কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি কার্যক্রমের উদ্বোধন

মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল, ২০২৫

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আন্তঃবিভাগে রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় মেডিসিন ও শিশু বিভাগে রোগী ভর্তির উদ্বোধন করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: রিজওয়ানুর রহমান।

তবে আংশিকভাবে দুই বিভাগের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও, আপাতত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু হচ্ছে না। অন্যান্য বিভাগগুলো কবে চালু হতে পারে এবং রোগ নির্ণয় যন্ত্র গুলোর কার্যক্রম কবে শুরু হবে, সে ব্যাপারেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক তথ্য জানাত পারেনি। প্রাথমিকভাবে মেডিসিন বিভাগে সবোর্চ্চ ৪৫ জন ও শিশু বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জন রোগী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সেবা প্রত্যাশীরা জানিয়েছেন, অনেক বছর ধরেই এ হাসপাতাল কার্যক্রমের নতুন নতুন দিন ধার্য হয় কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে সেবা প্রদান করা হচ্ছেনা। তাদের দাবি অতি দ্রুত পূর্ণাঙ্গভাবেই হাসপাতালে কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে (কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটস ক্যাম্পাস) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, চারতলা করে দুটি হোস্টেল ভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দোতলাবিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদ এরই মধ্যে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানান্তর করা হয়। তবে মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু না হওয়ায় ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস করেন। শিক্ষার্থীরা দুটি ভাড়া বাসে যাতায়াত করেন। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে বর্তমানে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী আহাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, আপাতত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু হচ্ছে না। রোগী ভর্তি হতে হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার্ড বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জরুরিভাবে অনুমতি বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকদের পরামর্শে আসা রোগীদের ভর্তি করানো হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট, কিছু ওষুধ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষাুণিরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে যদি কোনো মেডিসিন ও শিশু বিভাগের রোগীদের রেফার্ড করতে হয়, তবে তা কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।

গত বছরের ১০ জুলাই ও চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু না হওয়ায় সেখানকার শিক্ষার্থী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এক পর্যায়ে হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল কবীর শিক্ষার্থীদের কাছে লিখিত দিয়ে জানান, ২০ দিনের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালু করবেন।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ ৬৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন। নার্স রয়েছেন ৩৯ জন। এর মধ্যে হাসপাতালের নিয়োগকৃত ১৯ জন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ২০ জনকে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩৬ জন আনসার সদস্য রাখা হয়েছে। তৃতীয় ও চর্তুথ শ্রেণির কর্মচারীও রাখা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, আপাতত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু হচ্ছে না। রোগী ভর্তি হতে হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার্ড বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জরুরিভাবে অনুমতি বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকদের পরামর্শে আসা রোগীদের ভর্তি করানো হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট, কিছু ওষুধ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষাুণিরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সাততলা ভবনে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি ৮৮টি কেবিন, ২৩ শয্যার সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ সেবা আছে। এ ছাড়া জরুরি সেবা দিতে আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা আছে। এদিকে হাসপাতালের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুনে অন্তত ৯০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও আসবাব কেনা হয়, যা বর্তমানে হাসপাতালের ভবনের ভেতরে পড়ে আছে। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি। অভিযোগ আছে, এ যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। এ নিয়ে দুদক কেনাকাটার কাগজপত্র নিয়ে তদন্ত করছে।

গণপূর্ত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর মৌজায় ২০ একর জমিতে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে ৫৩টি প্যাকেজে ৫২ জন ঠিকাদার কাজটি করতে থাকেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। তখন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৮ সালে প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্মাণের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১১ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়েও কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারেরা। দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি টাকা, যা প্রথমে ধরা ব্যয় থেকে ৪০৭ কোটি টাকা বেশি। ওই মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয়বারের মতো ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষ হয়।

প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

সার্বজনীন স্বাস্থ্য ও কল্যাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান

Tue Apr 8 , 2025
মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল, ২০২৫ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে জনসংখ্যা ও উন্নয়ন কমিশনের (সিপিডি) ৫৮তম অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুবসমাজের জন্য লক্ষ্যবস্তু উদ্যোগসহ সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্য ও কল্যাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) নিউইয়র্কের জাতিসংঘের বাংলাদেশ […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo