প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, সোমবার
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
চিকিৎসক, কাউন্সিলর
ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ
ভদ্রলোক ও তাঁর স্ত্রী দুইজনই চাকরি করতেন। এখন জুন থেকে কারোর চাকরি নেই। মেয়ে পড়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছেলেটা কলেজে আর ছোটটা স্কুলে।
এর মধ্যে ফ্ল্যাটের লোন মাসে মাসে শোধ করতে হয়। অনেক টাকা বেরিয়ে গেছে ফ্ল্যাটের ডাউন পেমেন্টে। ভদ্রমহিলা বুদ্ধিমতী, পরামর্শ দিচ্ছেন সীমান্তবর্তী মফস্বল শহরে ভদ্রলোকের পৈতৃক ভিটে বাড়িতে কিছুদিন থাকতে। কারণ এতে অন্তত বাড়ি ভাড়াটা বাঁচবে। আর বাচ্চাদের তো অনলাইনে ক্লাস। তাই যেখানেই থাকুক কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু ভদ্রলোক এটা মেনে নিতে পারছেন না।
তিনি বলছেন,
“আপা নিজেকে অক্ষম মনে হচ্ছে, ওটা তো নামেই শহর আদতে গ্রাম। যেইখানে আমার বাবাই আমাকে রাখেন নাই, ওইখানে আমার আজীবন ঢাকায় জন্মকর্ম বাচ্চাদের কিভাবে নিয়ে ফেলবো? আপনার ভাবীর সবাই ঢাকায় সেটল ওদের কীভাবে মুখ দেখাবো? গ্রামের নিজের পরিচিতদের কি মুখ দেখাবো? লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে!”
তারপর সেই কাউন্সেলিং টেবিলের গল্প-
কথায় আছে “A penny saved, a penny earned” তাই এখন জমানোর স্বভাব গড়ে তোলা খুবই প্রয়োজন।
এই বৈশ্বিক মহামারীতে কিছু কিনতে হলে হুট করে না কিনে একটু ভেবে দেখি ওটা ছাড়া বিকল্প কি কি অপশন আছে আমার চলার মতো। খুব দরকার না হলে খরচ না করি।
কারণ সম্প্রতি বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সমীক্ষা বলছে, লকডাউন ও সাধারণ ছুটির ৬৬ দিনে দেশের ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছে। ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের শ্রেণি কাঠামোতে পরিবর্তন হয়েছে। হত দরিদ্রদের তালিকায় নতুন করে ২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ যোগ হয়েছে। এদিকে ব্র্যাক বলছে, ৯৩ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে।
তাই সাময়িক যদি আমার খরচ কমাতে হয়, ছোট বাসায় শিফট করি, গিফট দিতে না পারি এতে লজ্জার কিছু নেই, এই সময়ের এটাই ট্রেন্ড।
একটু অপেক্ষা করি, এই মহামারী কমবে। আবার নতুন কাজের জায়গা তৈরী হবে। ততদিন পর্যন্ত শুধু নিজেদের বাঁচিয়ে রাখি, সুস্থ রাখি। এরপরে আবার একদিন হুলুস্থুল পার্টি হবে। সেই বিশ্বাস মনে রাখি আর সেই আমোদ আহ্লাদে আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলবেন না কিন্তু!