প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ০৮ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার:
ডা. রেজাউল করিম কাজল
সহযোগী অধ্যাপক,
প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, বিএসএমএমইউ
গত পরশু দিনের চেম্বার। ফরিদপুর, বিক্রমপুর, ভৈরব, শ্রীমঙ্গল, বগুড়া থেকে গর্ভবতী মায়েরা এসেছে। এদের প্রত্যেকের এক বা একাধিক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত সন্তান আছে, কারো সন্তান রক্ত নিতে নিতে চোখের সামনেই ফিরে গেছে সৃষ্টিকর্তার কাছে। আমার কাজ তাদের অনাগত সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করে বলা সন্তানের ভবিষ্যত। একটা সুক্ষ্ম নিডল মায়ের পেটের ত্বক, চর্বি, মাংসপেশি, জরায়ুর দেয়াল ভেদ করে গর্ভফুল বা গর্ভথলিতে প্রবেশ করানো হয়। গর্ভফুলের কোষ বা গর্ভের তরলের ভিতর ভেসে বেড়ানো ভ্রুণের কোষ থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়। আল্ট্রাসাউন্ড মনিটরে গভীর দৃষ্টি আর হাতে নিডল এর সুক্ষ্ম কারুকাজ। বহুদিন যাবত এই কাজে অভ্যস্ত। কিন্তু একটা কষ্ট প্রতিবারেই নতুন। একটা খারাপ রিপোর্ট মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রকাশ করা।
ডিএনএ সংগ্রহের পর কমপক্ষে ১ দিন বিশ্রাম এবং ৩ দিন দূরের ভ্রমণ নিষেধ। যারা এসেছিল তাদের ঢাকায় কোথাও থাকার যায়গা নেই, আর এই পরিস্থিতিতে থাকা সম্ভবও নয়। এই লকডাউন পরিস্থিতিতে ঢাকার বাইরে থেকে একজন গর্ভবতী মায়ের আসা যাওয়া কি যে কষ্টের ভাবা যায়না। বগুড়া থেকে মা এসেছে সবজিবাহী ট্রাকে, আমার চেম্বার থেকে ফিরে গেল কাওরান বাজার, সেখান থেকে রাত বারোটায় আবার সেই ট্রাকটা ছাড়বে। শ্রীমঙ্গল থেকে যে এসেছিল, সে ফিরে গেল, টেস্ট করা গেলোনা কারণ ইকোস্প্রিন জাতীয় ওষুধ খাচ্ছে, সেটা ৭ দিন আগে বন্ধ করতে হয়। প্রত্যেকের বাড়িতে থাকা সন্তানের শরীরে রক্তের জন্য হাহাকার। করোনাকালে রক্ত পাওয়াও কঠিন।
আজ বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। অনলাইনে স্বল্প পরিসরে পালিত হচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশ থেকে থ্যালাসেমিয়া প্রায় বিদায় নিয়েছে। আমাদের লজ্জা ঢাকতে চেষ্টা অব্যাহত তবে বেগবান নয়। থ্যালাসেমিয়া সচেতনায় কাজ করা সরকারি সংস্থা, সংগঠন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, সাংবাদিক সবার প্রতি শুভকামনা রইলো । কৃতজ্ঞতা রইলো আমাদের রোগীদের প্রতি যাদের বিশ্বাস আর ভালোবাসায় আমাদের পথচলা।