প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৯ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. কাওসার
ঢামেক, কে-৬৫
আমরা যা খাই তার অধিকাংশই খরচ করিনা, ফলে আমাদের শরীরে দিনের অতিরিক্ত পুষ্টি গুলো চর্বিতে রূপান্তর হয়। তাই আমাদের স্থুলতা বেশি।
সবাই চায় ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে! কিন্তু…
আচ্ছা তার আগে একটা ম্যুভির গল্প বলি। আমার প্রিয় এনিমেটেড ম্যুভি Wall-E, যেখানে মর্ত্যের কিছু মানুষ ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবী ছেড়ে বেশি আরামে আকাশে যেয়ে থাকে, হয় যন্ত্র নির্ভর, তারা শুধু খায়-দায়, আনন্দ করে আর ঘুমায়, ফলাফলঃ সবাই আস্তে আস্তে ফুলেফেঁপে এক একটা বেলুন হয়।
এবার একটু জাপানে ঘুরে আসি! সারা পৃথিবীর মধ্যে স্থুলতা তাদেরই সবচেয়ে কম, গড় আয়ু তাদেরই অনেক বেশি। এর পিছনে কারণ কি? তাদের পরিশ্রম। আমরা আমাদের বাচ্চাদের গাড়িতে করে স্কুলে দিয়ে আসি, নিয়ে আসি, ওদের বাচ্চারা খুব ছোট থেকেই একা একা হেঁটে স্কুলে যায়। আমাদের বাচ্চারা বাসায় বসে সারাক্ষণই হয় পড়াশুনা করে বা ভিডিও গেম খেলে, আর ওদের বাচ্চারা বাসায় ঘরোয়া কাজে বাবা-মাকে সাহায্য করে। ওদের যাদের অফিস কাছাকাছি তারা হেঁটে, তারপর ট্রেনে, ট্রামে বা সাইকেলে করে অফিসে যায়, আর আমাদের দেশে গাড়িতে, বাসে বা রিক্সায় চড়ে, হাঁটা হয় খুব কম। চেয়ারে বসা বাদ দিয়ে অন্যান্য কায়িক পরিশ্রম আমাদের খুব কম হয় বলা চলে।
অর্থাৎ ওরা দিনে যতটকু খায় ততটুকুই খরচ করে। ফলে তাদের শরীরে দিনের অতিরিক্ত পুষ্টি গুলো চর্বিতে রূপান্তরিত হতে পারে না, তাই তাদের স্থুলতা কম।
ওরা চপস্টিক দিয়ে অল্প অল্প করে খায়, আস্তে আস্তে চাবায়। ওরা বাসায় যা খায়, রেস্টুরেন্টে ঠিক সেই খাবার গুলোই পাওয়া যায়, আর আমরা বাসায় মোটামুটি স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেও রেস্টুরেন্টে খাই মাংস চর্বিতে ভরা ভারী খাবার বা ফাস্ট ফুড।
তবে কথা হল ফাস্ট ফুড, স্লো ফুড যা কিছুই খাইনা কেন, যা খাই তা খরচ করতে হবে, অন্যথায় তা জমা হবে – বাড়বে ওজন।
অনেকে মনে করে ভাত খেলেই শুধু মানুষ মোটা হয়! গ্রামের অনেক মানুষ এখনো তিনবেলা গামলা ভর্তি ভাত খায়, তাদের কে কতটুকু মোটা? একদমই না, কারণ ওই যে বলেছি, তারা যা খায় তা খরচ করে।
এবার আবার জাপানে ফিরে আসি, অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভাত তারাই বেশি খায়, বিভিন্ন খাবারে রাইস তাদের অত্যাবশকীয় উপাদান। তাই ভাত বাদ দিয়ে কিটো ডায়েট করতে হবে এবং ওজন কমানোর এটাই সবচেয়ে ভাল উপায়, এমন ধারণা একদমই অমূলক।
মস্তিষ্কের প্রধান খাবার কার্বোহাইড্রেট, তাই খাবারে এটি রাখতেই হবে। অন্যদিকে কিটো ডায়েটে শরীরে কিটো এসিড বাড়ে, যা পরে শক্তি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ঠিকই, আর এতে ফ্যাট জমে না, কমে ওজন। কিন্তু এই কিটো এসিড কিডনির উপর একটি নিরবিচ্ছিন্ন অত্যাচার চালায়, কারণ অতিরিক্ত কিটো এসিডকে বেশ কসরত করেই কিডনি থেকে বাইরে বের করতে হয়, আর এভাবে চলতে চলতে একটা সময় যে কিডনি ইনজুরি হবে না, তা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না।
কিছুদিন আগের ঘটনা, ভদ্রমহিলার বয়স ৩৫। কিটো করেছেন, ওজন কমেছে বেশ। কিন্তু তিনি সারাক্ষণই বেশ দূর্বল বোধ করেন, কাজে তেমন শক্তি পান না। একটা সময় কিটো বাদ দেন, হুট করে ওজন আবার আগের মতই, কিন্তু সমস্যা হলো তিনি এখনো আগের মত দূর্বল বোধ করেন, কখনো কখনো আগের চেয়েও বেশি, ব্লাড গ্লুকোজও কিছুটা বেশির দিকে। আমার ধারণা যেটা হল, দীর্ঘদিনের কিটো এসিডে অভ্যস্ত শরীরের সেলগুলো স্বাভাবিক সোর্স অফ এনার্জিকে এখন আর আগের মত ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারছে না, আর এ কারণেই তিনি দূর্বল বোধ করছেন।
তাই সবচেয়ে ভাল হয় স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, আর তা হল – ঠিক ততটুকুই খাবো যতটুকু আমার পক্ষে খরচ করা সম্ভব। ধরুন আজ অনেক বেশি খেলেন কিন্তু সারাদিনে তা খরচ করতে পারলেন না – শুয়ে বসে কাঁটিয়ে দিলেন, কাল তাহলে ফাস্টিং করুন, ব্যালেন্স হয়ে যাবে। Intermittent fasting is one of the best and standard ways of weight control.
উপবাস করুন, রোযা রাখুন। ইবাদতের উদ্যেশ্যেই মাঝেমাঝে রোযা রাখুন, সাথে বোনাস হিসেবে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
পাশাপাশি আর যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়টি মেনে চলতে হবে সেটি হলো, খাওয়ার আগে পানি পান করা, এতে মাত্রাতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ কমে যাবে – অল্প খাবারেই পেট ভরে যাবে। ক্ষুধা লাগলে পানি পান করতে হবে, ফলমূল শাকসবজি খেতে হবে, এতে সাপও মরবে (পেটও ভরবে – ক্ষুধা লাগবে না), লাঠিও ভাঙবে না (শাকসবজি ফলমূলকে নেগেটিভ ক্যালরির খাবার বলা হয়, কারণ এরা কোন শক্তি দেয় না, উল্টো এদের হজম করার চেষ্টায় শরীরের জমানো শক্তি খরচ হয়)।
তাই কোন অস্বাভাবিক ডায়েট নিয়ে মারামারি না করে, স্বাভাবিক খাবারই গ্রহন ও ব্যালেন্স করুন, ভাল থাকবেন ইনশাআল্লাহ।