কোভিড-১৯ টেলিসেবায় স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ মে, ২০২০, শুক্রবার

কোভিড-১৯ দূর্যোগে সারা দেশব্যাপী টেলিসেবা প্রদান করছে স্বাস্থ্য বাতায়ন-১৬২৬৩। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে জাতীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে, সিনেসিস আইটি’র তত্ত্বাবধানে এটি কাজ শুরু করে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতেই স্বাস্থ্য বাতায়ন এর কার্যক্রম শুরু হয়, ‘সরকারী হেলথ কল সেন্টার স্বাস্থ্য বাতায়ন’ নামে। ল্যান্ড বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের পরামর্শসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার একটি পদ্ধতি স্বাস্থ্য বাতায়ন।

স্বাস্থ্য বাতয়ন সম্পর্কে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের ইউকেএইডের অর্থায়নে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগ সেবাটি চালু করেছে। সেবাটি যেন নিজের আয়ে নিজেই চলতে পারে পরবর্তীতে সেই উদ্যোগ নেয়া হবে। ঢাকার একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি লিমিটেড সেবাটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে।
অযথা কোন ফোনকলে লাইন ব্যস্ত থাকার কারণে, জরুরী স্বাস্থ্য সেবাদান বিলম্বিত ও ব্যাহত না হওয়ার জন্য সেবাটি টোল ফ্রি রাখা হয় নি।’

তিনি আরো জানান, ‘মানুষ যেন বিনা পয়সায় সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ পায়—সেটাই ছিল স্বাস্থ্য বাতায়ন প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।’

স্বাস্থ্য বাতায়নের সেবাগুলোসমূহ হল:

*সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘন্টাই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ প্রদান।
দেশের যেকোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডাক্তারদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও ফোন নম্বর প্রদান।
*নিকটবর্তী অ্যাম্বুল্যান্সের জরুরি তথ্য ও বুকিং সুবিধা।
*স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক যেকোনো অভিযোগ ও পরামর্শ জানানোর ব্যবস্থা এবং প্রতিকারের পর তা জানিয়ে দেওয়া।
*যেকোনো দুর্ঘটনার তথ্য গ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো।
এই সেবা আরো বিস্তারের মাধ্যমে দেশের একমাত্র ওয়ান স্টপ হেলথ সলিউশন করার কাজ চলছে।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. নিজাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে আরও বেশিসংখ্যক অ্যাম্বুলেন্সকে স্বাস্থ্য বাতায়নের নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হচ্ছে। আর উবারের মতো সেবাও এখান থেকে পাওয়া যাবে। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোও স্বাস্থ্য বাতায়নের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি বহুতল ভবনে ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’-এর কার্যালয়।

কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘এখন দিনে এক লাখ কল গ্রহণ করার মতো প্রযুক্তি ও জনবলের সক্ষমতা তাঁদের আছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৭ দিনই এই কেন্দ্র খোলা থাকে। দিনে তিন পালায় চিকিৎসকেরা ফোনে কথা বলেন। এক পালায় ১২ থেকে ১৫ জন চিকিৎসক কাজ করেন। কল সেন্টারে ৮০ জন প্রশিক্ষিত চিকিৎসক আছেন।’

ডা. নিজাম উদ্দীন আহমেদ আরও জানান, ‘আগে ২৪ ঘন্টায় ৪৫ জন চিকিৎসক, ৯ জন স্বাস্থ্য তথ্য অফিসার কাজ করতেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ৮ মার্চের পর এই নাম্বারে কল করার সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে ১৬২৬৩ -এ বেতনভুক্ত চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ১৫০।’

মার্চে করোনাভাইরাসের সম্পর্কিত সাধারণ মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়ার জন্য আইইডিসিআর ১৭টি হটলাইন নম্বর চালু করে। কলের পরিমাণ বাড়তে থাকায় ‘করোনা ডক্টর পুল’ নামক একটি অ্যাপের মাধ্যমে কাজ করার আহবান করা হয় স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসকদের।

নিজেদের রোজকার কাজের বাইরে দেশের চার হাজারের বেশি চিকিৎসক যুক্ত হয়েছেন ‘করোনা ডক্টর পুল’ অ্যাপ এ। হটলাইনের সঙ্গে যুক্ত অ্যাপটিতে ৪ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক নিবন্ধিত হয়ে সেবা দিচ্ছেন। একটি বিশেষ অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে তাঁরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। গত মার্চ থেকে ৫ মে পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ কল গ্রহণ করেছেন স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকরা। ৭ মে পর্যন্ত ২ হাজার ৫৬৬ টি কল গ্রহণ করে সর্বোচ্চ কলগ্রহীতা ছিলেন ডা. মোঃ আবু তাহের সবুজ। স্বেচ্ছাসেবকদের এই ফ্রি সার্ভিসের বাজারমূল্য ৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ৭০ লক্ষ টাকার বেশি। (২ লাখ কল ৬ মিনিট করে হলে, গড়ে ৬ টাকা করে প্রতি মিনিট হিসাব করা হলে ৭২ লাখ টাকা)

গত ৮ মার্চ হতে ৫ মে পর্যন্ত স্বাস্থ্য বাতায়নে কল এর সংখ্যা ৩৩,৮৭,৭৩১, যার মধ্যে করোনা সংক্রান্ত কল ছিল ২৮,৩২,১৮৫ টি।

এর মধ্যে সাড়ে ৬ হাজার মানুষকে দিয়েছেন ব্যবস্থাপত্র, কোয়ারেন্টিন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ২ হাজার ৬০৪ জনকে। পাশাপাশি যেকোনো জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জরুরি ফোন নাম্বার, হাসপাতাল, প্রশাসনের কার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবেন সেটাও জানিয়ে দিচ্ছেন।

এই স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসকদের সমন্বয় করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (মেডিকেল বায়োটেকনোলজি) ডা. মো. মারুফুর রহমান। সরকারের কোভিড-১৯ বিষয়ক কার্যক্রমের প্রচার সহযোগী ও চিকিৎসকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘প্ল্যাটফর্ম’ এর ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকদের আহবান জানানো হয়।

এছাড়াও কোডিভ-১৯ সংক্রান্ত যেকোন জিজ্ঞাসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বাতায়ন এর নতুন সংযোজন ‘করোনা হেল্প বট’। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত ‘করোনা হেল্প বট’ মানুষের কথাবার্তা অনুকরণ করে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। যে কেউ সহজেই কোভিড-১৯ সম্পর্কে সাধারন তথ্য এবং আইইডিসিআরের প্রদত্ত গাইডলাইন অনুযায়ী ডিজিটাল টেস্ট করাতে পারবেন এই হেল্প বটের মাধ্যমে।

জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বাতায়ন এর চিকিৎসকরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কল এসেছে কিশোর বয়সীদের। মাদকের সমাধান খুঁজতে অথবা কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার জন্য নির্ভরযোগ্য স্থান হিসেবে কাজ করছে স্বাস্থ্য বাতায়ন। প্রায় সব রোগের চিকিৎসা সেবা পেতে ১৬২৬৩ নম্বরে কল আসলেও, প্রধান ১০টি রোগের তালিকা করেছে সিনেসিস আইটি। তালিকার শীর্ষে আছে ডায়রিয়া, এরপর আছে ভাইরাস ও ঠান্ডাজনিত রোগ। একইভাবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগীতা চেয়েও কল এসে থাকে এই নম্বরে।

চিকিৎসাসেবা নেওয়ার পর রোগীর মুঠোফোনে ছোট একটি ব্যবস্থাপত্র চলে যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। তাতে ওষুধের নাম, সেবনবিধি, চিকিৎসকের নাম ও মুঠোফোন নম্বর উল্লেখ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তাদের মতে এতে সেবাগ্রহীতার সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায় ও জবাবদিহীতাও নিশ্চিত করা যায়।

বর্তমানে স্বাস্থ্য বাতায়নে প্রতিদিন গড়ে ২০০-৩০০ জন চিকিৎসক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন। দিনে প্রায় ৩০-৪০ হাজার কল গ্রহণ করে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকরা।

তথ্যসূত্রঃ স্বাস্থ্য বাতায়ন, প্রথম আলো

নিজস্ব প্রতিবেদক/সুবহে জামিল সুবাহ

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

লাইফ ইন লকডাউন, ডে থার্টি ওয়ান

Fri May 8 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ মে ২০২০, শুক্রবার ডা. শুভদীপ চন্দ শুনেছিলাম কৈলাসে যাওয়ার চেয়ে ফেরার সময়ই নাকি বেশি লোক মারা যায়! আমাদের লকডাউন অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম হতে যাচ্ছে। আমরা কেন লকডাউনে গেলাম, আর কেনই বা তা থেকে সরে যাচ্ছি- স্পষ্ট নয়। লোক রাস্তায় নামছে, আক্রান্ত হচ্ছে। আমার উপজেলায় আজ প্রথম […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo