প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৬ আগস্ট, ২০২০, বৃহস্পতিবার
প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার
একাদশ ব্যাচ,
শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম), বরিশাল
বলা হয়ে থাকে যাদের বডি ইমিউনিটি ভাল তাদের উপসর্গ আসে না, উপসর্গ থাকলেও তেমন কাহিল করতে পারে না৷ তাই বডি ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য ফেসবুকীয় পথ্য সেবনে আমরা চিকিৎসক হয়েও বাধ্য হচ্ছি৷ সামাজিক চাপ বলতে একটা কথা আছে না?
শুকনো কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা করোনা রোগীদের খুব সাধারণ উপসর্গ৷ এর সাথে অনেকের লুজ মোশন থাকে৷ শতভাগ মানুষের মাঝে যে কপ্লেইন পাওয়া যায় তা হচ্ছে – গন্ধ না পাওয়া ও খাবারের রুচি একদম উধাও হয়ে যাওয়া৷ যাদের ডায়াবেটিস, প্রেসার, কিডনির সমস্যা থাকে তাদের মাথায় অনেক চিন্তা সন্দেহ নেই৷ সবকিছুর পরও যদি ঠিকঠাক মতো চিকিৎসা চলে, তাহলে কোন সমস্যাই আসলে বাঁধ সাধতে পারে না আল্লাহর ইচ্ছায়৷ কো-মরবিডিটি নিয়ে ষাটোর্ধ বহু রোগীকে কোন জটিলতা ছাড়াই দিব্যি সুস্থ হয়ে যেতে দেখেছি৷
ইমিউনিটি বাড়ানো নিয়ে অনেক কথাবার্তা প্রচলিত আছে৷ তবে কোভিড ১৯ রোগকে প্রতিরোধ করার মতো কোন ইমিউনিটি বাড়ানো ফল সবজির কথা সরাসরি অস্বীকার করছে বিদেশী লিটারেচার৷ তবে তারা বলছে বডির ইমিউনিটি বাড়ায় এমন খাবার ফল সবজি খাওয়া যেতে পারে৷ সেই নামীয় তালিকায় রয়েছে পুষ্টি – কপার, আয়রন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক ও ভিটামিন এ, বি৬, বি১২, সি, ডি৷ সুষম খাবার খেতে উৎসাহিত করা হয়েছে, শারীরিক ব্যায়াম, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ঘুম নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ও স্ট্রেস ফ্রি থাকতে বলা হয়েছে৷ উপরোক্ত পরামর্শের আলোকে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার লেবু, মালটা, পেয়ারা, পেঁপে খাচ্ছি, আম খাচ্ছি৷ এক্সারসাইজ করছি, নামাজ পড়ছি কুরআন পড়ছি, গান শুনি মনোযোগ দিয়ে৷ বিশ্রাম করি – ঘুমাই৷ ফেইসবুকিং করে স্ট্রেস ফ্রি থাকার চেষ্টা করি৷ সুস্থ বিনোদনের সব পথ যেভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিভাবে অন্যকে পরামর্শ দেব ভেবে পাই না! কতদিন হল লঞ্চে উঠি না, কোথাও ঘুরতে যাই না! সুস্থ মানস কিভাবে থাকবে অটুট?
আমাদের মতো যারা মাইল্ড কোভিড তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন বরাবরই ভাল থাকাতে, খাবারে অরুচির মতো ক্ষুদ্র সমস্যাই বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়৷ আমি বুঝতে পেরেছি আমি ঝুঁকিহীন রোগী, তাই আমার কাছে রাউন্ডে এসে কোন সমস্যা আছে কি না জানতে চেয়েই ওরা চলে যায়৷ আমি এতেই তৃপ্ত – আলহামদুলিল্লাহ৷ কে একজন আমার ফেইসবুকের লেখার জবাবে লিখেছিল-
“যেদিন আপনার রুচি চলে আসবে সেদিন মনে করবেন আপনি সুস্থ হয়ে গেছেন৷”
গেল পরশুদিন বড় বোনের বাসা থেকে ইলিশ মাছ, ইলিশের ডিম, পোয়া মাছ ও ঢেঁড়স ভাজি পাঠিয়েছিল৷ তৃপ্তির সাথে খেলাম৷ আজ বোনের মতো বান্ধবী, ক্লাসমেট – সেনাবাহিনীতে আমার এক নম্বর জুনিয়র চৌকষ মেধাবী অফিসার বিশিষ্ট প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল লিজা চৌধুরী পাঠাবে খাবার৷ পরশুদিন রাউন্ডে এসে মেডিকেল বিশেষজ্ঞ আগাম জানান দিল-
“স্যার লিজা ম্যাডাম কী হয়? আপনার ফেইসবুকীয় তালিকার বাজার করাচ্ছেন, খাবার পাঠাবেন৷ সেদিন থেকেই এপিটাইট বেড়ে গেছে৷”
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরাই মানসিক বল ধরে রাখার কথা বলেন৷ করণীয়ঃ
- চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে পারলে মনোবল দৃঢ় থাকে, তার সাথে আত্মীয়স্বজন শুভাকাঙ্খীদের সব ধরনের সাপোর্ট এসময় মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য জরুরি৷
- রোগীকে প্রথমে মূখ্য ভূমিকা রাখতে হবে৷ নিজেকে যতটুকু সম্ভব সক্ষম ও হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ ভুলে গেলে চলবে না ভাইরাসে আক্রান্ত আমি, আমিই কোভিড ১৯ রোগী – এই আমাকেই যুদ্ধ করে বিজয়ী হতে হবে৷ অন্যরা হবে আমার সহযোগী৷ তাই সহযোগীদের সহযোগিতা নেওয়ার কৌশলটা আমাকেই আটতে হবে চতুরভাবে৷
- হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের নামে, সেবা কর্মীদের নামে অকারণে অভিযোগ উত্থাপন করা থেকে বিরত থাকা, পারলে তাদের ভাল দিকগুলোর প্রশংসা করা – কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হবে একজন জ্ঞানবান মানুষের কাজ৷
- সবকিছুতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা তার মধ্যে অন্যতম৷ নিজের চারদিকে অপছন্দের অনেক কিছুই হয়ে যাবে, এগুলো আমার এসময়ের চিন্তার বিষয় না৷
- চিকিৎসক, সেবিকা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, খাদ্য সরবরাহকারী- এদের সহযোগিতা করা ও সেবা আদায়ই এসময় আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷
যে কোন ভাল কাজের শুরুটা নিজে করলে তার সুদূরপ্রসারী ফল নিজের কল্যাণেই একদিন না একদিন ব্যয়িত হবে, সুফল একদিন আসবেই এটা সুনিশ্চিত৷ প্রয়োজন অপেক্ষার – ফাসবীর সাবরাণ জামিলা৷