শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০২০
রোগীটা আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। শ্বাসকষ্ট নিয়ে। এক্সরে তে কনসোলিডেশান পাওয়া যায়। করোনা সন্দেহে রুগীর স্যাম্পল IEDCR এ পাঠানো হয়। রুগী আজগর আলী হাসপাতাল থেকে DORB (নিজ দায়িত্বে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ছাড়পত্র) নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সার্জারী ইউনিট ৫ এ এডমিট হয় পেটে ব্যথার কথা বলে।
সেখানে চিকিৎসকরা পেটে ব্যাথার কারণ খুঁজতে রুগীকে শারীরিক ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। সেই রুগীকে দেখার পর চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে রাউন্ড ও দেন। অন্য রুগীদের দেখেন। তারপর এই রুগীর শ্বাসকষ্ট বাড়লে থলের বেড়াল বের হয়ে আসে। রোগীর বাড়ি নারায়ণগঞ্জ কিন্ত ভর্তি হয়েছেন পুরান ঢাকার ঠিকানা দিয়ে। রোগী কোভিড ১৯ Suspected case ছিলেন তা লুকিয়েছিলেন যা পরে রিপোর্ট পেয়ে নিশ্চিত হন চিকিৎসকরা। তারপর এই রুগীকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রেফার করলে রাস্তায় মারা যান।
ফলাফল ডিএমসির সার্জারী ইউনিট ৫ লকডাউন। ইউনিট হেড থেকে শুরু করে সব চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ড বয় সহ ২১ জন কোয়ারেন্টাইনে। বন্ধ হয়ে গেলো একটা ইউনিটের সব সেবা। এখন বাকী রোগীরা চিকিৎসাসেবা পাবে কার কাছে ? এভাবে যদি আমাদের দেশের মানুষ তথ্য গোপন করতে থাকে তাহলে বিপর্যয়টা ভয়াবহ রুপ নিবে।
কোভিড ১৯ একটা ভাইরাসজনিত রোগ। এটা তো এইডস নয় যে মানুষকে লুকাতে হবে। এটাতো গোপন পাপ থেকে হয়না। তবে কেন এত লুকোচুরি??
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে এক ব্যক্তি মারা গেলেন। উনি কোভিড ১৯ কিনা তা নিশ্চিত নয়। উনার লাশ বহন করার জন্য খাটিয়া টা দিলোনা মসজিদ কর্তৃপক্ষ। নারায়ণগঞ্জে একজন কোভিড ১৯ উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে সারারাত বাসার বাইরে পড়ে ছিলো উনার লাশ। এইসব আচরণ কিন্ত সামাজিক অস্থিরতা ও বিপর্যয়ের হাতছানি দিচ্ছে। আমি মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো,মিডিয়া মানুষকে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীতে স্থবিরতা এনে দিয়েছে। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো এই ভাইরাস থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে এবং অন্যকে আক্রান্ত না করতে সচেতন হবার বিকল্প নেই।
ঘরে থাকুন।
নিরাপদ থাকুন।
আমাদের দেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে।
ইতিমধ্যে ১৫ জেলায় তা ছড়িয়ে পড়েছে।
রুগীর সংখ্যা ৪২৪, মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের, সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন।
করোনা ভাইরাস নিয়ে আপনি অযথা আতংকিত হচ্ছেন কেন?
একটা ভাইরাস জনিত অসুস্থতায় ৮০ ভাগ মানুষই কোন চিকিৎসা ছাড়া শুধু আইসোলেশানে থেকেই সুস্থ হয়ে যাবেন।
আমাদের ভয় রিস্ক গ্রুপ নিয়ে। যারা বয়স্ক মানুষ, যারা ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশান, হৃদরোগ,ফুসফুসজনিত রোগ,ক্যান্সার সহ নানা রোগে ভুগছেন এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উইক তারাই ঝুঁকিতে বেশি।। সেই জন্য এই গ্রুপটা যেন কোনভাবেই আক্রান্ত না হন সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। আমাদের দেশে কোভিড ১৯ এর জন্য আইসিইউ হলো ১১২ টা। ঢাকা বিভাগে ৭৯, ময়মনসিংহে ২৬,খুলনায় ৫, সিলেট ২। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগে কোন আইসিইউই নাই।
তাহলে অবস্থাটা অনুমান করেন কিভাবে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপ ব্যাপক হারে আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসা দেওয়া যাবে?
এখন সময় সকল নাগরিকের দায়িত্বশীল আচরণ করার।
সচেতন হতেই হবে।
ঘরে থাকতেই হবে।
শেষকথা করোনা ভাইরাসের এই যুদ্ধে সারা দুনিয়ায় চিকিৎসকরা নার্সরা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রিয়েল হিরো। সব মানুষের ভুল ত্রুটি আছে। মানুষ যখন তার মানবিক ত্রুটি থাকবে।
কিন্ত এখন বিষোদগার করার, খোঁচানোর, কটুকথা বলার সময় নয়।।
চিকিৎসকদের উৎসাহ দিন।
অনুপ্রেরণা মূলক, কৃতজ্ঞতায় ঋদ্ধ শব্দচয়নে পোস্ট দিয়ে সাহস দিন।
এতে চিকিৎসকদের মনোবল বাড়বে।
উদ্যম নিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আপনার জীবন বাঁচাতে তারা লড়ে যাবেন আনন্দচিত্তে।।
এন্টি ইনফ্লুয়েঞ্জা এন্টিভাইরাল Favipiravir যা এভিগ্যান নামে জাপানে পাওয়া যায় এবং Remdesivir এর পেইজ থ্রি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।
চায়না ৩৪০ জন পেশেন্টকে এভিগ্যান দিয়েছিলো এবং তারা বলছেন Clearly effective.
এগুলো আশার কথা।
ট্রায়াল শেষ হউক।
USFDA এপ্রুভাল পাওয়ার পরেই আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করতে পারবো।
ইথানল বাষ্প নিয়ে এই ভাইরাস মারা যাবেনা।
বরং ইরানে ৩০০ জন মানুষ ইথানল খেয়ে মারা গেছেন।
আপনারা নিজেরা চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী না হয়ে উঠে চিকিৎসকরা যা বলছেন তা মেনে চলুন।
এতেই আপনার পূর্ণ মঙ্গল নিহিত।
কিন্ত আপনি একজন সাধারণ নাগরিক হয়ে এসব নিয়ে না ভেবে খুব সহজ উপায়ে ঘরে নিরাপদে অবস্থান করে নিজেকে ও নিজ পরিবারকে করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে পারেন।
ঘরে থাকুন।
নিরাপদ থাকুন।
এটাই এখন দেশের জন্য আপনার অবশ্য করণীয় দায়িত্ব।
ডা. জোবায়ের আহমেদ
নির্বাহী পরিচালক, ডা. জোবায়ের মেডিকেয়ার সেন্টার, বিয়ানীবাজার, সিলেট