প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ জুলাই, ২০২০, শনিবার
প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার
একাদশ ব্যাচ,
শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম), বরিশাল
সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালের ব্যাপারেই কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে, সেবার মান নিয়ে৷ এ সমস্ত অভিযোগের সত্যতা মেনে নিয়েই দুচারটা কথা বলতে চাই৷
যদিও রোগীর সংখ্যার তুলনায় সেবাকর্মীর পরিমাণ খুব কম, তারপরও অজ্ঞাত কোন ভয় এবং মোটিভেশন না পাওয়া – এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী৷ যে সমস্ত হাসপাতালের পরিচালক, উপ পরিচালকগণ সারাদিনরাত রোগীদের সেবার মান ধরে রাখতে ব্যাকুল – বিকাল অবধি ওয়ার্ডে রাউন্ড দেন, হাসি মুখে রোগীর সাথে ভাব বিনিময় করেন, তাদের অধীনস্হরা দৃঢ় মনোবল নিয়েই শক্তমত এই করোনা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়৷ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ৷
দফায় দফায় মেডিকেল অফিসাররা এসে খোঁজ নেন, সিনিয়রগণ আসেন৷ কমান্ড্যান্ট সময়মত রাউন্ডে আসেন৷ কনসালট্যান্ট, ফিজিশিয়ান এলেন বিকেল চারটায়৷ সিস্টারদের বসতে দেখিনি কখনো৷ দাঁড়িয়ে কাজ করতে দেখে অবাক হয়েছিলাম লন্ডন ব্রিজ হসপিটালের নার্সদের, সেই ১৯৯৭ সনে।
আজ আমার দেশের সেবিকারাই সেই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে৷ সিস্টারদের কর্মতৎপতায় মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই৷ ডাকতেই হয় না কখনও৷ তাদের রুটিন তারা ফলো করে যাচ্ছেন৷ বিপি দেখা, অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখা, ইনজেকশন দেয়া, ইনভেস্টিগেশন এর জন্য ব্লাড ড্র করা, যাদের স্যাচুরেশন ফল করছে অক্সিজেন দেয়া৷ যাদের ইঞ্জেক্টেবল এন্টিবায়োটিক লাগছে, তাদের পিছনে একটু বেশি সময় দিচ্ছেন৷ এতকিছু সেই নার্সরাই করছেন যারা বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল থেকে অন্যদের মতোই সনদপ্রাপ্ত৷ শুধু মাইন্ডসেটের ভিন্নতা! সিএমএইচসহ এই উন্নত হাসপাতালের পরিচালকগণ তাদের সেবাকর্মীদের এটুকু বুঝাতে পেরেছেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষাসহ করোনা রোগীদের সেবা দেয়াতে ঝুঁকি নেই৷ তারা বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন এটাই আমাদের পেশা – এই দুর্দিনে রোগীর পাশে থাকা কতটা জরুরি, সেবার হাত রোগীর মনোবলের জন্য কত বড় টনিক!
যাদের ব্যাপারে অভিযোগ আসছে আপনারাও কিন্তু হাসপাতালেই আছেন, কাজও করছেন। এরপরও খামোখাই বদনাম নিচ্ছেন৷ দায়িত্ব নিয়েই কাজ করেন, মনে তৃপ্তি পাবেন৷ কাউকে তাৎক্ষণিকভাবে খুশি করার জন্য নয়, আপনার পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবেই করোনা রোগীকে দেখবেন আপনি৷ দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে সবার আগে৷ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির উপর পুরো জিনিসটা নির্ভর করে৷ কোনভাবেই রোগীর কাছে না গিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে ভাবের আদান-প্রদান করা যাবে না। মানুষকে মানুষ বিবেচনা করতে হবে৷ আজ অনেকে আক্রান্ত হয়ে অসহায় অবস্থায় আপনার সেবার জন্য এসেছেন, আপনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করুন। আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করুন যে আল্লাহ আপনাকেই নির্বাচিত করেছেন এই মহান দায়িত্ব পালনের জন্য৷ আপনি যেন কোনভাবেই করোনা রোগীর মনোবেদনার কারণ না হন।
হা, রোগীদের চাহিদা বেশি হতে পারে৷ এটার জন্য কি আমরা কমবেশি দায়ী না? রোগী অধিকার, প্রিভিলেজ কতটুকু আর কোনটা অযাচিত বায়না তা কি আমরা কখনো তাদের বলেছি? কি ডাক্তার, কি রোগী – এই ক্রাইসিসে আমরা নিজেদের ত্রুটিগুলোকে শুধরে নিতে পারি৷ যে কোন দূর্যোগ মানুষকে নতুন অনেক কিছু শিখিয়ে যায়৷ আমরাও যেন এই করোনা দূর্যোগ থেকে শিখতে পারি৷
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, আয়া, পরিচ্ছন্নকর্মী, খাদ্য সরবরাহকারী যারা সারাদিন আমাদের সেবায় ব্যস্ত আছেন, তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা৷ চিফ ফিজিশিয়ান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রাজ্জাক, কনসালটেন্ট ফিজিশিয়ান মেজর জেনারেল আজিজুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের একঝাঁক স্মার্ট, আন্তরিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে এই দুঃসময়কে মোকাবেলা করার জন্য স্যালুট! করোনা যুদ্ধে সবচেয়ে যে কমরেডের নামটা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করতেই হবে, তিনি হচ্ছেন এই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তৌফিক৷ আমার চোখে সে সফল সেনানায়ক, বীর যোদ্ধা – আজ থেকে আমার কাছে সে মেজর জেনারেল৷ ডাবল স্যালুট আপনাকে, হে বীর সেনানী!