প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩১ শে আগস্ট, ২০২০, সোমবার
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সিলর
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বাংলাদেশ
“জানেন আমার নিজের মা বলে আমারই দোষ, আমি ওকে বেঁধে রাখতে পারি নাই। মেয়েদের বেঁধে রাখতে পারাটা নাকি শিখতে হয়, আমার সেই শিক্ষা নাই।”
মেয়েটি একটা প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে- যার আন্তর্জাতিক রাঙ্কিং ১০০’র মধ্যে!
কলেজ থেকে প্রেম। দুজনে দুজনার চোখ দেখলেই মনের কথা বুঝে এমন গাঢ় সম্পর্ক। তারপর দেশে দুর্দান্ত রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে স্কলারশিপ নিয়ে মেয়েটা পাড়ি জমালো সাতসমুদ্র তেরো নদী পাড়ে আরও পড়াশুনা করতে। প্ল্যান ছিল মেয়েটি ছেলেটিকেও নিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ছেলেটি দেশেই টুকটাক টিউশনি করার সাথে সাথে বেছে নিয়েছিল বিসিএসের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন সাধনা। অবশেষে সেই মহার্ঘ্য চাকরি নামের সোনার হরিণ ছেলেটির হাতে আসলো ঠিকই, কিন্তু মেয়েটি এবার সত্যি সত্যিই ছেলেটার মনোভূমিতে আক্ষরিক অর্থেই পররাষ্ট্র হয়ে গেল। ছেলেটি সম্পর্কটি ভেঙে দিলো!
তারপর সেই পুরোনো কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প۔
সম্পর্ক হয় দুইজন মানুষের মধ্যে। মেয়েটি সেই পুরানো মোড়েই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু ছেলেটি সেই মোড় ছেড়ে অন্য রাস্তায় পা বাড়িয়েছে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে একজন চাবি অন্যজন তালার ভূমিকা পালন করে। খাপে খাপে না বসলে মাধুর্যের লক খুলবে কেন?
প্রতিটি সম্পর্ক হচ্ছে ব্যাংকের ট্রান্সেকশনের মতো۔ একজন শুধু দেবে, অন্যজন তার বিনিময়ে যদি শুধু নিতেই থাকে তবে এখনই সতর্ক হোন। সঙ্গী হাঁটু পানিতে নামলে আপনি তার জন্য গলা পানিতে নামুন কেউ নিষেধ করছে না। কিন্তু একটু খেয়াল করুন তো কোন ইস্যু নিয়ে কখনো কি একবারের জন্য হলেও সে আপনার জন্য গলা পানিতে নেমেছিল?
মানুষের দিনে দিনে জামার মাপ যেমন বদলায়, তেমন সম্পর্কের চাহিদাও বদলায়। সেই পরিবর্তিত চাহিদা মেটাতে যদি সঙ্গী ছুটে যায় অন্য মোড়ে তার একক সম্পূর্ণ দায়ভার কি একান্তই আমার? অব্যশই না। কারণ সম্পর্ক হলো হ্যান্ডশেকের মতো আমি হাত বাড়ালাম আর সে বাড়ালো না, তাইলে তো হ্যান্ডশেক হলো না। একটা সম্পর্ককে রক্ষা করবার দায়িত্ব উভয়ের। একজনের উঁড়ু-উঁড়ু মন অন্যজন বেঁধে রাখবার অক্লান্ত চেষ্টায় প্রতিদিন অদৃশ্য যুদ্ধ করছে, এই মাইন্ড সেট পাল্টানোর সময় এসেছে।
সঙ্গী যদি ছুটে যায় সসম্মানে তাকে মুক্তি দেয়াই ভালো। কারণ জল ঘোলা করে সম্পর্ক জোর জবরদস্তি টিকিয়ে রাখলেও সেই ঘোলা জলে কারোরই সম্পর্কের তৃষ্ণার পানির চাহিদা মিটাবে না।
তাই ওই পুরাতন কথা, “পাখিটিকে ছেড়ে দাও, সে যদি ফিরে আসে পাখিটি তোমার”।
এতে দুটি লাভ। প্রথমত পাখিও বুঝলো অন্য ক্ষেতের দানাপানি তার সহ্য হয় না, আর দ্বিতীয়ত পাখি যদি চলেই যায় আপনিও বুঝলেন এই পাখি আপনার ছিলই না। তাই গেছে আপদ বিদায় হয়েছে!
আর যাঁরা এই উপলব্ধি করতে পারবেন কোনটা আপনার ছিলো, কোনটা না- তাঁদের জন্য অনেক ভালোবাসা।