প্ল্যাটফর্ম নিউজ, শনিবার। ১৮ এপ্রিল, ২০২০
বৈশ্বিক করোনা মহামারী আস্তে আস্তে মারাত্মক রূপ ধারণ করা শুরু করেছে। করোনার ছোবলে বাংলাদেশও আক্রান্ত। দিনদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নতুন নতুন জেলায় মিলছে করোনা রোগীর সন্ধান।
তবে শঙ্কার বিষয়, কোভিড–১৯ আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কারণে সন্দেহভাজন অনেকে থেকে যাচ্ছে রোগ শনাক্তকরণের নমুনা পরীক্ষার বাইরে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে।
সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। সারা দেশকে ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণাও করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে এখন পর্যন্ত ২৯টি জেলা লকডাউন (অবরুদ্ধ) করেছে সরকার। দেশে শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর শতকরা ৩৮ ভাগেরও বেশি (৭০৪ জন) এসব এলাকার বাসিন্দা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এসব এলাকা অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তুলনামূলকভাবে সহজে শনাক্ত (কন্টাক্ট ট্রেসিং) করা সম্ভব। তাঁদের পরীক্ষার আওতায় আনা গেলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে আসবে। এ ছাড়া এসব এলাকায় কারও মধ্যে লক্ষণ–উপসর্গ দেখা দিলে তাদেরও পরীক্ষার আওতায় আনার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু এসব এলাকায় রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরিসর সেভাবে বাড়ছে না।”
গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “রোগীরা পরীক্ষা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না এবং গোপন করে যান।”
করোনা ভাইরাস মহামারির শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। গত মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সংস্থাটির প্রকাশিত সর্বশেষ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধবিষয়ক কৌশলপত্র থেকে জানা যায়, “এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো টিকা বা সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। দেশগুলোকে পরীক্ষা ও শনাক্তের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করতে হবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেন, “কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের নমুনা আরও বেশি করে পাঠাতে বলা হয়েছে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও কোয়ারেন্টিন করতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে।”
নীলফামারীতে গতকাল পর্যন্ত নয়জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। জেলাটিতে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮ হাজার ৪০২ জন।
কুমিল্লায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন। জেলাটিতে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ১ হাজার ৩৯০ জন।
ঠাকুরগাঁওয়ে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল জেলায় ৫১২ জন হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।
করোনার হটস্পটখ্যাত নারায়ণগঞ্জে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৬১ জনের। তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের কাছ থেকে রোগের পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হলেও তার সুনির্দিষ্ট হিসাব জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই। ৭ এপ্রিল প্রথম নারায়ণগঞ্জ জেলা লকডাউন করা হয়।
নরসিংদীতে গতকাল পর্যন্ত ৯১ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। জেলার সিভিল সার্জনের ভাষ্যমতে, জেলাটিতে এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৭৪ জন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল পর্যন্ত ১৬ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, “জেলায় ৬৪৯ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।”
করোনা সংক্রমণের নতুন উপকেন্দ্র গাজীপুর। গাজীপুরে গতকাল পর্যন্ত ৪ চিকিৎসকসহ ১১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জানা যায়, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, “শুধু লকডাউন করলে হবে না, সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের তৎপরতাও থাকতে হবে। কোয়ারেন্টিনে যাঁরা আছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ (কন্টাক্ট ট্রেসিং) আরও বিস্তৃতভাবে করতে হবে।”
IEDCR ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত লকডাউন হওয়া দেশের ২৯টি জেলায় মোট ৭০৪ জন করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এসব জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ২৭ হাজার ৩৪৫ জন। আর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৮১ জন। এর মধ্যে ১৯টি জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩ হাজার ৮৬০ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা ২৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বাকি ১০টি জেলার কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কতজনের পরীক্ষা করা হয়েছে, তা জানা যায়নি। এ ছাড়া ২৯ জেলায় আইসোলেশনে থাকা ৪৬৮ জনের মধ্যে ৪৫৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
লকডাউন হওয়া ২০ জেলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন এমন ২ হাজার ৭১৫ জনকে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বাকি ৯টি জেলায় আক্রান্ত থাকলেও তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের এখনো চিহ্নিত করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, করোনা প্রতিরোধে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হয়ে, নিজগৃহে অবস্থান করেই সুস্থ ও নিরাপদ থাকা সম্ভব।
জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়