প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. নূর ইসরাত ৩৯ বিসিএস, আইসিইউ মেডিকেল অফিসার, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল৷
বাংলাদেশের প্রথম করোনা ডেডিকেটেড কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে, বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই ডাক্তারদের আবাসন বাতিল করা হয়েছে। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ মেডিকেল অফিসার, ডা. নূর ইসরাত তার ব্যক্তিগত কিছু মতামত দিয়ে ডাক্তারদের বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরেন।
যেতে নাহি চাই, তবু যেতে হয়৷ এভাবেই সবকিছু মেনে নিতে হয়। সবগুলো সিদ্ধান্ত এভাবেই আস্তে আস্তে মেনে নিচ্ছে করোনাকালের সবচেয়ে প্রথম সারির যোদ্ধা, স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রণোদনা, ২ মাসের বেসিক, হোটেল আরো কত কি? সব বাতিল হচ্ছে আস্তে আস্তে৷ বাতিল হচ্ছে না শুধু যাকে কেন্দ্র করে এতো আয়োজন, সেই করোনা৷ বিশ্বাস করেন, এগুলোর জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কেউ কাজ করছে না। আইসিইউতে যখন একটা রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, তখন কারো একবিন্দুও খেয়াল থাকে না, যে তার কি হবে! ঠিকই টিউব দেয়া, সাকশান দেয়া, নাকে নল দেয়া, সিপিআর দেয়া সব করেন। মানে একদম কাছে থেকে এক্সপোজার যাকে বলে। ওয়ার্ড ডিউটিতে রাউন্ডে প্রতিটি রোগীর পিঠে হাত দিয়ে স্বান্তনা দিতে অন্য কেউ আসে না এ বিপদের দিনগুলোতে, একজন বৃদ্ধ যখন একা এতগুলো রাত- দিন কাটায় হাসপাতালে, এটাই মানবতা। এগুলোর বিনিময় কেউ কোনদিন দিতে পারবে না, বিনিময় হয়ও না। আমরা চাই নিজেদের পরিবারের নিরাপত্তা৷ তাদের কোন অপরাধ নেই। আমার চাকরী আমার। আমার বাবা- মার কি অপরাধ? তারা কেন দেশের ক্রান্তিলগ্নে নিজের সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়ে ঝুঁকিতে পরবে? আমার নিজের আইসিইউতে আমাদের এক স্যারের খুব আপন একজন ভর্তি। আল্লাহ উনাকে সুস্থ করে দেন। স্যারের দু:খ উনি এটার জন্য দায়ী হয়তো! এরকম হাজার হাজার গল্প তৈরী হয়ে গেছে শেষ ৭ মাসে। কিন্তু সেগুলো খুব কমই সামনে আসে, এতো এতো মনোরঞ্জন করা খবরের মাঝে।
বাংলাদেশের ১ম করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের আবাসন বাতিল হয়েছে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা হয়নি। আমাদের চলমান গ্রুপটির সরকার নির্ধারিত ১৫ দিনের ডিউটি চলছে। ৭ দিন হল, এখনো ৮ দিন বাকি। আজ ১২ টায় হোটেল চেক আউট করা হল। কিন্তু আমরা কোন ডিউটি বাদ দিইনি। আমাদের মর্নিং, ইভিনিং, নাইট সব চলছে। আমাদের ব্যাগেজ-লাগেজ নিয়েও হাসপাতালে আছি আজ থেকে। আমাদের কি বাসায় যাওয়া উচিত, আপনারাই বলেন? আজও আমরা করোনা রোগীকে নিজ হাতে ধরে এসেছে একদম কাছ থেকে৷ ঢাকায় বাসা থাকাই কি সব? আমার কথাই বলি, আমার বাসায় জায়গা নাই আলাদা থাকার। আমার সন্তানকে আলাদা রাখা সম্ভব না। দেখলে দৌড় দিয়ে আসবেই। সে বুকে পাথর বেঁধে থেকেছি ৭ দিন। এখনো আমার ৮ দিন বাকি৷ বাসায় আমার বৃদ্ধ মা আছে, যার ডায়বেটিস, হার্টের সমস্যা সব আছে৷ আমার ছোট বাচ্চা, স্বামী আছে যারা কিনা নিজের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে এখন পর্যন্ত সুস্থ আছে। এরকম আমাদের প্রতিটি কভিড ডাক্তারদের। আর একটা দল হলো, বিশেষ করে ৩৯ বিসিএসের নতুন ডাক্তাররা যাদের ঢাকায় কেউ নেই। আবাসন নেই। তারা কোথায় থাকবে? একটা অবিবাহিত মেয়ে কিভাবে ডিউটি করবে?
আমাদের বড় স্যাররা, আমাদের অভিবাবকরা কি এ ব্যাপারে একটু নজর দিবেন? আমাদের নিজের নিরাপত্তাসহ, আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটু সহায়তা করবেন?