১৯৫৩ সাল। Mrs. McK গিয়েছেন উত্তর ইংল্যান্ডের একটা ব্লাড ক্লিনিকে; উদ্দেশ্য- “রক্তদান!” তো তারপর কি হলো? তিনি ব্লাড ডোনেট করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলেন। আর ঐদিকে, সেই ক্লিনিকের একজন স্থানীয় চিকিৎসক ভদ্রমহিলার ডোনেট করে যাওয়া ব্লাড পাঠালেন স্ক্রিনিং টেস্টের জন্যে। কিন্তু, স্ক্রিনিং টেস্টের রিপোর্ট দেখে তিনি রীতিমত আঁতকে উঠলেন। এক ব্যক্তির শরীরে একই সাথে দু’ ধরণের রক্তের অস্তিত্ব! যা কিনা বায়োলজিক্যালি একজন মানুষের পক্ষে বহন করা অসম্ভব! স্থানীয় চিকিৎসক দ্বিতীয় বার ব্লাড গ্রুপ টেস্ট করতে গিয়ে আবারো দ্বিতীয়বারের জন্যে চমকে যান। কে জানে, এই রহস্যের আড়ালে রয়েছে কি..? তিনি দ্রুত Mrs. McK থেকে সংগৃহীত রক্তের ব্যাগ টি পাঠিয়ে দেন Medical Research Council Blood Group Unit in England এর দু’জন স্পেশালিষ্ট- Mr Robert Race এবং Mr Ruth Sanger এর কাছে।
Mr. Race নিজেও প্রথমদিকে এই রহস্যের কোন কুলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একজন বায়োলজিক্যাল মানুষের পক্ষে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের ব্লাড ক্যারি করাই সম্ভব। কিন্তু, Mrs. McK এর ক্ষেত্রে কেন এমন ঘটেছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে তিনি এই ভদ্রমহিলা’র যাবতীয় হিস্ট্রি সংগ্রহের কাজে নেমে পড়লেন। তখন দেখা গেল, Mrs. McK এর একজন যমজ ভাই ছিল। যে কিনা ১৯৫৩ সালেরও ত্রিশ বছর আগেই মাত্র তিন বছর বয়েসে মৃত্যুবরণ করেন। Mr. Race অনেক রিসার্চ করে বের করেন, Mrs Mck এর মায়ের গর্ভকালীন সময়ে Mrs McK ও তার যমজ ভাইয়ের ভ্রূণাবস্থায় পরস্পরের ভিন্নধর্মী Haemopoietic Stem Cell ইনফিউশন ঘটে। যার দরুণ, মাত্র তিন বছর বয়সে ভাইটি মারা যায় Intrinsic Haemolytic Anaemia-য় ভুগে। আর গর্ভকালীন সময়ে, ভাইয়ের দেহ থেকে বোনের দেহে খুব অল্প পরিমাণেই হেমোসাইটোব্লাস্ট ইনফিউশন ঘটায় বোনটি দীর্ঘদিন বেঁচে ছিল ক্রনিক ইলনেস নিয়েই।
…চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে Mrs. McK-ই হচ্ছেন প্রথম Chimeric (কাইমেরিক)। ১৯৫৩ থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন কাইমেরিক পেশেন্ট পাওয়া গিয়েছে পুরো পৃথিবী জুড়ে।
Chimerism (কাইমেরিজম)- বলতে বুঝায়, ভিন্ন ভিন্ন জাইগোট থেকে ভিন্ন ভিন্ন রকমের টিস্যু মিলিতে হয়ে একক জীবের জন্মলাভ। এই একক জীব টিকে বলা হয় Chimeric. এই কাইমেরিজমের দৃষ্টান্ত মানুষের মাঝে পরিলক্ষিত হবার বহু পূর্বেই নানান রকম স্তন্যপায়ী প্রাণী ও উদ্ভিদে দেখা গিয়েছে।
Chimeric Human (Animals): টুইন বেবি দের ক্ষেত্রে যখন দু’টো জাইগোট পাশাপাশি মাতৃ জরায়ুতে অবস্থান করে, তখন অনেক সময়ই একটি জাইগোট অপর জাইগোট টিকে আংশিক বা পুরোপুরি ভাবে এবজোরব করে বসে। ফলে, আংশিক এবজোরব হওয়া জাইগোট থেকে ত্রুটিপূর্ণ (ক্ষণজন্মা) বাচ্চার জন্ম হয়। আর, যদি দ্বিতীয় জাইগোট টি পুরোপুরি এবজোরব হয়ে যায়, তবে তখন একটিমাত্র বাচ্চাই জন্মগ্রহণ করে। এখানে দ্বিতীয় জাইগোট টিকে এবজোরব করা প্রথম জাইগোট থেকেই জন্মলাভ করে Chimeric Baby.
Chimeric Plants: উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এমন ভিন্ন ভিন্ন জাইগোট ফিউশন হবার কোন ব্যাপারস্যাপার নেই। উদ্ভিদের বেলায় যা ঘটে, তা হলো- একটি নির্দিষ্ট ধরণের জাইগোট থেকেই ভিন্ন ভিন্ন রকমের টিস্যু গঠিত হয় মিউটেশনের প্রভাবে। কিংবা, আমরা বিভিন্ন উদ্ভিদে যে কলব করে থাকি ভিন্ন ভিন্ন রকমের ফল/ফুল পাবার জন্যে, তাও এক ধরণের Chimeric Plant এর উদাহরণ।
Chimeric বাচ্চা গুলো বরাবরি সাধারণ সব বাচ্চাদের থেকে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়; যেমনঃ
১) এদের দেহে দু’রকমের DNA পাওয়া যায়। (আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, ওদের সাথে ওদের পিতা/মাতার DNA test করা হলে DNA similarity থাকে 0%। অথচ যেখানে একজন সাধারণ বাচ্চার তার পিতা বা মাতার সাথে সবসময়ই 50% DNA similarity দেখা যায়।)
২) এদের দেহে দু’ ধরণের রক্ত প্রবাহ দেখা যায়।
৩) এদের দেহে দু’ ধরণের ইম্যুনিটি সিস্টেম একই সাথে বাজায় থাকে।
৪) এদের দেহ একেক অংশে একেক রকম হাইপারসেন্সেটিভিটি (২ রকমের) কাজ করে!
৫) এদের কখনোবা দুই চোখের বর্ণ, কিংবা কখনো দেহের চামড়ার বর্ণ দু’রকমের হয়।
১) এদের দেহে দু’রকমের DNA পাওয়া যায়। (আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, ওদের সাথে ওদের পিতা/মাতার DNA test করা হলে DNA similarity থাকে 0%। অথচ যেখানে একজন সাধারণ বাচ্চার তার পিতা বা মাতার সাথে সবসময়ই 50% DNA similarity দেখা যায়।)
২) এদের দেহে দু’ ধরণের রক্ত প্রবাহ দেখা যায়।
৩) এদের দেহে দু’ ধরণের ইম্যুনিটি সিস্টেম একই সাথে বাজায় থাকে।
৪) এদের দেহ একেক অংশে একেক রকম হাইপারসেন্সেটিভিটি (২ রকমের) কাজ করে!
৫) এদের কখনোবা দুই চোখের বর্ণ, কিংবা কখনো দেহের চামড়ার বর্ণ দু’রকমের হয়।
৬) এদের দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এক পাশের কাঁধ অপর পাশের কাঁধের চাইতে অপেক্ষাকৃত উঁচু বা নিচুতে অবস্থান করছে।
Chimeric বাচ্চারা যেমন আর দশটা সাধারণ বাচ্চার থেকে ফিজিক্যালি ইউনিক, তেমনি আবার এদের শারীরিক সমস্যাও থাকে স্বাভাবিক বাচ্চাদের থেকে বেশিঃ
১) নিয়মিত দুর্বলতা,
২) তীব্র মাথাব্যথা,
৩) মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক,
৪) Chimer Patient কখনো কখনো সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা রাখেন। তবে সে ক্ষেত্রে, রোগীর Ovary/Testes এর টিস্যু টাইপ-ই তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের টিস্যুর গঠনপ্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয়,
১) নিয়মিত দুর্বলতা,
২) তীব্র মাথাব্যথা,
৩) মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক,
৪) Chimer Patient কখনো কখনো সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা রাখেন। তবে সে ক্ষেত্রে, রোগীর Ovary/Testes এর টিস্যু টাইপ-ই তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের টিস্যুর গঠনপ্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয়,
৫) মায়ের গর্ভাশয়ে থাকা যমজ বাচ্চা দু’টোর জাইগোট একই লিঙ্গের হলে, জন্মলাভ করা Chimeric বাচ্চাটিও একই লিঙ্গের হবে; শুধুমাত্র তার শরীরে দু’টো ভিন্ন ধরণের টিস্যু অবস্থান করবে। আর যদি, যমজ বাচ্চা দু’টোর জাইগোট ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গ প্রকাশ করে, এবং জাইগোট গুলোর মাঝে পরিপূর্ণ এবজোরবেশন ঘটে, তবে জন্মলাভ করা বাচ্চাটি হবে Intersex (উভলিঙ্গ) Chimeric.
কাইমেরিক পেশেন্টদের নিশ্চিতভাবে ডায়াগনোসিস করতে Blood & DNA test এর বিকল্প নেই।
ভাইয়া, লেখাটা এত কষ্ট করে বিভিন্ন বই, অনলাইন মেডিকেল জার্নাল, ইউটিউব ঘেঁটে ফেসবুকে লিখেছিলাম… আপনাদের এই পোস্টে এতটুকু সৌজন্যতাও কি আমি আশা করতে পারিনা? মেডিকেলীয় একটা সাইট হয়েও যদি একজন মেডিকেল স্টুডেন্টের সাথে এমন ব্যবহার করা হয়, তবে কি শিখবো আমরা এই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম?
ধন্যবাদ। ☺