প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৪ জুলাই, ২০২০, শনিবার
প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার
একাদশ ব্যাচ,
শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম), বরিশাল
যারা জীবন নিয়ে ভাবেন তারা কখনো কখনো একাকী বা বন্ধুদের আড্ডায় একটা বিষয়ে আলোকপাত করেছেন নিশ্চিত, মানুষের যদি খেতে না হতো তবে জীবন কেমন হতো!
– জীবন নিরামিষ হতো৷
– মানুষ শুধু ঘুমাতো৷
– মানুষে মানুষে মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি কমে যেত৷
– মানুষের পারিবারিক সামাজিক জীবন অনেক মধুর হতো৷
– প্রচুর সময় দেওয়া যেত সন্তান লালন পালনের জন্য৷
– প্রতিযোগিতা ছাড়া জীবন একসময় জলহীন মরা ব্রহ্মপুত্র নদের মতো হয়ে যেত৷
– পরস্পরের প্রতি ভালবাসা বেড়ে যেত- হিংসা বিদ্বেষ কমে যেত৷
কাল্পনিক এমন অনেক কিছুই বলার পর, ক্ষুধা লাগলে আড্ডা ছেড়ে দুপুরের খাবারের জন্য বাড়ির পথ ধরতে হয়- এটাই বাস্তবতা!
হাসপাতালে আমাকে পাঁচ বেলা খাবার দেওয়া হয়৷ সকালে পাউরুটি, জেলি, বাটার, দুটো সিদ্ধ ডিম আর একটা জুস৷ জুসটা ছাড়া বাকিটা খাওয়ার চেষ্টা করি৷ এগারোটা ও চারটার খাবার আমার মিস হয়৷ সেমাই দিলে খেতে পারি৷ বিকেলের চা বিস্কিট খুবই একঘেয়ে৷
সমস্যা হয় দুপুর আর রাতের খাবার নিয়ে৷ সাধারণত চিকেন থাকে দুপুরে৷ আজ খেতেই পারিনি৷ রাতে কলিজা ভুনা, সবজি, চিকেন – দেখে লেবু কেটে সেইরকম প্রুস্তুতি নিয়ে বসি৷ কোনরকম খাদ্যনালীতে ঢুকাতে পারলেই পাকস্থলী, তারপর যার যার কাজ করতে থাকবে৷ আমার কাজ হচ্ছে ধরে বেঁধে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করানো৷
শতভাগ ফেল করে প্রথমে মন খারাপ করলাম, তারপর কলিজাটুকু কোনরকমে খেলাম। আরতো পারছি না! একটা আস্ত আম খেয়ে পুষিয়ে নিলাম৷ আম না হয়ে কাঁঠাল কী কারণে জাতীয় ফল হল, তার জবাব আজও অজানা৷
আমি আজ নিজেই ভিন্ন খাবার দাবার কেনাবো বা আনাবো ভাবছি৷ যেমন:
- গরম ভাত, আলু ভর্তা, ঢেড়স ভাজি ও গরম মুশর ডাল৷
- রামছোড় (তাপসী) মাছ দোপেঁয়াজো, বাসমতি চাল – মুগ ডাল ৷
- লইট্টা বা ছুড়ি শুটকি ভর্তা, ঘন ডাল- চিনিগুঁড়া চালের ভাতে ভাপ উঠতে থাকবে৷
- বোয়াল মাছের পেটি, সাথে চিকন চালের গরম ভাত ও ডাল৷
- পাতলা সবজি খিচুড়ি, সাথে হিলের সেই বড় চাপিলা ফ্রাই বা রূপচাঁদা ফ্রাই৷
- নদীর টেংরা আলু দিয়ে রান্না হবে, সাথে মিহি চিকন চাল ও বোম্বাই মরিচ৷
- রীটা মাছের ঝোল, বোম্বাই মরিচ, চালতার আচার।
- মিল্কভিটার টক দই, যশোরের পাটালি গুড় – ঝোলা হলে বেস্ট৷ চাল ভাল হতে হবে৷
- আগের রাতের বাসি ইলিশ মাছ, ইলিশের ডিম, পেটা – পানি ভাত ও শুকনো মরিচ পোড়া৷
- বাসি গলদা চিংড়ি, পানি ভাত ও মরিচ পোড়া৷
- গরম পরোটা ও ডাবল ডিম ওমলেট৷
আপাতত এ পর্যন্তই থাক৷ দেখি কোনটা কোনটা পাই! লিস্ট বড় করে পাঠকের বিরক্তির কারণ হতে চাই না৷ কিন্তু খাদ্যে অরুচি বলতে কি বুঝায়, তা কোভিড-১৯ ভালই জানে৷
একটা প্রশ্ন থেকেই যায়৷ যে মুহূর্তে আমরা রুচির অভাবে খাবার খেতে না পেরে নষ্ট করছি, সেই মুহূর্তেই এই প্রোটিনের অভাবে কত শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি হচ্ছে না, সামান্য ভিটামিনের অভাবে রাতকানা হয়ে যাচ্ছে৷
এ কি সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোন জরুরি বার্তা নয়? ভাবতেও লাগে ভয় – তবুও ভাবনা এসে ভিড় করে৷
সবাই করোনামুক্ত থাকুন আর মন পুড়িয়ে জামরুল, আম, জাম, কাঁঠাল, কাউয়া- ডৌয়া, যার যা খেতে ইচ্ছে করে খেয়ে যান৷