২৭ এপ্রিল, ২০২০, সোমবার
আমি কুর্মিটোলা হাসপাতালে পঞ্চম সপ্তাহের রোস্টার যোগ দিয়েছি। যদিও এটা ১০ দিনের হয়ে যাবে, ডাক্তার স্বল্পতার জন্য। যাই হোক, সেটা আমরা কাজ করে চালিয়ে নিব।
আমার অল্প কয়দিনের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখেছি,
১) যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন না বা এমন নিয়ম ভঙ্গকারীদের সাথে ছিলেন।
২) করোনা দ্বারা আক্রান্তরা বিভিন্ন ভাবে আসেন, যেমন-
ক) কোনো উপসর্গ নাই
খ) মৃদু উপসর্গ
উপসর্গ হলো সাধারন ঠান্ডা জ্বরের মতো।
জ্বর, কাশি, সর্দি, মাথাব্যথা, স্বাদ-গন্ধ না পাওয়া ইত্যাদি।
গ) নিউমোনিয়া; যার উপসর্গ হলো জ্বর, কাশি, বুক ব্যথা, শ্বাস-কস্ট, দূর্বলতা।
ঘ) সিভিয়ার নিউমোনিয়া; যার উপসর্গ নিউমোনিয়ার মতোন, কিন্তু তীব্রতা বেশী।
ঙ) এআরডিএস; যার উপসর্গ শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট, নাড়ির গতি বেশি, রক্তচাপ কম ইত্যাদি।
চ) সেপসিস, যার উপসর্গ অনেক জ্বর অথবা হাইপোথারমিয়া/তাপমাত্রা কমে যাওয়া, রক্তচাপ কম, নাড়ির গতি বেশি, বোধশক্তি হারিয়ে ফেলা।
এটা সত্যি অধিকাংশ মাইল্ড, বাসায় চিকিৎসা নিলেই হয়। আইসোলেসন এ থাকবে, জ্বরে জন্য প্যারাসিটামল খাবে। অ্যান্টিবায়োটিক খাবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো। প্রচুর ভিটামিন সি ও পানি খাবেন, পুস্টিকর খাবার খাবেন। তারা দ্রুত সেরে যাবেন। কিন্তু উনারা প্যানিক হয়ে হাসপাতালে আসলে, আরও মানুষ আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেন। অনেকে করোনা টেস্ট এর জন্য অস্থির হয়ে পড়েন! টেস্ট করানো জরুরী কিন্তু মনে রাখতে হবে, আপনি যেন অন্যকে আক্রান্ত না করেন। হটলাইন ফোন দিবেন, করনীয় জেনে নিবেন।
সিভিয়ার নিউমোনিয়া, এআরডিএস, সেপসিস নিয়ে
বয়স্কদের হচ্ছে, যাদের বয়স ৫০ এর বেশি এবং ডায়াবেটিক, হাইপারটেনসিভ, হার্ট – কিডনি জনিত রোগ আছে। কিন্তু দ্রুত চিকিৎসা নিলে তারাও ভালো হয়ে যাচ্ছে।
অনেকে মারা যায়, যা প্রায় ৫% এর মতো। কারণ আগে থেকেই অসুস্থ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, প্রেসার, ডায়ালাইসিস লাগে, স্ট্রোক হয়েছে এবং দেরিতে চিকিৎসা শুরু করেছে|
আমি এখন যেটা নিয়ে চিন্তিত তা হলো, উপসর্গ নাই এমন রোগী। তারা জানতে পারেন না তারা রোগ ছড়াচ্ছেন। তাই সচেতন ও হতে পারেন না।
আমি আজ ৪ জন এমন রোগী পেয়েছি, যাদের উপসর্গ নাই, কিন্তু করোনা সংস্পর্শের ইতিহাস ছিলো। তারা সবাই ডাক্তার বা নার্স হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তারা না জেনেই পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের মানুষদের হয়তো আক্রান্ত করে ফেলছেন। তাই এই বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে। সংক্রমন ঠেকানোর জন্য।
যেভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের রোস্টার এরপর কোভিড টেস্ট এর ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে তারা ভাইরাস এর উৎস হিসাবে থেকে ছড়াতে না পারেন তাদের পরিবারকে, কর্মক্ষেত্রকে|
ডা. ফাতেমা আক্তার চৌধুরী চমন
মেডিকেল অফিসার (সংযুক্তি), কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল