প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে বাংলাদেশের প্রথম সারির ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অপসোনিন এর মেডিকেল সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক প্রকাশিত “পল্লী চিকিৎসক বই” টির অংশবিশেষ দেখলাম। দুঃখজনক হলেও সত্য, মেডিকেল সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে অধিকাংশ কর্মকর্তাই চিকিৎসক বা ফার্মাসিস্ট। যাদের কোয়াকদের বিরুদ্ধে সতর্ক হবার কথা তারাই কিনা আজ কোয়াকদের জন্য বই বের করে। আমরা যাচ্ছি কোথায়? ঔষধ কি কোন মুড়ি-মুড়কি বা কোন খেলনা?
প্রবাদ আছে, ভদ্রলোকের গায়ে লাউয়ের কাটাও ফোটে। আমরা চিকিৎসকরা নিজেদের ভদ্রলোক বলে দাবি করতে অভ্যস্ত। জানি না, একলাম্পসিয়ার চিকিৎসার টোটকা প্রদান করা বিষয়গুলো তাদের কতটুকু আহত করবে।
জাতীয় ঔষধনীতির অন্যতম উপাদান হিসেবে ৩.১৪ ধারায় রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ঔষধ বিক্রয় বা বিতরণ নিষিদ্ধ করার কথা বলা থাকলেও তার দৃশ্যমান ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দেখা যায় নি। দুঃখজনক হলেও সত্য Drug (Control) Ordinance, 1982 এর পর যথাযথ হালনাগাদসহ আজ অবধি যুগোপযোগী কোন আইন প্রণয়ন করা হয়নি। আর তার সুযোগে সর্বনাশের ষোলকলা পূরণ করেছে কতিপয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। Drug ( Control) Ordinance 1982 এ প্রচারসামগ্রী ব্যবহারে যথেষ্ট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো যা করছে তা দেখার দায় কার? জনগন না রাষ্ট্রের?
প্ল্যাটফর্ম হতে আমরা এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সপ্তাহ পালন করছি বেশ ক বছর ধরে। কোয়াকদের প্রেসক্রিপশন সক বিভিন্ন ডাটা বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তিদের দিয়েচি বহুবার। ভুয়া চিকিৎসকদের তথ্য বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, প্রশাসনে দেবার চেষ্টা করেছি বারবার৷ ফলপ্রসূ কতটুকু কি হয়েছে আমরা সকলে তা জানি।
যা হোক, দায়বদ্ধতা হতেই প্ল্যাটফর্মের পক্ষ হতে মেডিকেল সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট, অপসোনিন এর এক কর্তাব্যক্তির সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা বলি আমি। প্রথমত, তারা বলতে চেষ্টা করেন যেহেতু পল্লী চিকিৎসকরা প্রাক্টিস করেন তাই সাধারণ রোগের জন্য এমন জিনিস তারা তৈরি করেছেন। আমি তাকে Drug (Control) Ordinance 1982 ধারা ৮ এর অর্ন্তগত ৮.১, ৮.২, ৮.১১ উপধারা যেখানে প্রচার বা প্রমোশনাল ম্যাটেরিয়াল হিসেবে তারা কি কি ব্যবহার করবে তা জানিয়ে দেই এবং তার কাছ হতে অপসোনিন এ ফর্মাল কমপ্লেইন করার জন্য যথাযথ ইমেইল এড্রেস চাই। উনি ওনার অথোরিটির সাথে কথা বলে জানাবেন বলে জানান। উল্লেখ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির এমন টোটকা চিকিৎসা প্রদান ম্যাটেরিয়াল উপরোক্ত আইন দ্বারা সিদ্ধ নয়। দেখা যাক, ওনারা ফর্মাল কি রিপ্লাই প্রদান করেন।
এবার আরেকটা প্রসঙ্গে আসি-
২০১৬ সালের প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশে এলোপ্যাথিক ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্টানের সংখ্যা ২৬৭ টি। যার মধ্যে ফাংশনাল আছে ২০৭ টি প্রতিষ্ঠান। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪০০ জেনেরিকের ২৭০০০ ব্রান্ড ঔষধ তৈরি হয়। এসবের মধ্যে মাত্র ১১৭ টি জেনেরিকের ঔষধের মূল্য সরকার কর্তৃক সরাসরি নির্ধারিত হয়। অন্যান্য ১২৫০ এরও বেশি জেনেরিকের ক্ষেত্রে অন্যান্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির দামের সাথে সামঞ্জস্যতা দেখে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মূল্য সনদ প্রদান করে মাত্র। জাতীয় ঔষধনীতি ২০১৬ এর ৩.৬ ধারা অনুসারে স্বচ্ছ ও যৌক্তিকভাবে ঔষধসমূহের মূল্য নির্ধারণ করার কথা থাকলেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সে বিষয়ে কতটা সচেষ্ট তা এক বড় প্রশ্নের ব্যাপার। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে অনৈতিক বিপণণ তো আছেই।
আমাদের ছোট দেশ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। সব কাজের দায় বা সব শোধরাবার জন্য সরকারের পানে চেয়ে থাকলে হবে না৷ চিকিৎসক হিসেবে আপনার আমার দায় আপনি আমি কি এড়াতে পারি? এসব অনৈতিক বিপণণ বা মাল্টিসেক্টরাল বিপণণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। আজ আমরা দেখছি অপসোনিন টোটকা বানায়, আগে দেখেছি স্কয়ার পল্লী কোয়াকদের নিয়ে সেমিনার করে। আপনার কি দায় নেই? আপনার অবস্থান হতে কথা বলছেন কি আপনি?
“যেন হেগরা তেন হেগরি, যেন পাটশাক তেন লাকড়ি”- প্রিয় চিকিৎসকবৃন্দ ছোট এ প্রবাদ নিশ্চয়ই শুনেছেন। চলুন প্রতিবাদ করি। আপনাকে ভিজিট করতে আসা এমআরদের বলুন যথাযথ জবাব দিতে, বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত প্রিয় ইন্টার্ণ চিকিৎসকগণ আপনাদের দায়িত্ব ভুলে যাবেন না।
চিকিৎসা সেক্টরকে অন্ধকার হতে আলোয় আনবার দায় আপনারও।
আপনাদের সহযোগিতা কাম্য।
সম্পাদকীয় : ডা. ফয়সাল বিন সালেহ