প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, মঙ্গলবার
সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে – “কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবে পিসিআর পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস শনাক্ত কার্যক্রম এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন করোনার উপসর্গ থাকা নমুনা দেওয়া ব্যক্তিরা।”
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল আজাদকে উদ্ধৃত করা হয়, “গত ৩০ নভেম্বর থেকে ল্যাবে সমস্যা দেখা দেয়। ল্যাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে আমরা সমাধানের চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। এখন ঢাকা থেকে লোকজন এসে এটি ঠিক করবেন।”
পাঠকের মনে হতে পারে উহানের লেভেল-০৪ বায়োসেইফটি(জৈবসুরক্ষা) ল্যাব থেকে নতুন ভয়ংকর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মতোই কোনো ভয়ংকর ঘটনার সংবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বিষয়টি আসলে তেমন নয়।
ল্যাবে রোগীর নমুনা নিয়েই কাজ হয়। পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত সবার সুরক্ষার বিষয় জড়িত থাকে। প্রত্যেকের নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় যে কেউ সংক্রমিত হলেন কিনা। কেউ কেউ হয়তো অসতর্কতায় সংক্রমিত হন। ল্যাবের লোকজনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেলে এবং পরীক্ষাধীন রোগীর নমুনায় পজিটিভ সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে বিভিন্ন স্পর্শতল, যেমন টেবিল, দরজা বা ড্রয়ারের হাতল, ল্যাবের ফোন ও অন্যান্য তল থেকে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যদি পজিটিভ হয়, তাহলে ধরে নেয়া যায় যে সংক্রমিত নমুনা থেকে ভাইরাস ল্যাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে নতুন করে নেয়া রোগীর নমুনা যাই পরীক্ষা করা হবে, ভুল (পজিটিভ) হতে পারে। অন্যদিকে ল্যাবের কর্মরত ব্যক্তিরাও বেশি বেশি আক্রান্ত হতে পারেন।
অথচ এই ছড়িয়ে পড়া কিন্তু সেই ছড়িয়ে পড়া নয়, যেমনটি উহানে প্রথম ছড়িয়ে পড়ার সময় সংবাদে এসেছিল। এখন ইতিমধ্যে কমিউনিটি তে ভাইরাস ছড়িয়েই আছে। তেমন সংক্রমিত কেউ এসে অসতর্কভাবে হাঁচি দিলেই হলো। ঘরভর্তি মানুষ ও আসবাবে ছড়িয়ে যাবে ভাইরাস সমৃদ্ধ ড্রপলেট। ল্যাবে ড্রপলেট ছড়িয়ে গেলে রিপোর্ট সঠিক নাও হতে পারে। সুতরাং সম্পূর্ণ ল্যাব পুনরায় জীবাণুমুক্ত করে পরিস্কারের পর আবার কাজ শুরু করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, দেশে একমাত্র বায়োসেইফটি লেভেল-৩ ল্যাব হলো আইইডিসিআর এর। নবগঠিত ল্যাবগুলো তে বায়োসেইফটি-২ মেইনটেইন করাই কঠিন। ভাইরাস নিয়ে কাজ করতে হলে কমপক্ষে লেভেল ৩ ল্যাবে কাজ করতে হয়।
দেশের সাহসী ল্যাব টেকনিশিয়ান, টেকনোলজিস্ট, ল্যাব এক্সপার্টরা এত সীমিত সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছেন।
যেসব ল্যাবে সমস্যা হয় -হতেই পারে, নৈমিত্তিক সমস্যা, যেহেতু সক্ষমতার বাইরে গিয়ে সার্ভিস দিচ্ছে; সেসব ল্যাবে আসা নমুনা অন্যান্য সচল ল্যাবে পাঠিয়ে রিপোর্ট করা হয়। যা কঠোর সরকারি নজরদারির মাঝে করা হয়।
এক্ষেত্রে সঠিক রেজাল্ট পেতে বিলম্ব হতে পারে। এটি অস্বাভাবিক সমস্যা নয়।
গত ১৫ এপ্রিল ২০২০ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ১৭ এপ্রিল মেশিন আনা হয়। ২৬ এপ্রিল ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ হয়। ২৯ এপ্রিল থেকে একটি পিসিআর যন্ত্রে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। পরে আরও একটি যন্ত্র যুক্ত করা হয়। এরপর দুটি যন্ত্র দিয়ে নমুনা পরীক্ষা চলে। গত ৩০ নভেম্বর থেকে ওই ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা আপাত বন্ধ রয়েছে। ফলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পরীক্ষার ফল পেতে বিলম্ব হচ্ছে ।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামের ল্যাবগুলোতে কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
দ্রুত এই সাময়িক সমস্যার সমাধান হবে এবং রোগীর অপেক্ষার অবসান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।