কোভিড ১৯: অসচেতনতা ও বাঙ্গালী সত্ত্বা

প্লাটফর্ম নিউজ, ১৮ এপ্রিল, ২০২০:
অদৃশ্য এক শত্রুর সাথে লড়াই, যার সাথে লড়াই করার মত সামর্থ আমাদের নেই জানি! তাও কেন এত অসচেতনতা??
সব উত্তর খুঁজবো তার আগে একটু অতীতের সোনালি পাতা গুলো একটু চোখ বুলিয়ে নিই।
আমরা বাঙ্গালীরা কি ছিলাম?কতটুকু সজাগ ছিলাম? ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি নীল চাষী বিদ্রোহ,নুরুলদীনের সংগ্রাম, তিতুমীর এরা তো আমাদেরেই ইতিহাস। আমরাই তো ভাষার জন্যে নিজেদের রক্ত রাজপথে রঞ্জিত করেছি। স্বাধীনতার জন্যে পাকিস্তানের সাথে লড়েছি! সূর্যসেন,প্রীতিলতা,ক্ষুধিরামদের উত্তরসূরী তো আমরাই?
কিন্তু তারপর? তারপরে আজকে ২০২০ সালে এসে করোনা যুদ্ধে আমরা কেন পিছিয়ে? উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশদের হটাতে আমরাই তো অগ্রগামী ছিলাম। তাহলে আজ কেন পিছিয়ে?
গ্রামের রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে নি, বাজারে ভীর,চা স্টলে ভীর, জানাজায় লোক জমায়েত হচ্ছি, খেলাকে নিয়ে দুইগ্রাম মারামারি,সারাবছর যারা মসজিদে যায় নি তারাও মসজিদে নামায সীমিত করায় মিছিল করেছি।
তাহলে সমস্যাটা কোথায় ধর্মান্ধতা নাকি অশিক্ষা! না এই দুই এর মাঝেও আরেক কারন মানুষের মাঝে এখনো পাত্তাই পাবে না করোনা এমন একটা ভাব!.
সবচেয়ে মূল কারনটি যদি হয় ধর্মকে সঠিক ভাবে না জানা পাশাপাশি ভাইরাসকে সঠিক ভাবে না জানা। খুব ভাইরাল হওয়া কয়েকটা ভিডিও ক্লিপ এর জন্যে অনেকাংশে দায়ী।
“চক্ষু থাকিতে অন্ধ যাহারা আলোকের দুনিয়ায়,
সিন্ধু সেচিয়া গরল পায় তারা অমৃত নাহি পায়।”
আজ কোথায় ইতালির মাআমুন মারুফ? শীতের রাত আসলে আবার নেমে আসবেন? আপনাদের উচিত ধর্মের অপব্যাখা দেওয়া বন্ধ করা। এদেশের মানুষকে প্রথমেই বুঝানো হল,করোনা হচ্ছে অপকর্মের ফল, আপনারা পরহেজগার আপনাদের কিছু হবে না, যা হবে অন্য ধর্মতাবলম্বীদের হবে যারা মুসলিমদের উপর অত্যাচার করে যাচ্ছে। এসব চিন্তা সমাজের রন্ধ্রেরন্ধ্রে ঢুকে গেছে। প্রয়োজনে মহামারীর ইতিহাস খুলে দেখুন হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর শাসনামলেও সিরিয়া-প্যালেস্টাইনে প্লেগ রোগ দেখা দিয়েছিল। তখন তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদিস খুজেছিলেন। তাঁদের ঈমান আর আমাদের ঈমান? আমাদের সমাজের পরহেজগারি হচ্ছে অন্যের দোষ খুঁজে বের করে নিজেকে পরহেজগার দাবি করা। প্রকৃতপক্ষে যারা ঈমানদার তারা হাদিসে কি আছে খুজে দেখেছে কিন্তু তাদের সংখ্যা নেহাত কমেই। স্বপ্নের ব্যাখারআগে হাদিসগুলা প্রচার করলে আজকে গ্রামগুলাকে বাচানো যেত।
প্রতিনিয়ত মোবাইলে কাউকে কল দিতে গেলেই সচেতন হতে বলতেছে,টিভিতে প্রতিনিয়ত দেশ বিদেশের খবর আসছে। তবুও আমাদের মাঝে ভয় কেন আসতেছে না? কেন ঘরে থাকতে পারতেছে না মানুষ গুলো? প্রথমত, যুবকরা এই রোগে মরে না! অথচ মৃত্যু আসলে কেউ কোনোদিন ঠেকাতে পারে নি,সবাই জানি। তাই তারা ঘরে থাকবে না। কিন্তু আক্রান্তের বেশির ভাগই ২১ থেকে ৩০ বছরের। দ্বিতীয়ত, গরমের দেশে নাকি ভাইরাস বাঁচে না, এই ভুলটা প্রচারের জন্যেও কি তারা এতটা বেখেয়ালিপনা দেখাচ্ছে? প্রথম চল্লিশদিনে আক্রান্তের সংখ্যা আর মৃতের সংখ্যা অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করে ঘরে থাকুন। আজকের পরিস্থিতি দেখে হলেও সবাইকে ঘরে থাকা উচিত,স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা উচিত। গত কয়েকদিন ধরে সুস্থের চেয়ে মৃতের সংখ্যা বেশি! ভয় পাও বাঙ্গালি যখন ভয় পেতে হয় সময় চলে যাওয়ার আগে!
মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে হইত উৎস খুঁজে দিতে পারব না,কিন্তু সচেতন হতে বলে যেতে পারব। আসুন করোনা প্রতিরোধে হয় সচেতন,ধর্মান্ধতাকে পরিহার করি,সঠিক তথ্য জানি।

নিজস্ব প্রতিবেদক/ আনিসুর রহমান রিয়াদ

Publisher

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কেরানীগঞ্জে নতুন করে একজন করোনায় সংক্রমিত

Sat Apr 18 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ এপ্রিল, ২০২০: করোনার রেশ ছড়িয়ে পড়ছে দেশব্যাপী। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে নতুন করে আরো একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।উপজেলায় এ যাবৎ মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩২ জনে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর মোবারক হোসেন দিগন্ত জানান, শুক্রবার নতুন […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo