প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ জুলাই, ২০২০, রবিবার
চিকিৎসকের প্রতি কৃতজ্ঞতাসরূপ কাঁঠাল নিয়ে হাজির হলেন কানের ক্যান্সার থেকে আরোগ্যলাভ করা কাজী জহিরুল ইসলাম। গত ৭ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলার সার্জারী বিভাগে এই ঘটনাটি ঘটে।
কাজী জহিরুল ইসলাম, পেশায় একজন কৃষক। তিনি অনেকদিন ধরে কানের ব্যথায় ভুগছিলেন এবং শুনতে পারছিলেন না। বহিঃকর্ণের এক প্রকার ক্যান্সার (বেসাল সেল কার্সিনোমা) -এ আক্রান্ত ছিলেন জহিরুল। কোভিড-১৯ এর এই সময়, জরুরি নয় এমন অপারেশনগুলো বন্ধ থাকার কারণে, অনেক চেষ্টা করেও জহিরুল কোথাও ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০৩ নং ওয়ার্ডে ভর্তি হন তিনি। গত ২৫ জুন, বিভাগটির কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জহিরুল ইসলামের কানের অপারেশনটি সফলভাবে সম্পন্ন করেন।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে যেকোন ক্যান্সার আরো ভয়ংকর পরিণতির দিকে যাচ্ছে। যে ক্যান্সারগুলো থেকে অপারেশনের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, সেগুলোও দেরি হওয়ার কারণে অপারেশন করার মত অবস্থায় থাকছে না। এক্ষেত্রে শুধু রোগী বা রোগীর লোক নয়, চিকিৎসকরাও অসহায়।
জহিরের এই অপারেশন সম্পর্কে বিভাগটির মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তফা কামাল আরেফিন জানান,
“আমরা এখানে একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করেছি, পলিডন পদ্ধতি – যা নাক, কান, গলা বা মাথার অপারেশনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অপারেশনগুলোর ক্ষেত্রে শ্বাসতন্ত্রের সরাসরি সংস্পর্শে আসার কারণে, করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে অপারেশনের সময় চিকিৎসকদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। আমরা বেশ কয়েকটি অপারেশন করেছি এটি ব্যবহার করে।”
কাজী জহিরুল ইসলাম অপারেশনের দুইদিন পরই হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যান। পরবর্তীতে অনেকটা সুস্থ বোধ করলে, গত ৭ জুলাই অপারেশন করা চিকিৎসকের জন্য কৃতজ্ঞতাসরূপ কাঁঠাল নিয়ে আসেন তিনি। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোস্তফা কামাল আরেফিন এ বিষয়ে লিখেন,
কর্ণ ক্যান্সারে কাতর কুমিল্লার কৃষক কাজী কাঁদিতে কাঁদিতে কহিত কর্ণের কষ্টের কথা।
কহিত-
“কান কেন কনকন করে?”
কর্ণচিকিৎসক কহিত-
“কান তো কনকন করিবেই, কারণ কনকন করানোই ক্যান্সারের কাজ। কর্ণকে ক্যান্সারমুক্ত করালেই কেবল কষ্ট কমিবে।”
করোনাকালে কঠিন কারূকার্যময় কর্ণচিকিৎসার কারণে ক্যান্সারমুক্তির কৃতজ্ঞতায় কাঁঠাল কাটিয়া, কাঁধে করিয়া, কেলাইতে কেলাইতে কাজী কাল কহিল-
“করূণাময়ের করূণায়, কর্ণচিকিৎসকের কারুকার্যে (কারিশমায়), ক’দিনেই কর্ণ ক্লেশমুক্ত।”
কাঁঠালের কোষের কথা কিছু কহিলাম না। করূণাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা।