০৭ মে, ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডাঃ মারুফুর রহমান তালহা
আপুর বাসা নবোদয় হাউজিং এ যাচ্ছিলাম। দেখলাম রাজনৈতিক নেতার পক্ষ থেকে আধা কেজি মুড়ি, এক পোয়া ছোলা, এক পোয়া ডবলির প্যাকেট ত্রাণ দিচ্ছে।
জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নিয়ে দাঁড়ানো বিশাল লম্বা লাইন। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম। লাইনের শেষের দিকে এক ভদ্রমহিলা কোলে ছোট বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সম্ভ্রান্ত পরিবারের হবে। খুব জড়োসড়ো হয়ে মাথায় বড় করে কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছে। যাই হোক আমি চলে গেলাম।
ঘন্টাখানেক পর কিছু বাজার নিয়ে ঘরে ফিরছিলাম। এসে দেখি ত্রাণ দেয়া শেষ। রাস্তার কোণে সেই ভদ্রমহিলা বাচ্চাকে নিয়ে বসে আছে খালি হাতে। আমি বাজারের ব্যাগ হাতে বাসায় প্রবেশ করছিলাম। মহিলাটি ক্লান্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। কি যেন চিন্তা করে আমি সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি চোখের কোনে পানি।
জিজ্ঞেস করলাম মা, “আপনার কি শরীর খারাপ?” দেখি কিছু বলছেন না। আবার জিজ্ঞেস করলাম। বললেন, “আড়াই ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম সামান্য খাবার পাওয়ার আশায়। কিন্তু পাইনি। জীবনে প্রথম লাইনে দাঁড়িয়েছি তো, তাই অন্যদের সাথে পেরে উঠিনি। কিভাবে সংগ্রহ করতে হয় এবং সেটার সাথে অভ্যস্ত নই।”
আরো কথা বলে জানলাম, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭জন। স্বামী নেই। ৩ সন্তান, মা-বাবা আর ডিভোর্সি বোন নিয়ে তার সংসার। বাসায় রান্না করে ব্যাচেলরদের ঘরে খাবার সাপ্লাই দিতেন। এটাই তার আয়ের একমাত্র উৎস।
আমি বাজার করেছিলাম বোনের বাসায় দেয়ার জন্য। কোন কিছু চিন্তা না করে ওনাকে ব্যাগটা দিয়ে দিলাম। উনি কি যেন একটা দোয়া করে ব্যাগটা নিয়ে চলে গেলেন।
রাত ১০.৪৫ এ বাসার পাশেই নিচে তারাবির নামাজ পড়ে বাসায় ঢুকবো এমন সময় দেখি সেই মহিলা বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভিতরে ঢুকতেই দারোয়ান আমার পেছন থেকে দেখলেন, “মামা উনি আপনার সাথে কথা বলবেন সেজন্য ৮.০০ থেকে বসে আছেন।” বললাম, “মা কিছু বলবেন?” উনি বললেন, “বাবা আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য এসেছি।” দারোয়ান ভাই বলল, “আপনি নামাজে গিয়েছেন আসতে দেরি হবে, তাই বসে অপেক্ষা করছিল।”
ওনার কথা শুনে আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। আমার জন্য দোয়া করবেন বলে চলে আসলাম। পিছনে ফিরে দেখলাম উনি হাঁসি মুখে ভক্তি ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।