্যপারটি হলো, ভাইরাসটির জিনোম (গঠনের মূল রাসায়নিক নকশা) যে চারটি অক্ষর (নিউক্লিওটাইড) A,U,G,C দ্বারা গঠিত হয় তার মাঝে দুটি অক্ষর। এ দুটি অক্ষর পাশাপাশি বসে যেসব যায়গায় সেগুলোকে বলে CpG আইল্যান্ড। ভাইরাসের এই CpG আইল্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ কেননা মানুষের শরীরের বেশ কয়েকটি প্রোটিন (যেমন ZAP, APOBEC3) এই জায়গাটি চিনতে পারে এবং এন্টিভাইরাল হিসেবে কাজ করে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধতিতে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। এতে আবার অসুবিধাও আছে, সেটা হলো যত বেশি CpG অংশ থাকবে তত বেশি ইমিউন রিএকশন হবে এবং ততবেশি রোগ প্রতিরোধী কেমিকেল (সাইটোকাইন) বের হবে ভাইরাসকে আটকানোর জন্য। বেশি বেশি কেমিকেল পরে শুধু ভাইরাসই না মানুষের নিজস্ব কোষকেও ধ্বংস করে (সাইটোকাইন স্টর্ম) এবং এর কারণেই মূলত কোভিডে মানুষ মারা যায়।
এখন, আমাদের প্যান্ডেমিকের করোনাভাইরাসটির ক্ষেত্রে একটি ঘটনা ঘটছে। শুরুতে তার শরীরে মোটামুটি লেভেলে CpG ছিল। বিশেষ করে মাথার অংশে ক্যাপের মত যায়গায় অনেক CpG ছিল, যা তাকে একটা শক্ত মাথা বানাতে সাহায্য করে এবং শক্ত মাথা থাকলে মানব কোষের প্রোটিন বানানোর মেশিন রাইবোজমে সহজে ঢোকা যায়৷ ভেজাল হলো এই শক্ত মাথায় এবং অন্যান্য যায়গায় যত CpG আছে, তত যায়গায় মানব কোষের বেরসিক প্রোটিনগুলো আক্রমণ করে বিক্রিয়া করে একাকার করে দেয়৷ ফলে বাঁঁচার জন্য করোনা দেখলো C গুলোকে T তে এবং G গুলোকে A তে পাল্টে ফেললে এই আক্রমন কমানো যায়। আমরা সেটাই দেখলাম। শুরুর দিকে উহানে যে পরিমান CpG ছিলো এখন তা নেই, দিনে দিনে কমছে। এমনকি শক্ত মাথার দিকেও C>T পরিবর্তন হচ্ছে৷ এর ফলে ভাইরাসটির যে লাভ হয়েছে তা হলো ঐসব এন্টি ভাইরাল প্রোটিনকে ফাঁকি দিয়ে বংশবৃদ্ধি ভালোমত করতে পারছে। নিশ্চয়ই শংকার কথা! কিন্তু অন্যদিকের কাহিনী হলো বিক্রিয়া কম বলে সাইটোকাইনও কমার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, ফলে বেশি বেশি ভাইরাস তৈরি হলেও বেশি বেশি ইমিউন রিএকশন হচ্ছে না। তাই সাইটোকাইন স্টর্মে বেশি বেশি মানুষ মরার হার সম্ভবত কমছে বলে ধারণা করা যেতে পারে (প্রমাণিত নয়)।
খুশির সংবাদ তাই না? থামেন! ব্যাপার হলো ইমিউন রিএকশন যদি বেশি না হয়, তাহলে আমাদের ভুলোমনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ভাইরাসকে মনে রাখতে পারবেনা। ফলে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে শক্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবেনা, ফলে আবারও আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়তে পারে (প্রমাণিত নয়)। এই কারণে বেশি অসুস্থ রোগীর বেশি এন্টিবডি তৈরি হয়। কি বিপদ বলেন দেখি!
এ কারণে কিছু বিজ্ঞানী দাবি করছেন যে, ভ্যাকসিন বানালে ভ্যাকসিনে বেশি পরিমাণ CpG দিয়ে একটি শক্ত মাথা জুড়ে দিতে হবে। ভ্যাকসিন আসলে ভাইরাস এর একটি কাটা অংশ- যা বংশবৃদ্ধি করে রোগ বানাতে পারেনা, তবে ইমিউন রিএকশন করে প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি করতে পারে যেন আসল ভাইরাসকে আটকে ফেলা যায়। তাই ভ্যাকসিনের কাটাছাটা নকল ভাইরাসটিকে বেশি CpG এর ক্যাপ পরিয়ে দিলে শক্ত ইমিউন রিএকশন হবে এবং শক্ত প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হবে। চমৎকার এই আইডিয়াকে স্বাগত জানাই। দেখা যাক আগামী দিনের বিজ্ঞান কি বলে।