শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মহামারী করোনা ভাইরাস। এর দ্বারা সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশেও। এই যুদ্ধের সম্মুখ যোদ্ধা হচ্ছে আমাদের চিকিৎসকেরা। তাদের সম্মানার্থেই আমাদের এ নিয়মিত আয়োজন “আমাদের ডাক্তাররা কি করছেন”।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ণ চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন,
“আমরা আপনাদের জন্যে হাসপাতালে আছি। আপনারা বাসায় নিরাপদ থাকুন। যদি আপনাদের কোন উপকারে কখনো এসে থাকি, তার জন্যে দয়া করে বাসায় থাকুন। এই যুদ্ধ এসে বেঁচে থাকলে ইনশাল্লাহ আবার দেখা হবে”
আমাদের চিকিৎসকেরা আমাদের জন্যে হাসপাতালে আছেন। আমরা তাদের জন্যে দয়া করে বাসায় থাকি? আমাদের দেশের অনেক মানুষই তার শারিরীক অসুস্থতার চেকআপের জন্যে বিভিন্ন ডাক্তারদের চেম্বারে যান। কিন্তু, এই দুর্যোগে ডাক্তারদের চেম্বার বন্ধ থাকায় তারা পড়েছেন বিপাকে। তারা কি চিকিৎসা করাবেন না, তারা কি সুস্থ থাকবেন না? অবশ্যই, এই দুর্যোগে আপনার আমার চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলে আমাদের প্রথম করণীয়, যে হাসপাতালে বা চেম্বারে আমরা দেখাতাম, সেখানে ফোন করে পরামর্শ করা যে প্রকৃতপক্ষেই আপনার শারিরীকভাবে উপস্থিত হয়ে পরামর্শ নিতে হবে নাকি আপাতত ঘরে বসেই আমার সমস্যাটার সমাধান করা যায়। চেম্বার চালু থাকলে একজন চিকিৎসকের আয় বহাল থাকে, তবুও তারা চেম্বার বন্ধ রেখেছেন রোগীদের স্বার্থ চিন্তা করে। আমাদের অনেক চিকিৎসকই টেলিফোনে পরামর্শ দিচ্ছেন রোগীদের। তাদের নিজেদের সুবিধা নয়, বরং চিন্তা করছেন রোগীর স্বার্থ। আসুন, আপনার, আমার, চিকিৎসক সবার স্বার্থে আপনার একান্ত জরুরী না হলে বাসায় থাকি। হটলাইন নাম্বার চালু আছে আপনারই জন্যে, যোগাযোগ করুন ১৬২৬৩ অথবা ৩৩৩ অথবা অন্যান্য হটলাইন নাম্বারে অথবা অন্যান্য টেলিমেডিসিন সেবার নাম্বারে।
যাদের জরুরী চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন তারা চলে যাবেন হাসপাতালে। কোভিড-১৯ এর সাথে সংশ্লিষ্ট কোন লক্ষণ আপনার থাকলে তা প্রথমেই জানাবেন। এটা আপনার, চিকিৎসক ও দেশের সকলের স্বার্থে প্রয়োজন। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিয়ে আপনাকে দেখবেন। আর না থাকলে তো কোন সমস্যাই নেই। চালু আছে সকল সরকারী হাসপাতাল, সকল স্বাস্থ্যসেবা চালু আছে দেশের ৬৯টি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের গাইনী ও অবস্ট্রেট্রিকস ডিপার্টমেন্টে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কোভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্ব তটস্থ, মৃত্যুর মিছিল চলছেই। এর মাঝেও থেমে থাকবে না নতুন শিশুর জন্মগ্রহণ, থেমে থাকবার যে নিয়ম নেই। থেমে নেই তাই চিকিৎসকেরাও। চলছে নিয়মিত রাউন্ড, চলছে অপারেশন। ইনডোর এ সুরক্ষা, তাই আক্রান্ত হবার সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। এ কারণে চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দিচ্ছেন ডিউটি ভাগ করে। একসাথে সকলে থাকলে সকলে আক্রান্ত হবেনও একসাথে। তাই সময় অনুযায়ী শিফট করে তারা রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছেন। কাজেই হাসপাতালে গিয়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে চিকিৎসক কম দেখতে পেলে তারা আপনাদের সেবা থেকে পিছপা হয়েছেন, এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। তারা আপনার, আমার চিকিৎসার জন্যেই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। যেসব চিকিৎসক কাজ করছেন করোনা ইউনিটে, তারা যেতে পারছেন না বাসায়, গেলেও থাকছেন পরিবার থেকে একদম আলাদা। তাদের এই আত্মত্যাগে আমরা সামিল তো হতে পারব না, অন্তত তাদের যোগ্য সম্মানটুকু দেই ?
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক/ জামিল সিদ্দিকী