প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১ জুলাই, ২০২০, বুধবার
প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার
একাদশ ব্যাচ,
শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম), বরিশাল
আমি এখন অদ্ভুত এক জিনিস নিয়ে লিখবো৷ যে জিনিস একেকজনের ক্ষেত্রে হয়তো একরকম হয়৷ আমার অবস্থান থেকে আমি বিষয়টাকে বিশ্লেষণ করার সুযোগ নিব৷
আশা ও আতঙ্ক
গুণীজনের টেলিফোন খুব ভালো লাগে, তাঁদের পরামর্শে আশান্বিত হই। কিন্তু কেউ যখন বারবার অক্সিজেন স্যাচুরেশন জানতে চেয়ে বয়সের হিসেব করতে শুরু করে, তখন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ঠিকঠাক থাকলেও মেন্টাল স্যাচুরেশন ধরে রাখা বেশ কঠিন!
আজ আমার এক স্টুডেন্ট খোঁজ নিল এবং একটা ওষুধ নেওয়ার পরামর্শ দিল৷ পরে তার বিশেষজ্ঞ বান্ধবীর সাথে কথা বলে ওষুধ শুরু করলাম৷ কারণ এমআরসিপি করা সেই বিশেষজ্ঞ বলেছেন,
“আপনি যেহেতু ভর্তি আছেন, সার্বিক বিবেচনায় আপনার জন্য আমি ওষুধটা সাজেস্ট করছি। ঝুঁকি কেন নিবেন?”
যৌক্তিক কথা বটে৷
এখানে বিভিন্ন বয়সের সারভিং ও অবসরপ্রাপ্ত অফিসার, সাথে তাঁদের পরিবার চিকিৎসা নিচ্ছেন৷ যারা চিকিৎসক নন, তাদের বাড়তি সুবিধা আছে৷ তারা অনেক কিছুই বুঝেন না- অতএব চিকিৎসকদের উপর পূর্ণ মাত্রায় আস্থাবান থাকলেই ভালো৷ অন্তত যে সমস্ত হাসপাতালের সার্ভিস ভাল, নেগলিজেন্স নেই; সেখানে একজন অনুগত রোগী হয়ে থাকাটাই শ্রেয়৷ তাই চিকিৎসক হলেও সিএমএইচে আমি চেষ্টা করি অন্যান্য রোগীদের মতো আচরণ করতে৷ আর যাই হোক অক্সিজেন লাগছে না- এটাই বড় স্বান্তনা!
কোন মানুষ বাসায় থাকলে টেরই পায় না, কখন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ এখানে যখনই কেউ খারাপ অনুভব করে, তার ব্যবস্থা একটা হবেই৷ গতকাল আমার কাশি দেখে ইনহেলার ও পুরান আট আনা সাইজের ট্যাবলেট দিয়ে গেল আমার পরিচিত একজন ডাক্তার৷ প্রথমটা গিলে খেলেও পরে দেখলাম অল্প পানিতে গুলিয়ে খেতে হয়, মিষ্টি একটা স্বাদও আছে৷ আজ যোগ করা হল কিছু ট্যাবলেট আর ইনজেকশন৷
এই যে খাতির যত্ন, এর বিপরীতে কাজ করছে অজানা ভয়- কখন কি না জানি হয়!
এ আতঙ্কের ব্যাপারে আমি মনে করি-
- নিশ্চিত বাঁচার গ্যারান্টি চাইলেই, ভয় আতঙ্কে রূপ নেয়৷
- নিজের উপর আস্থা থাকে না৷
- সব চিন্তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায় মুহূর্তেই৷
তাই যারা এটাকে নিছক চিকিৎসা হিসেবে মেনে নিয়ে স্রষ্টার উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখতে পারবেন, তারাই স্রষ্টার আনুকূল্য পাবেন- আমার দৃঢ় বিশ্বাস৷
সাতার জানা লোক নৌকাডুবিতে হাঁটু পরিমাণ পানিতে (চর এলাকা) যুদ্ধ করতে করতে আতঙ্কে মারা গেছে৷ অথচ দাঁড়িয়ে গেলেই বেঁচে যায়৷ শাড়ি পরা গ্রাম্য মহিলা বেঁচে গেলেও, আধুনিক শিক্ষিত পোস্ট গ্রাজুয়েট ডাক্তার সাহেব জীবনকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন৷
জীবন আপনার৷ বাঁচার জন্য স্রষ্টার কাছে আকুতি মিনতি তো করবেনই, সাথে থাকতে হবে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা৷
এটা বিজ্ঞান! নিজে লুকিয়ে কিংবা তথ্য গোপন করে সমাজকে ধোঁকা দিতে পারবেন৷ নিজেও ঠকবেন এবং সমাজকে ধ্বংস করতে পারবেন৷
বৈরী আবহাওয়ায় বেড়ি বাঁধ ভেঙে গ্রামে পানি প্রবেশের খবর শুনে, মাঝ রাতে কোদাল খোন্তা বেলচা নিয়ে যেমন পুরুষ-নারী-শিশু নির্বিশেষে সবাই রাস্তা মেরামতে ঝাঁপিয়ে পড়ে – আপনার জীবন বাঁচাতে আপনাকে তারচেয়েও বেশি আন্তরিক ও একনিষ্ঠ হতে হবে৷