কে পালিয়ে যাচ্ছে? পালানোর বুদ্ধিটিই বা কী?

০৭ এপ্রিল ২০২০:
ডা. শুভদীপ চন্দ
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

বুঝলাম না- কোথায় কে পালিয়ে যাচ্ছে? এদেশে পালানোর বুদ্ধিটিই বা কী?

শিল্পী: সূত্র চাকমা

গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে তেমন রোগী নেই। রোগীরা আসছেন কম। ট্রান্সপোর্টের অভাব বা করোনার ভয়- যে কারনেই হোক। একটি এলাকায় করোনা ঢুকলে সে হাসপাতালে থাকবেই- এরকম মানুষজন ভাবছে। তার উপর মাইকিং করে মোবাইল নাম্বার দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাথা ব্যথা, ঘনঘন পায়খানা, পিঠ ব্যথার চিকিৎসা মোবাইলেই নিয়ে নিচ্ছেন। ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম নয়, বলবো প্রায় শূন্য। কারন রোগীরা ভর্তিই হতে চান না। টিকিটের উপর ‘ডিনাইড এডমিশন’ লিখে বাড়ি চলে যান। ইঞ্জেক্টেবল ঔষধ দিলে বলেন ‘দিনে দুই/তিনবার এসে এসে দিয়ে যাব’। সেফট্রিয়াক্সন, ইনসুলিন বা এনঅক্সাপারিনের মতো ঔষধও এভাবে দিতে হচ্ছে।

বাস্তব গ্রাউন্ড থেকে কেউ কথা বলে না। হাসপাতালে কী শুধু জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট- মানে ফুসফুসের রোগীই আসে? স্কিনের রোগী আসে না? ইলেক্টিভ সার্জারীর রোগী আসে না? হার্টের রোগী চেক আপে আসে না? গায়নীর রোগী আসে না? রুটিন চেক আপ করার জন্য লোকজন আসে না? – এরকম অনেক ডিপার্টমেন্ট আছে। সেবা গ্রহীতারা যদি করোনার ভয়ে না আসেন, তারা যদি ভাবেন বর্তমান রোগে তো মরব না; করোনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকেও ছাড়ছে না। হাসপাতালে খামাকা গিয়ে রোগ না বাধাই- তবে কী সে ভাবনায় খুব বেশি অন্যায় হবে?

ইমার্জেন্সি সার্ভিস চলছে। আমাকে বলুন- মাথা ফাটিয়ে আসা রোগী মাথায় সেলাই পায় নি- দেখাতে পারবেন? প্র‍্যাগনেন্সি কমপ্লিকেশনে চিকিৎসা পাচ্ছে না- এরকম কি কোথাও পড়েছেন? ইমেডিয়েট সার্জারি লাগবে, সার্জারি হলো না- রোগী মারা গেল- এ ধরনের কিছু কী শোনা গেছে? হাড় গোড় ভাঙ্গায় প্লাস্টার ফ্লাস্টার হচ্ছে না- এরকম কোনো ভিডিও শেয়ার হয়েছে?

তাহলে কে পালালো? প্রাইভেট চেম্বার আপনি কাউকে বাধ্য করতে পারবেন না। তারপরও চেম্বার প্র‍্যাক্টিসে অনেক ফেক্টর কো-ফেক্টর থাকে। রোগী কম। আগে ২০ জন রোগী দেখতেন, এখন ২ জন রোগী- আগ্রহ থাকবে না! ঈদের আগে পরে এ ঘটনা সবসময় দেখা যায়। ঢাকা থেকে শুক্রবার গিয়ে রোগী দেখেন, এখন ট্রান্সপোর্ট বন্ধ- উনি কিভাবে যাবেন? প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতাল যত না ডাক্তারদের কারনে বন্ধ, তারচেয়ে বন্ধের বড় কারন- রোগীর ফ্লো কমে যাওয়া। তাদের দিক থেকে ভেবে দেখুন- তাদেরও স্টাফ আছে, খরচ আছে। এটা তাদের জন্য ব্যবসা। ব্যবসা না থাকলে তাদের পেট চলবে কিভাবে। সে দুশ্চিন্তা কী তাদের নেই?

হ্যাঁ, পার্টিকুলার কিছু রোগীর সমস্যা হচ্ছে। এরজন্য ডাক্তারদের পলায়নপর মন-মানসিকতার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী পূর্ব পরিকল্পনার অভাব। কোথায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে- সেটাই তো স্পষ্ট নয়। ধরুন আপনি হার্টের বাইপাস করা রোগী, এখন জ্বর নিয়ে কার্ডিয়াক হাসপাতালে চলে গেলেন- তারা নিবে না। এটি তো রোগী এবং রোগীদের ভাল’র জন্যই নেয়া হয় না।

ব্লেম গেম করে কি হয়! ডাক্তার কেউ কেউ, রোগী তো সবাই। ডাক্তারের পরিবারে কী রোগ নেই, উনি কী রোগী হতে পারেন না! তাই সমস্যা ধরে সমাধান খোঁজা উচিত। ফ্লু কর্নার, ফিভার কর্নার, আইসোলেশন ইউনিট, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বেড, আইসিইউ- কোন কোন হাসপাতালে আছে, কখন কখন ভর্তি নিচ্ছে- ডিটেলসে প্রকাশ করা হোক। বেড ফাঁকা আছে কি নেই- আপডেট দেয়া হোক।

আপনি হয়তো জানেন না- বিএসএমএমইউ-র কার্ডিয়াক সেন্টারে রোগী মেঝেতে ভর্তি করে না। তার বেড সম্পূর্ণ ফিল আপ থাকলে, ”সিট নাই” সিলে দুঃখ প্রকাশ করে রোগী রেফার করে। এখন আপনি হার্ট এটাক নিয়ে সেখানে গিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ- নাও পেতে পারেন। সেখানে সে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কিছু করার নেই। সে জনগণের টাকায় সরকারি মেডিকেলে পড়লেও তার কিছু করার নেই!

হেলথ সিস্টেম আপডেট করুন। সচেতনতা বৃদ্ধি করুন। কোন হাসপাতালে কতদূর চিকিৎসা হয়- জানুন। জেনে কথা বলুন। প্রয়োজনে পেইনফুল অভিজ্ঞতা দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা কিভাবে আরো ঢেলে সাজানো যায়, সাজেশন দিন- কাজে দিবে।

হাসপাতালে সব ডকুমেন্টেড হয়। গত বছরের এ সময়ের রোগী সংখ্যার সাথে তুলনা করুন। পিপিই আসার আগে কেউ পালায় নি। পিপিই পাওয়ার পরও কেউ পালায় নি। যদি পালিয়ে থাকে, নির্দ্বিধায় শাস্তি দিন। আকাশে বাতাসে আন্দাজে বান ছুঁড়ে লাভ কি?

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

আগামী দিনের বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর গ্রাফ সূচক ভয়াবহ কি?

Tue Apr 7 , 2020
তারিখ: ৭ই এপ্রিল, ২০২০ সন্দেহ নেই, অপ্রতুল টেস্ট ই বাংলাদেশের এই রক্ত হিম করা তথ্যের জন্য দায়ী। উপরের গ্রাফগুলো লক্ষ্য করুন। প্রতিটি গ্রাফই সেই দেশের ১ম সংক্রমণ রিপোর্টেড হওয়ার সময় থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত সংক্রমণ হারের একটি চিত্র তুলে ধরছে। প্রতিটি গ্রাফের প্যাটার্ন বা নকশা একই রকম- ১ম সংক্রমণ রিপোর্টেড […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo