কুরবানিতে কোরবান রমজান আলী – ডাঃ মোঃ আল-আমিন

প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -২৮

” কুরবানিতে কোরবান রমজান আলী “

লেখকঃ ডাঃ মোঃ আল-আমিন
শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ

কুরবানীর ঈদেরর আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। তবে ঈদের বেশি আগে কেউ গরু ছাগল কেনার পক্ষপাতি নন। কারণ বাসা বাড়িতে গরু রাখার জায়গার সংকট। তাই ঈদের আগেভাগে আসিয়া সবাই গরু – ছাগল খরিদ করিবার জন্য মরিয়া হইয়া যায়। শুরু হয় বিভিন্ন রকম অসুস্থ প্রতিযোগিতা। কে কত কম দামে কত বড় গরু কিনিতে পারিতেছে কিংবা কে কত বেশি টাকা খরচ করিয়া গরু কিনিতেছে তাহার প্রতিযোগিতা। রমজান আলী তাহার সদ্য ক্রয় করা ফ্ল্যাটে মাসখানেক হয় আসিয়া উঠিয়াছেন। কিন্তু ক’দিন ধরেই রমজান আলী বড়ই অশান্তিতে আছেন। কারণটা হইলো তাহার পাশের ফ্ল্যাটের কুব্বত আলী। তাহার আদম ব্যবসার ধান্দা আছে। মালয়েশিয়ায় ট্রলারে করে লোক পাঠাইয়া তিনি কলা গাছ না, একেবারে বটবৃক্ষ হইয়া আছেন। দেশ- বিদেশেও নাকি ঘুরিয়াছেন অনেক। চড়েন লেটেষ্ট মডেলের পাজেরো স্পোর্টস গাড়ীতে, টানেন সুগন্ধি হাভানা চুরুট। তাহার লেবাস দেখিলে সৌদী আরবের বাদশা নামদারও শরমিন্দা হইবেন। রমজান আলীকে দেখিলেই এই কুব্বত আলী একগাল মিচকি হাসি দিয়া চুরুট অফার করেন। কখনো আবার বেগম সাহেবাকে নিয়া হাওয়া খাইতে বাহির হইলে তাহার বিলাশবহুল গাড়ীতে করিয়া লিফট অফার করেন। কুব্বত আলীর এই সকল বেহায়াপনা দেখিয়া রমজান আলী বিষম চিন্তায় পড়িয়া আছেন। কুব্বত আলীর এইসব জৌলুস দেখিয়া তাহার বেগম সাহেবার না আবার মতিবিভ্রম ঘটে। চিন্তায় চিন্তায় রমজান আলীর ক’গাছি চুলও পড়িয়া যায়। এতোসব জানিলে রমজান আলী অন্যত্র ফ্ল্যাট খরিদ করিতেন। যাহা হউক রমজান আলী সিদ্ধান্ত নিলেন বেগম সাহেবাকে তুষ্ট করার জন্য এইবার তিনি আর ভাগায় নয় আস্ত একখানা গরু ক্রয় করিয়া বাম্পার কুরবানী দিবেন। তাই তিনি তাহার শ্বাশুড়ী আম্মাজান,শ্যালক শ্যালিকা,তাহাদের জামাতা ও আন্ডা বাচ্চাকে আগেভাগেই দাওয়াত দিয়া আনাইয়াছেন। তিনি এখন তক্কে তক্কে আছেন কবে কুব্বত আলী গরু ক্রয় করেন তাহা দেখিবেন, অতঃপর তাহার চাইতে বিশাল গরু খরিদ করিয়া বেগম সাহেবাকে তাক লাগাইয়া দিবেন। এইদিকে বেগম সাহেবার জ্ঞাতিগোষ্ঠী অদ্যবধি গরুর চেহারা না দেখিয়া ত্যক্তবিরক্ত। শেষমেষ বেগম সাহেবা জিজ্ঞাসাও করিয়া ফেলিলেন যে, আম্মাজান জানিতে চাহিয়াছেন জামাই বাবাজি কি এবারো দাওয়াত দিয়া আনাইয়া গরুর ভাগার মাংস খাওয়াইবেন! তাহাতে তাহার অন্য জামাতাদের সামনে সম্মানহানি হইবে, ঘটনা যদি এবারও তাহাই হয় তাহা হইলে তিনি আগেভাগেই প্রস্থান করিবেন। রমজান আলী কোনো কথা বলেন না কেবল মুচকি মুচকি হাসেন। তাহা দেখিয়া বেগম সাহেবা কঠিন বিভ্রান্তিতে নিপতিত হন, বোন, বোন জামাইদের সামনে না আবারও শরমিন্দা হইতে হয়। যাহা হউক,ঈদের আগের দিন দুপুরে কুব্বত আলী একখানা নাদুসনুদুস ছাগল কিনিয়া আনিলেন। তাহা দেখিয়া রমজান আলীর আক্কেল গুড়ুম হইয়া গেলো। অবশ্য সাথে সাথে তিনি প্রীতবোধও করিতে লাগিলেন কুব্বত আলীর কুরবানির ব্যাপারে কৃপনতা দেখিয়া। তিনি সন্তুষ্টবোধ করিতে লাগিলেন যে তাহাকে আস্ত গরু নয় কুব্বত আলীর ছাগলের চাইতে একখানা বড়সর ছাগল কিনিলেই হইবে। তাহাতে তাহার আর কয় টাকাই বা যাইবে! ইহাতে করিয়া তিনি একদিকে যেমন কুব্বত আলীকে কুপোকাত করিতে পারিবেন তেমনি বেগম সাহেবাকেও দেখানো হইলো তাহার ছাগল কুব্বত আলীর চাইতে নধর। তিনি তৎক্ষণাত তাহার অপোগন্ড শ্যালকত্রয়কে ড্রয়ই রুমে ডাকিয়া গাবতলীর হাট হইতে সবচাইতে বড় ছাগলখানা কিনিয়া আনিতে ফরমান জারি করিলেন। ছাগল ক্রয়ের কথা শুনিয়া বেগম সাহেবা মরা কান্না শুরু করিয়া দিলেন, শ্বাশুড়ী আম্মাও মূর্ছা যাইতে লাগিলেন। শেষমেষ কিনা ছাগল! দুলাভাইয়ের আদেশে ত্রিরতœ ঝড়ের বেগে তিনটা বাজারের ব্যাগ হাতে হাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। বড় দামী ছাগল আজ তাহারা কিনিয়াই ছাড়িবে। তাহারা চলিয়া যাইবার পর রমজান আলী অবাক হইয়া ভাবিতে লাগিলেন উহারা বাজারের ব্যাগ নিয়া গেল কেন! পরে মনে হইলো বেশি বড় ছাগল হইলে তিন জনে ভাগাভাগি করিয়া আনিবে মনে হয়। রাত দশটা অতিবাহিত হইবার পরও ত্রিরতœ ফিরিয়া না আসায় তিনি কিঞ্চিত চিন্তাবোধ করিতে লাগিলেন। তিনি এসিতেও হাত পাংখা ঘুরাইয়া মাথা ঠান্ডা করিতে লাগিলেন।কিয়ৎক্ষন পরে কলিং বেল বাঁজিয়া উঠিলে রমজান আলী দৌড়াইয়া গিয়া দরজা খুলিলেন। অবাক হইয়া দেখিলেন বড় রতœ মোখলেস একাই আসিয়াছে। তিনি বিস্মিত গলায় সুধাইলেন ব্যাপার কি, ছাগল কই,বাকী দুই রতœই বা কই?
দাঁত বের করে হাসতে হাসতে মোখলেস তাহার পিছনে দেখাইলো। রমজান আলী অবাক হইয়া দেখিলেন শ্যালকের পিছনে চারটা কালো রং এর উচু উচু পা দেখা যাইতেছে। তিনি মাথা তুলিয়া তাকাইতেই হাঁ হইয়া গেলেন, চার পায়ের ওপর বিশাল একটা কালো দেহ দেখিয়া। ইয়া মাবুদে এলাহী ! ইহা কি?
গর্বের সাথে মোখলেস বলিলো, আপনের কথা মত হাটের সব থ্যাইক্কা বড় ছাগলডা লইয়া আসলাম, ইম্পোর্টেড ছাগল। সৌদি আরব থ্যাইক্কা পাসপোর্ট ভিসা করিয়া আনা। বিশাল ছাগলটা দেখিতে ইতিমধ্যে আশেপাশের ফ্ল্যাটের লোকেরাও চলিয়া আসিয়াছে। খুশীতে আটখানা হইয়া রমজান আলী শ্যালককে বলিলেন সত্যিই তুমি বড় কাজের। এত বড় ছাগল আমি কেনো , আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীও দেখে নাই। দাম জিজ্ঞেস করায় সে বলিল, দাম মেলা, এক লক্ষ বাহান্ন হাজার টাকা। সৌদী ছাগল বলিয়া কথা! দাম শুনিয়া রমজান আলীর মাথা বন বন করিয়া ঘুরিতে লাগিলো। তাড়াতাড়ি ফ্রিজ হইতে ঠান্ডা পানির বোতল আনিয়া ঢকঢক করিয়া পানি খাইতে লাগিলেন ও পাংখা ঘনঘন নাড়িয়া ব্রক্ষতালু শীতল করিতে লাগিলেন। রাগে তাহার শরীর জ্বলিয়া যাইতে লাগিলো । বড় দামী ছাগল আনিতে বলিয়াছেন, তাই বলিয়া এই সর্বস্ব ডুবানো ছাগল! এখন তিনি টাকা দিবেন কোথা হইতে। বড় রত্ন নাকি আবার বাকী দুই রত্নকে ছাগল বন্ধক রাখিয়া আসিয়াছে! ওইদিকে ছাগলের দাম শুনিয়া বেগম সাহেবার কান্না ও শ্বাশুড়ী আম্মার মূর্ছা বাড়িয়া গিয়াছে। এইদিকে ছাগলের বেপারী টাকার জন্য দাড়াইয়া আছে, সাথে পুলিশও আসিয়াছে ছাগলের নিরাপত্তা বিধানের জন্য। ক্যামেরা হাতে কয়েকজন সাংবাদিকও আসিয়াছেন। কুরবানীর হাটের সবচেয়ে দামী ছাগল বলিয়া কথা, তাই এই সাংবাদিক ভাইয়েরা সাক্ষাতকার লইতে ‘বাহাত্তর’ টিভি হইতে আসিয়াছেন। সাথে আরো আসিয়াছেন সালাম টিভি, শাহীন টিভির ক্রুরা। সঙ্গে আরো আছেন দৈনিক ‘গতকালের খবর’ পত্রিকাসহ আরো কয়েকটি পত্রিকার সাংবাদিকও।

শুধু তাহাই নহে তাহাদের পিছন পিছন ইনকাম ট্যাক্সের ইনসপেক্টরও আসিয়া হাজির! এইসব তেলেসমাতি কান্ড কারখানা দেখিয়া রমজান আলীর মাথা আবারো পুরাপুরি আউলাঝাউলা হইয়া গেলো,তিনি গর্জন করিতে করিতে বেগম সাহেবাকে রান্না ঘর হইতে রাম-দা’টা লইয়া আসিতে বলিলেন ও বড় রত্নটাকে তালাশ করিতে লাগিলেন। তিনি তাহার খোয়াড়ের সবচাইতে বড় ছাগলটাকে আইজ-ই কুরবানি করিবেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

জিতে যাবার মিশন - ক্যাপ্টেনঃ ডা. মো. মাহরুফ বিন নজরুল

Wed Sep 5 , 2018
প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -৩৪ ” জিতে যাবার মিশন “ লেখকঃ ক্যাপ্টেনঃ ডা. মো. মাহরুফ বিন নজরুল ১# মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই মনটা ভীষণ ফুরফুরে হয়ে গেল। অ্যালার্মের অ্যাপসটা শো করছে সকাল ৫ টা ৩০ মিনিটের আগে এখনো প্রায় ৭ ঘন্টা ৪৭ মিনিট বাকী আছে। বিশাল এক রাত্রি তার বিচিত্র সমাহার […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo