প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ এপ্রিল, ২০২০, শুক্রবার
সাধারণত করোনা শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত রোগ বলেই সবাই জানে কিন্তু আসলেই কি ব্যপারটা শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ? গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৫৮ জন রোগীর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ছাড়াও আরও কিছু উপসর্গ যেমন, এনকেফালোপ্যাথি, উৎকন্ঠা, ধৈর্য্যচ্যুতি এবং মস্তিষ্কের স্নায়ু সংক্রান্ত উপসর্গ দেখা গিয়েছে বলে ফ্রান্সের ডাক্তাররা জানিয়েছেন। কারণ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা না গেলেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত তুলনামূলক বেশি অসুস্থদের মধ্যে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, যকৃতের প্রদাহ, আন্ত্রিক গোলযোগ, স্নায়ু সংক্রান্ত সমস্যাও পরিলক্ষিত হয়েছে।
ইয়েল নিউ হেভেন হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হারলান ক্রুমোলজ বলেন, “আইসিইউতে ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে অনেকেরই প্রাথমিক পর্যায়ের কিডনী সমস্য, রক্তে চিনির পরিমাণের তারতম্য, রক্তজমাট বাঁধাজনিত সমস্যা ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়াও আরও নিত্যনতুন কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর থেকে ধারণা করা যায় এই ভাইরাস শুধু শ্বাসতন্ত্র নয় বরং শরীরের যে কোন অঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে। এবং সবসময় শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত উপসর্গ নাও থাকতে পারে। আসলে আমাদের এখনও এই ভাইরাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানার বাকি আছে।”
প্রায় একই রকম অসহায়ত্ব ফুটে উঠে প্রফেসর এরন গ্ল্যাট এর কথায়, “অনেক রোগীই কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু এটা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে নাকি অন্য কারণে নির্দিষ্ট করা খুবই কঠিন।” তবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি আগের মত নেই। খুব সম্ভবত প্লাজমা থেরাপি, রেসপিরেটরি থেরাপি এবং ইম্যুনোসাপ্রেসিভ থেরাপি পদ্ধতিগুলো খুবই কার্যকরী পদ্ধতি। এর ফলেই হয়তো রোগী বৃদ্ধির গ্রাফটা নিম্নমুখী করা সম্ভব হচ্ছে।”
এখন তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, রোগী করোনা আক্রান্ত কিনা বোঝার উপায় কি? ৬৯ বছর বয়সী একজন মহিলা যার পূর্বে ল্যাপারোটমি করা হয়েছিল তিনি পরবর্তীতে কিছু আন্ত্রিক সমস্যাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে হঠাৎ করেই তার শ্বাসকষ্ট,হৃদযন্ত্রের সমস্যা শুরু হয় এবং ৩ দিনের মধ্যে তিনি মারা যান। এ প্রসঙ্গে একজন চিকিৎসক বলেন, “আমরা ঠিক এমন আরেকটা রোগী পেয়েছি। তাদের আকস্মিক নিউমোনিয়া এবং মায়োকার্ডাইটিস দেখা দেয় কিন্তু এরকম কিছু হওয়ার কোন পূর্ব ইঙ্গিত আমরা পাইনি।”
৩৭ বছর বয়সী একজন লোক শুধুমাত্র পেট ব্যথা, বমি এবং ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে আসেন এবং পরীক্ষা করে দেখা যায় তার কোভিড-১৯ পজিটিভ। অথচ তার শ্বাসকষ্টজনিত কোন লক্ষ্মণই ছিল না। কোভিড-১৯ পজিটিভ আরেকজন রোগী হঠাৎই করোনারি আর্টারি ব্লক এবং শকে আক্রান্ত হন কিন্তু তার ফুসফুস সংক্রান্ত কোন সমস্যাই ছিল না। একজন অভিজ্ঞ ইটালিয়ান গ্যাস্ট্রোএন্টেরলজিস্ট এর মতে, “রোগীর লক্ষণ বিচারে আমাদের কৌশলী হতে হবে। তার রোগ সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা, বিশেষ করে তার মুখের স্বাদের পরিবর্তন অথবা বমি বমি লাগা ইত্যাদি কিছু উপসর্গ থেকে তার করোনা সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।“
ভাইরাস সংক্রমণের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্মণগুলো সম্পর্কে চিকিৎসকদের বিভিন্ন ধারণা থাকলেও সুনিশ্চিত বক্তব্য পাওয়া যায়নি। “এসিই২ নামক একটি রিসিপটরের মাধ্যমে ভাইরাস শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রবেশ করে, এমন তথ্য পাওয়া যায় ২০ বছর আগে ঘটে যাওয়া মহামারীতে আক্রান্ত মৃতদেহের অটোপসি রিপোর্ট থেকে।” এমন তথ্য পাওয়া যায় মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক স্ট্যানলি পার্লম্যান এর কাছ থেকে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার কিছুটা ভুমিকা আছে বলে মনে করেন মেডিসিনের প্রফেসর উইলিয়াম শাফনার। তিনি বলেন, “সাইটোকিন চক্রের কারণে হার্ট, কিডনি, ব্রেন কিংবা অন্যান্য অঙ্গের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার পরীক্ষামূলক ওষুধের ব্যবহার এসব সমস্যার উৎপত্তি ঘটাতে পারে।”
ডা. ক্রামোলজ এর মতে, “আমরা শুরুতেই রোগীদের লক্ষ্মণ এবং প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যার কারণে অনেক সময় ঔষধের প্বার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে এই ভাইরাস সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকাটাই বড় কারণ। এখন আমাদের উচিৎ সকলের একসাথে এই ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং নিজেদের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেওয়া। অন্তত রোগীরা যেন সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারা না যায় এটা নিশ্চিত করা আমাদেরই দ্বায়িত্ব।”
তথ্যসূত্র : www.mdedge.com
অনুবাদ : ডা. টি এইচ এম এনায়েত উল্লাহ খান