প্ল্যাটফর্ম নিউজ,
সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। সারাবিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ২ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে বেশ কয়েকদিন আগেই। পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশও ইতোমধ্যে করোনায় ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। দিনদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ জন চিকিৎসকসহ নতুন করে আরো ৮ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগটিতে এখন পর্যন্ত মোট ১০১ জন রোগী শনাক্ত হলেন। আক্রান্ত এই ১০১ জনের মধ্যে ১০ জন চিকিৎসকসহ মোট ১৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীও আছেন।
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে এভাবে ক্রমাগত স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি হাসপাতাল লকডাউন এবং কিছু হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ, বিভাগটিতে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে বেশি বেশি নমুনা সংগ্রহের নির্দেশনা দিয়েছে এবং এর পাশাপাশি জেলাগুলোতে চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়,
“বরিশালে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায়। আর বরিশাল জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। গতকাল শনিবার (২৫ এপ্রিল) রাত পর্যন্ত ১৭ দিনে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ১০১ জন।”
জানা যায়, শনাক্তকৃত ১০১ জনের মধ্যে বরিশালে ৩৬ জন, বরগুনায় ৩০ জন, পটুয়াখালীতে ২০ জন, পিরোজপুরে ৭ জন ও ঝালকাঠিতে ৬ জন আছেন। এ ছাড়া গত শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো ভোলা জেলায় ২ জন শনাক্ত হয়। বিভাগটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রটি আরো জানায়,
“আক্রান্তদের মধ্যে নিয়মিত ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ৯ জন, একজন মেডিকেল ছাত্র, ৪ জন নার্স, ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এদের মধ্যে সর্বশেষ গতকাল শনিবার (২৫ এপ্রিল) বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক তরুণ চিকিৎসক নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।”
গত ১৭ এপ্রিল বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৩ নং ওয়ার্ডে তথ্য গোপন করে এক করোনা রোগী ভর্তি হওয়ার পর ওই ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্সসহ মোট ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এ ঘটনায় মেডিসিন ইউনিটটি লকডাউন করতে বাধ্য হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একই সঙ্গে গত ১৬ এপ্রিল বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ ও আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩ জন চিকিৎসক এবং আরো ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা শনাক্ত হওয়ায় উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দুইটি লকডাউন করা হয়। পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সীমিত করা হয়। গত শনিবার (২৫ এপ্রিল) নতুন করে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তরুণ চিকিৎসকের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হলেও হাসপাতালটি এখনো লকডাউন করা হয়নি। এ বিষয়ে রবিবার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এ বিষয়ে বলেন,
“স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ আক্রান্ত হলে পুরা হাসপাতাল লকডাউন হবে না। প্রয়োজনে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে অন্য এলাকার চিকিৎসক এনে সাময়িক কার্যক্রম চালু রাখা হবে।”
নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়