প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ জুন ২০২১, শনিবার
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সিলর,
সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার,
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ।
কিছুদিন আগে তিনি সেশনে এসেছেন। কথা প্রসঙ্গে একপর্যায়ে বললেন, “ভালোবাসাটাই আমার জীবনে একটা অভিশাপ।”
উনার কথায় মনে পড়ল ছোটবেলায় রচনা পড়তাম, “বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ- পুরোটাই নির্ভর করছে ব্যবহারের উপর।”
তারপরে সেই কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প-
আমি বললাম, “কাউকে ভালোবাসাটা কঠিন কিছু না, যদু মধু কে, রহিম রহিমা কে, পল পলিকে ভালোবাসতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হলো যেই কমিটমেন্ট ও আবেগ দিয়ে ভালোবেসেছিলাম সেই মমত্ব শেষদিন পর্যন্ত দুটি মানুষ ধরে রাখতে পারলো কিনা! ভালোবাসার বৃত্তে একই বিন্দুতে তারা পরস্পরকে ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো কিনা? কারণ কক্ষপথ চ্যুতি কখনো কখনো অস্থির সময়ের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়ায়।”
হুমায়ূন আহমেদের একটা গল্প পড়েছিলাম, পাখি উড়ে গেলেও পালক পড়ে থাকে- “উইড়া গেল সোনার পঙ্খী পইড়া রইলো পালক।” এই পালকটিকে উনি মায়া বলেছিলেন। বিয়ের প্রথম দিককার উন্মাতাল ভালোবাসা হয় কিন্তু একটি নিউরোলজিক্যাল কেমিক্যাল এন্ডোরফিন এর জন্য। আস্তে আস্তে কেমিক্যাল সিক্রেশন কমে যায়। ফলে হানিমুন পিরিয়ডও মোটামুটি ছয় মাস থেকে দেড় দুই বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু যতদিন যায় মায়া বাড়ে। এই মায়াই আগলে রাখে সম্পর্কটাকে, আটকে রাখে মানুষ দুটিকে। জীবন সঙ্গীর প্রতি মায়া আর শ্রদ্ধা যদি থাকে, অস্থির চোখের পলকে হারানো ভালোবাসা না থাকলেও জীবন চলে যাবে। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার মতন, প্রতিদিন স্নানের জন্য আমাদের ঘটির জলই দরকার হয়।
যারা জীবনসঙ্গীকে শ্রদ্ধাভরে মায়া করেন, তাদের অবচেতন মনে ভালোবাসার নদীর ফল্গুধারা গোপনে বহে নিরবধি। তাদের জন্য অনেক ভালোবাসা।