প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩১ মে ২০২০, রবিবার
ডা. কাওসার উদ্দিন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, কে-৬৫
কোভিড-১৯ পজিটিভ! অবশ্যই চিন্তার বিষয়, কিন্তু এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে কাউন্সেলিং বা পরামর্শ দেয়া অত্যন্ত জরুরি। সেলফ কাউন্সেলিং বা স্ব-পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি যারা কাছাকাছি আছেন এমন চিকিৎসক বা আত্মীয়, বন্ধু দ্বারা পরামর্শ নিতে হবে।
‘কোভিড-১৯ মানেই মৃত্যু নয়’
এটি একটি ‘অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ’ যা অন্য অনেক ভাইরাসজনিত রোগের মত কিছুদিন ভুগিয়ে নিজে থেকে কমে যেতে পারে আর এদেশে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর হার প্রায় ১ শতাংশ।
তেমন কোন ওষুধ ছাড়াই সঠিক বিচ্ছিন্নতা বা সঠিক উপায়ে আইসোলেশনে থাকা আর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিলেই অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে যায়। এমনকি অনেকেরই প্রয়োজন পরে না হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার।
সবাইকে সঠিক উপায়ে হাসপাতালে রাখতে পারলে চিকিৎসা প্রদানে সুবিধা হতো। কিন্তু সেটা আমাদের কেন, পৃথিবীর কোন দেশের পক্ষে সম্ভব না। চায়নার অস্থায়ী হাসপাতালগুলোতে বেশিরভাগই ছিল কেবিন আর ওয়ার্ড, এক কেবিনে অল্প ক’জন করে কিন্তু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটার ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব। এই অসম্ভব অবস্থার মধ্যেও আমরা যদি বিষয়টাকে গায়ের জোড়ে সম্ভব করে সব ক্যাটাগরির রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে চাই তবে দু’টি বড় খারাপ সম্ভাবনা আমাদের সামনে উঠে আসবেঃ
প্রথমতঃ ১০০ জন রোগীর ওপেন ওয়ার্ড এ ১০০০ জন রোগী গায়ের সাথে গা ঘেষে গড়াগড়ি খাবে। স্বাস্থ্যসেবা দানকারীরা দিশেহারা হয়ে যাবে তারা আরো বেশি আক্রান্ত হবে, হাসপাতালগুলো ব্যর্থ হবে, ভেঙে পড়বে সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। পরিবহণ স্বল্প পরিসরে খুলে দেয়া হয়েছে। এখন আনাগোনা বাড়ছে মৃদু থেকে তীব্র সব ধরণের রোগীদের। সামনে আরো বাড়বে তখন চাল ডাল মিলে খিঁচুড়ি হবে, প্রতিদিন হাজার খানেক ডাক্তার নিয়োগ দিয়েও যা সামলানো অসম্ভব।
দ্বীতিয়তঃ সব ক্যাটাগরির সবাই হাসপাতালে ভর্তি হলে বর্তমান সেট আপ এ তাদের ভাইরাল লোড বাড়বে আর বাড়বে জটিলতাও।
উদাহনরসরূপঃ একজন সাধারন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী আতঙ্কিত হয়ে বা কোন শ্বাস প্রশ্বাসের জটিলতা বা হালকা শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন, তার ওয়ার্ডে তিনি সহ হয়তো মোট ৫০ জন রোগী ভর্তি আছেন তারা কিন্তু কেউ খুব সুরক্ষায় থাকছেন না, হয়তো শুধু একটি সাধারণ মাস্ক পড়ে শুয়ে আছেন। এর ফলে এক রোগী থেকে অন্য রোগীর ভাইরাস আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় আর এ কারণে যে রোগী হয়তো সাধারন অবস্থা থেকেই সুস্থ হয়ে যেতো কিন্তু তাকে তখন যেতে হচ্ছে জটিল অবস্থায়। এটা আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ এবং এই আলোকে পরিচিত যারা পজিটিভ আসছেন, অবস্থা বিবেচনায় তাদেরকে বলেছি,
‘ভয় না পেয়ে বাসায় থাকুন। এই কাজগুলো এভাবে করুন। এই বিষয়গুলো মনিটর করুন।’
আল্লাহর রহমতে তারা সবাই ভাল হয়েছেন, ভাল আছেন। তাদের অধিকাংশের বয়স ৪০ এর নিচে, কারো কারো কিছু কো-মরবিডিটি ছিল। যেমন হাইপারটেনশন, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। তাদেরকে তাদের পূর্বের নিয়মে এই কো-মরবিডিটি গুলো নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলেছি। চেষ্টা করছি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন তাদেরকে সাথে অল্প কিছুটা পরামর্শ দিতে ও অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে।
সব মিলিয়ে এটা আমার পর্যবেক্ষণমূলক অনুসন্ধান এতে একদিকে যেমন কমেছে হাসপাতালে যাওয়ার প্রবণতা অন্যদিকে বাড়েনি তাদের ভাইরাল লোড।
অবশেষে একটা কথা,