প্ল্যাটফর্ম নিউজ,
বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০
দেশে করোনা পরিস্থিতি দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরো ৫৬৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। কিন্তু সেই সাথে দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চিকিৎসকসহ সকল স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের সংখ্যা।
ময়মনসিংহ জেলায় এ পর্যন্ত ১৪৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক-নার্সসহ আছেন মোট ১০৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী। আবার তাঁদের মধ্যে ৮৩ জনই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের।
শুধু এই জেলাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় আক্রান্ত হবার ঘটনা প্রতিদিনই শোনা যাচ্ছে। এভাবে ক্রমাগত তাঁরা আক্রান্ত হতে থাকলে দেশের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়বে!
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন,
“রোগীরা তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নিতে আসায় দেশব্যাপী সব হাসপাতালগুলোতে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর মান নিয়েও আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।”
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক জিয়াউল ইসলাম বলেন,
“হাসপাতালটিতে তথ্য গোপন করে রোগীরা চিকিৎসা নেওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যাপক হারে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ২২ জন চিকিৎসক, অন্যরা নার্স ও সাধারণ কর্মচারী। এর বাইরে কলেজের ৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন।”
আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের PCR ল্যাবে কর্মরত ২ জন চিকিৎসক এবং ৩ জন কর্মচারীও রয়েছেন। আশঙ্কার বিষয়, তাঁরা সকলেই উপসর্গহীন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন,
“স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মাস্কসহ যেসব ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়া হয়েছে, তা মানসম্মত নয়। ব্যক্তিগতভাবে যে যেভাবে পারছেন, নিজেদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছেন।”
হাসপাতাল সূত্র জানায়,
“ডায়ালাইসিস এবং গাইনি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ জন রোগী পাওয়া গেছে, যাঁরা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এরপর থেকে গাইনি বিভাগের একটি ওটিসহ (অস্ত্রোপচারকক্ষ) মোট ৪টি ওয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব ওয়ার্ডে কর্তব্যরত অর্ধশতাধিক চিকিৎসককে কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) পাঠানো হয়েছিল। গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, হাসপাতালটির ৩ জন চিকিৎসকসহ ২৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী আইসোলেশনে এবং ১০ জন চিকিৎসকসহ ৩৪ জন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।”
হাসপাতাল সূত্র আরো জানায়,
“চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হলেও চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি। ১ হাজার ২০০ শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০৮ জন চিকিৎসক, ৭০৯ জন নার্স এবং ১ হাজার কর্মচারী রয়েছেন। করোনা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে পালা অনুযায়ী দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এক পালা টানা সাত দিন দায়িত্ব পালন শেষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থেকে আবার কাজে যোগ দেবেন। এখন রোগীর চাপও কম। আগে যেখানে শয্যার পাশাপাশি মেঝে ও বারান্দায় প্রতিদিন তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকত, এখন রোগীর সংখ্যা গড়ে ৪০০ জনে নেমে এসেছে। তবে চারটি ওয়ার্ড বন্ধ রয়েছে।”
নিজস্ব প্রতিবেদক/ অংকন বনিক জয়