প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ ই আগস্ট, ২০২০, মঙ্গলবার
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সিলর
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বাংলাদেশ
একজন প্রশ্ন করেছিল, “ম্যাম, কারো সাথে সম্পর্ক যখন গলায় হাঁসফাঁশ দড়ি হয়ে দাঁড়ায়, তখন কি সম্পর্কটা টেনে নেয়া উচিৎ? নাকি শেষ করে দেয়া উচিৎ? নাকি সমাজের দোহাই দিয়ে “বাচ্চা নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে”, এটা ভেবে বাচ্চা নিয়ে নেয়া উচিৎ?”
তারপর সেই পুরাতন কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প۔
প্রশ্নকারিনী বিদুষী, সুন্দরী, আজন্ম বিত্তশালী লালিত্যে বেড়ে ওঠা, সামাজিক মাপকাঠিতে দারুন একটি চাকরি করা একজন মানুষ। তার নিজ যোগ্যতার কোথাও কমতি নেই।
আমরা ছোট থেকেই মেয়েদের তৈরি
করি ভালো রেজাল্ট, নাচ-গান, আবৃত্তির-ছন্দে সমাজের চোখে লক্ষী কর। কিন্তু কিছু কিছু অভিভাবক তথাকথিত সুপাত্রে বিয়ে দিয়ে এতোই তৃপ্ত বোধ করেন যে মেয়ের প্রতিদিনের নির্যাতনের আগুনে পুড়ে যাওয়া মন, বালিশে কান্নার দাগ কিছুই দেখেন না। শরীরে মারের দাগ দেখা যায়, কিন্তু মনের আঘাতের চিহ্ন কি দেখানো যায়? নিজের মেয়ের কষ্টের থেকে লোকে কি বলবে সেটাই তাঁদের কাছে মুখ্য। কবির ভাষায়, ‘পাছে লোকে কিছু বলে!’
তার মানে কি তাঁরা নিজের মেয়েকে ভালোবসেন না? অবশ্যই ভালোবসেন। বাবা মা’র থেকে সন্তানকে কেউই বেশি ভালোবাসে না! এনারাও ব্যথিত মেয়েকে রক্ষা করতে না পারবার অসহায়ত্বের কষ্টে ঠুকরে ঠুকরে কাঁদেন। কিন্তু সমাজ কি বলবে এটাই তাদের ধারণায় বেশি প্রাধান্য পায়। মেয়ের জীবন থেকে সমাজ এতোটাই বড় এইটাই এ ধরণের অভিভাবকদের ‘লিমিটেশন অফ থট’। আমাদের সবারই নানা রকম লিমিটেশন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পারফেক্ট বলে তাই আসলে কিছুই নেই।
কিন্তু মেয়েটির কি হবে? ‘যে সহে সে রহে’- এই মন্ত্র কত দিনের রক্ষা কবজ হবে তার? একজন মানুষ কতক্ষন ধরে, কত দিন পর্যন্ত, কতটুকু সহ্য করবে? প্রতি দিন মরে মরে লক্ষী মেয়ে হলে আসলে কার লাভ?
রবীন্দ্রনাথের সেই কথাই মনে পড়ে, “কাদম্বিনী মরিয়া প্রমান করিল সে মরে নাই।”
মেয়েটি মরে যাওয়ার পর অন্যের প্রদত্ত লক্ষী মেয়ের খেতাবে মেয়েটির বা তার সেই অসহায় বাবা মা’র আর কি আসে যায়?
যাঁরা মানসিক নির্যাতনের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ান তাঁদের জন্য অনেক ভালোবাসা।