১২ এপ্রিল, ২০২০
স্বাস্থ্য কর্মীরা করোনা ভাইরাস জনিত রোগে (COVID-19) সংক্রমণের সর্বাধিক ঝুঁকিতে রয়েছেন। ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, মানসিক অবসন্নতা, পেশাগত চাপ এবং শারীরিক ও মানসিক সহিংসতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই নির্দেশনাটিতে পেশাগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট করণীয়সমূূহ, স্বাস্থ্যকর্মীদের অধিকার এবং দায়িত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
স্বাধীন ও নিরাপদভাবে দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর অধিকার:
১। পেশাগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রতিরোধমূলক এবং প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার সামগ্রিক দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রশাসক/ ব্যবস্থাপক/ পরিচালকরা গ্রহণ করবেন।
২। সঠিক ও সময় উপযোগী তথ্য সরবরাহ, নির্দেশনা, এবং পেশাগত সুরক্ষা এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের উপর প্রশিক্ষণ প্রদানঃ
– সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ
– ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ, ব্যবহার ও ধ্বংসকরন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান
৩। পেশাগত সুরক্ষা এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সন্দেহজনক বা নিশ্চিত COVID-19 রোগীদের যত্ন নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই, গ্লোভস, গগলস, গাউন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান এবং পরিষ্কার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করন।
৪। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে কর্মীদের পরিচিত করার জন্য উপযুক্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করে, রোগীদের এবং জনসাধারণের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিতকরন এবং তথ্য বিতরন।
৫। ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন।
৬। কর্মক্ষেত্রে বন্ধুভাবাপন্ন পরিবেশ বজায় রাখুন যাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা রক্ত বা শ্বাস তন্ত্র থেকে নিঃসৃত তরল পদার্থের সংস্পর্শের মতো ঘটনার মত বিষয় নির্ভয়ে যথা সময়ে রিপোর্ট প্রদান করতে পারেন।
৭। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখুন।
৮। স্বাস্থ্য কর্মীদের স্ব-মূল্যায়ন (Self-Evaluation), প্রকাশিত লক্ষণের প্রতিবেদন প্রদান এবং অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে থাকার উপদেশ প্রদান করুণ।
৯। পর্যাপ্ত বিরতিসহ যথাযথ কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করুন।
১০। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করুন এবং দায়িত্বরত অবস্থায় আক্রান্ত হলে দ্রুততার সহিত স্বাস্থ্য পরিদর্শককে অবহিত করুন।
১১। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী যদি যৌক্তিক কারনে কর্ম পরবেশ বা স্বীয় স্বাস্থ্য নিজের জন্য ঝুকিপূর্ণ মনে করেন তবে তারা নিজ কর্মস্থল থেকে অব্যহতি নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য প্রশাসক যথাযথ সহায়তা প্রদন করবেন।
১২। কোনও প্রয়োজনীয় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের কোনও পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসতে বাধ্য করা যাবে না যেখানে জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক বিপদ/ঝুঁকি রয়েছে।
১৩। কোভিড -১৯ সংক্রমিত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীকে সকল অধিকার যেমন ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, এবং নিরাময় এর জন্য শারিরিক ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করুন। এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী দায়িত্বরত অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন।
১৪। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী এবং তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের প্রতি স্বাস্থ্য প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করুন।
স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য:
১। সুনির্দিস্ট পেশাগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য পদ্ধতি অনুসরণ করুন ও অন্যকে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার ঝুঁকির মুখোমুখি করা থেকে বিরত থাকুন।
২। নিয়োগকর্তা কর্তৃক আয়োজিত পেশাগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণে অংশ নিন।
৩। রোগীদের চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য প্রদত্ত নির্দেশাবলী প্রয়োগ করুন।
৪। রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখুন ও উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করুন।
৫। সন্দেহজনক ও নিশ্চিত হওয়া রোগীর ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ সাপেক্ষে দ্রুততার সহিত ও সঠিকভাবে প্রতিবেদন প্রদান করুন।
৬। লক্ষণ বা ঝুঁকি নেই এমন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক তথ্য সরবরাহ জোরদার করুন।
৭। পিপিই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক যথাযথভাবে প্রয়োগ, ব্যবহার, গ্রহণ এবং বণ্টন নিশ্চিত করুন।
৮। অসুস্থতা এবং পৃথকীকরণের (Self Isolation) লক্ষণগুলির উপর রোগীকে স্বেচ্ছা পর্যবেক্ষন (Self Monitoring) করার প্রশিক্ষন গ্রহণ করুন।
৯। যেসব রোগীরা গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করুন।
১০। যদি রোগীর মধ্যে মানসিক বিপর্যয়ের লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে তাকে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় মানসিক পরামর্শ দিন।
১১। এটা তার (রোগীর) জীবন বা স্বাস্থ্যের উপর একটি আসন্ন এবং গুরুতর বিপদ বিষয়টি তার ও তার পরিবার এর কাছে সহানুভূতির সাথে, যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত ভাবে উপস্থাপন করুন
১২। যে কোনও পরিস্থিতিতে রোগীদের পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও তদারকীর রিপোর্ট যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে প্রদান করুন।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রবন্ধ থেকে সরাসরি অনুবাদ করেছেন-
ডাঃ মোঃ রিজওয়ানুল করিম রাইয়ান আমজাদ