প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৩ জুলাই ২০২০, সোমবার
প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আর মৃত্যুর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছে এই ভাইরাস। কিন্তু এ মৃত্যুর কারণ আসলে কী? এটা জানতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন করোনার শুরুর সময় থেকেই। এবারে তারা দৃষ্টি দিয়েছেন করোনায় মৃতদের ময়নাতদন্তের দিকে।
মার্চের দিকে প্যাথলজিস্ট সিগুরড লাক্স বলেছিলেন, “কোভিড-১৯ আমাদের কাছে নতুন একটি রোগ। আমরা এটির অন্তর্নিহিত সত্যটি জানতে চাই। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণ কী, তা নির্ধারণের জন্য কেবল একটি পদ্ধতি রয়েছে। আর সেটা হলো ময়নাতদন্ত করা।”
লাক্স ও তার সহকর্মীরা কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য কোভিড-১৯ আক্রান্ত মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করার জন্য দুদিন অপেক্ষা করেন। অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের জন্য এ পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন, তারপরও তারা দেখেছেন মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা পরও সার্স-কোভিড-২ আরএনএ শরীরটিকে মুক্তি দেয়নি। তিনি বলেন, ভাইরাসটি তখনো সংক্রামক ছিল কিনা, তা আমরা জানি না। তবে রোগীর টিস্যুতে ভাইরাসটির জিনগত উপাদান উপস্থিত থাকায় আমরা সতর্ক হয়ে গিয়েছিলাম।
তিনি ও তার সহকর্মীরাই কোভিড-১৯ আক্রান্ত ১১ জন রোগীর ময়নাতদন্ত করেছিলেন, এসব ময়নাতদন্তে তারা কী খুঁজে পেয়েছিলেন সেগুলো নিয়ে মে মাসে তারা অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। অস্ট্রিয়ার জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক সিগুরড লাক্স ময়নাতদন্তের ফলাফল এবং ভাইরাসটির সম্ভাব্য চিকিৎসা নিয়ে দ্য সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন,
ময়নাতদন্তে দেখা যায় ফুসফুসের ভারসাম্যতা এবং ফুসফুসের ক্ষুদ্র বায়ুথলি অ্যালভিওলাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফুফফুসের চারপাশে দুই ঝিল্লিযুক্ত প্লোরাইয়ে সামান্য প্রদাহজনিত পরিবর্তন দেখা গেছে এবং সেখানে সামান্য তরলও ছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা প্রসারিত হৃদপিন্ড দেখেছি। আমরা একাধিক পালমোনারি ধমনির উপস্থিতি দেখেছি, বিশেষ করে উপরিতলে। বৃহত্তর ধমনিগুলোতে কিছু রক্ত জমাট বাঁধা ছিল, তবে রক্তনালির অভ্যন্তরে অন্য কোনো উপাদানের কারণে রক্ত জমাট বাঁধেনি, সেখানে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা রক্তের প্রবাহকে বাধা দেয়ার কারণে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এটা ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার মতো বিষয় নয়, যা মারাত্মক অসুস্থতার প্রধান কারণ। তবে এটা রক্তনালিগুলো প্রদাহ এবং রক্ত জমাট বাঁধার ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। এটা ফুসফুসের ধমনি গুলোতে অবরোধের সৃষ্টি করে, যা ফুসফুসীয় সঞ্চালনের চাপকে বাড়িয়ে তোলে এবং তারপর এটি শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখা হৃদপিণ্ডের অপ্রতুলতার দিকে নিয়ে যায়, পরিশেষে যা মৃত্যু ডেকে আনে।
লাক্স বলেন,
ভাইরাসটির কারণেই রক্ত জমাট বাঁধছে কিনা বা ভাইরাসের কারণে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়ার কারণে এমনটা ঘটছে কিনা, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। কেউ অনুমান করতে পারে যে উভয়ই রক্ত জমাট বাঁধার কারণ, তবে আমি মনে করি এটা প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়ার কারণেও হতে পারে, যার প্রদাহজনিত প্রক্রিয়া রক্ত জমাট বাঁধার দিকে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে র্যাপকিউইজ বলেন,
ময়নাতদন্তে বড় ধমনী- শিরার পাশাপাশি অনেক ছোট ধমনী- শিরাতেও রক্ত জমাট বাঁধার বিষটি দেখতে পাই এবং অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমরা ভেবেছিলাম শুধু ফুসফুসে রক্ত জমাট পাবো কিন্তু আমরা প্রতিটি মৃতদেহের প্রতিটি অঙ্গেই রক্ত জমাট পেয়েছি।
এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণার রূপরেখা র্যাপকিউইজের সমীক্ষাটি জুনের শেষদিকে দ্য ল্যানসেট জার্নাল ইসক্লিনিকাল মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছিল।
ময়নাতদন্তে মেগ্যাকারিওসাইটস বা বৃহৎ অস্থি মজ্জা কোষ গুলোতে অস্বাভাবিক কিছু দেখা যায়, এগুলি সাধারণত হাড় এবং ফুসফুসের বাইরে সঞ্চালিত হয় না বলে জানিয়েছে র্যাপকিউইচজ। তাছাড়া হৃদপিণ্ড, কিডনি, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোতেও রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। মহামারীটির প্রাথমিক পর্যারে ডাক্তাররা ভেবেছিলেন ভাইরাসটির কারনে হৃদপিণ্ডের প্রদাহ সৃষ্টি হয় আর এটাই বেশিরভাগ মৃত্যুর কারন কিন্তু ময়নাতদন্তে দেখা যাচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের মৃত্যুর ঘটনা খুব কম।
সূত্রঃ সিএনএন